বাংলাদেশ একদিক দিয়ে খুবই বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী। ফারসি ভাষার মহাকবি ফেরদৌসি রচিত মহাকাব্যশাহনামা বিশ্বের অন্য প্রধান ভাষাগুলোয় একবারে পূর্ণাঙ্গ অনুবাদের ঘটনা যেখানে নেই বললেই চলে, সেখানে বাংলাদেশে ঘটেছিল তার পুরোপুরি উল্টো ঘটনা। ১৯৬৩ থেকে শুরু করে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ১৮ বছরের কঠোর ও ধীমান শ্রমে সরাসরি ফারসি ভাষা থেকে সেই মহাকাব্য বাংলা ভাষায় প্রথম অনুবাদ করেছিলেন কবি, অনুবাদক ও মননশীল প্রাবন্ধিক মনিরউদ্দীন ইউসুফ (১৯১৯-১৯৮৭)। মোট ছয় খণ্ডে সমাপ্ত সম্পূর্ণ এই মহাকাব্য রয়েল সাইজে একসঙ্গে প্রকাশিত হয়েছিল বাংলা একাডেমী থেকে ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। প্রথম খণ্ডের পৃষ্ঠাসংখ্যা ৬৮৩। প্রসঙ্গ কথা, ভূমিকা ও ইনার টাইটেলসহ তার সঙ্গে যুক্ত আরও ৫২ পৃষ্ঠা। দ্বিতীয় খণ্ডের পৃষ্ঠাসংখ্যা ৮০২, তৃতীয় খণ্ডের ৬৫০, চতুর্থ খণ্ডের ৮৫৬, পঞ্চম খণ্ডের ৫৫৫ এবং ষষ্ঠ খণ্ডের পৃষ্ঠাসংখ্যা ৪১৬। বাংলায় অনূদিত শাহনামার মোট পৃষ্ঠাসংখ্যা ৪০০৭। প্রচ্ছদ ও অলংকরণ প্রথিতযথা শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর।
বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই মহাকাব্য রচনায় ফেরদৌসির লেগেছিল ৩০ বছরের শ্রম। সে কথা উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে বহু পরিশ্রমের পর/ এই পারসী গ্রন্থ দ্বারা আমি ইরানকে/ পুনরুজ্জীবিত করে গেলাম।’ বাংলায় অনূদিত শাহনামা ছাপা হয়েছিল কর্ণফুলী সাদা কাগজ ও অফসেট কাগজে। মূল্য যথাক্রমে ২১০০ টাকা ও ২৭০০ টাকা। প্রকাশিত হওয়ার অত্যল্পকালের মধ্যে শাহনামা বিক্রি হয়ে যায়। বাংলা একাডেমী খুব শিগগির শাহনামার দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। শাহনামা রচনার এক হাজারতম বার্ষিকী উদ্যাপনের প্রাক্কালে এই মহাকাব্যের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ নিঃসন্দেহে একটা স্মরণীয় ঘটনা হয়ে উঠবে।

আখতার হুসেন