কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়ার পরিবেশকর্মীরা জানালেন, উপকূলের বালিয়াড়িতে বালুর ঢিবি বানাতে তাঁরা স্থানীয় সাগরলতা ও সাগর নিশিন্দা ব্যবহার করছেন। সাগরলতার বহুল প্রচলিত নাম ‘ছাগলখুরী’। সম্ভবত, পাতার কারণেই এমন নামকরণ। পাতার ডগা ছাগলের খুরের মতো বিভক্ত। লতাটি প্রথম দেখি বেশ কয়েক বছর আগে কুয়াকাটা থেকে পাতরার বনে যাওয়ার পথে সাগরপাড়ে ঝোপঝাড়ের ভেতর। আর সাগর নিশিন্দা ভালোভাবে খুঁটিয়ে না দেখলে চেনার কোনো উপায় নেই। লোকালয়ের নিশিন্দার সঙ্গে এদের কিছু মৌলিক তফাত আছে। বড় আকৃতির তীক্ষ আগার পাতা দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন যে এরাও নিশিন্দা। উপকূলীয় এলাকা ছাড়া দুষ্প্রাপ্য। প্রিয় আবাস নোনাবালির অঞ্চল।সাগর নিশিন্দার আরেক নাম নীল নিশিন্দা। সমলংকৃত অন্য নাম—সুগন্ধি, শীতসহা, নির্গুণ্ডী, নীলসিন্ধুক, চপিকা, ভূতকেশী, ইন্দ্রানী ও নীলিকা। প্রাচীন রাজনিঘণ্টুতেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়, ‘সুগন্ধাহন্যা শীতসহা নির্গুণ্ডী নীলসিন্ধুকঃ। সিন্দুকশ্চপিকা ভূত কেশীন্দ্রাণী চ নীলিকা কটূষ্ণা নীলনির্গুণ্ডী তিক্তা রক্ষা চ কাসজিৎ। শ্লেষ্মশোফসমীরার্ত্তি-প্রদরাধ্মানহারিণী।’
নিশিন্দা (Vitex trifolia) নিয়ে আবার কিছু লোকগানও আছে, যেখানে গাছটির তিক্ত রসের প্রসঙ্গ গুরুত্বের সঙ্গে বিবৃত হয়েছে। এরা সাগরপারের গুল্মজাতীয় গাছ। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় চকরিয়া থেকে মহেশখালী হয়ে সোনাদিয়া এবং কক্সবাজার থেকে টেকনাফ হয়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত। এরাএকধরনের প্রাকৃতিক বেষ্টনীর কাজ করে। বিশেষ করে, মাটির ক্ষয় রোধে এবং বাতাসের গতিবেগ কমাতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর। কিন্তু অসচেনতার কারণে স্থানীয় মানুষ এগুলো সংরক্ষণ না করে বরং কেটেছেঁটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে।পাতা সাধারণ নিশিন্দার চেয়ে অপেক্ষাকৃত বড় এবং গাঢ় সবুজ। ফুলের রং গাঢ় বেগুনি, ফোটে পর্যায়ক্রমে, শীতে কম। পাতা ও শিকড়ের রস বাতের ব্যথাসহ নানা রোগের মহৌষধ।
ছাগলখুরী লতার (Ipomoea pes-caprae) ইংরেজি নাম বিচ মর্নিং গ্লোরি ও রেলরোড ভাইন। বহুবর্ষজীবী চিরসবুজ লতা। সাধারণত বালুতটে গড়ানোই এর স্বভাব। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় আটলান্টিক, প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরীয় উষ্ণ ও উপ-উষ্ণ অঞ্চলে। স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে কাজ দেয় নোনাবালি ও নোনা বাতাস।
সর্বশেষ ১৮১৮ সালে বিজ্ঞানী রবার্ট ব্রাউন গাছটির প্রজাতি শনাক্তসহ অন্যান্য বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজ সুসম্পন্ন করেন। লতা দ্রুত বর্ধনশীল ও লম্বাটে হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। পাতা একক, পুরু, মসৃণ ও দেড় মিলিমিটার লম্বা হয়। ফুল সাধারণত একক; ফোটে পাতার কক্ষে, বেগুনি রং, ফানেল আকৃতির এবং তিন থেকে ১৬ সেন্টিমিটার দীর্ঘ। গাছ চমৎকার ঔষুধি গুণসম্পন্ন। পাতা ও শিকড় দুর্বলতা কাটাতে, বাতের ব্যথায় এবং কোথাও কোথাও ডায়াবেটিসের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার্য। দেশে এদের ঘনিষ্ঠ প্রজাতি ঢোলকলমি, জলকলমি ও মর্নিং গ্লোরি। সারা পৃথিবীতে এই (আইপোমিয়া) গণে প্রায় ৫০০ প্রজাতির গাছ দেখা যায়।
-Prothom Alo