মহাকাশের অন্যতম বিস্ময় ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে এ পর্যন্ত অনেক থিওরি বা মতবাদ রয়েছে। সেসব মতবাদকে চ্যালেঞ্জ জানাতে হাজির হয়েছে নতুন এক থিওরি। এ নতুন থিওরির ভিত্তি হলো—কিছু বিরল চৌম্বকীয় নক্ষত্রের আবিষ্কার। চৌম্বকীয় এই নক্ষত্রগুলোর নাম দেয়া হয়েছে ম্যাগনেটার। এগুলো আসলে এক বিশেষ ধরনের নিউট্রন তারকা। অত্যন্ত শক্তিশালী চৌম্বকীয় ক্ষেত্র রয়েছে বলে এরকম নাম দেয়া হয়েছে এদের। সূত্র বিবিসি।
ম্যাগনেটার তৈরি হয়েছে কিছু আদি নক্ষত্র থেকে, যেগুলো মরে যাওয়ার পর ওগুলোর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আটকে গিয়ে এক মহাবিস্ফোরণোন্মুখ ধূমকেতুতে পরিণত হয়। এই ম্যাগনেটরের আবিষ্কার জোতির্বিদদের এখন নড়েচড়ে বসতে উত্সাহী করে তুলেছে। তারা হিসাব করে দেখেছেন, এসব ম্যাগনেটরের আয়তন আমাদের সূর্যের চেয়ে অন্তত ৪০ গুণ বড়। তাদের ধারণা, এসব বিপুলাকৃতির নক্ষত্র মরে গিয়ে একটা ব্ল্যাকহোল তৈরি করেছে। আর তাদের এই ধারণাই প্রচলিত ব্ল্যাকহোল থিওরিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। ওপেন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. বেন রিচির নেতৃত্বে গবেষক দলের এই আবিষ্কারের কথা প্রকাশিত হয়েছে অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স নামের জার্নালে।
নতুন এই ম্যাগনেটর তারকা আবিষ্কৃত হয়েছে ওয়েস্টারলান্ড-১ নামের একটি অসাধারণ তারকাগুচ্ছের মধ্যে। ওয়েস্টারলান্ড-১-এর অবস্থান ‘আরা’ নামে দক্ষিণাঞ্চলীয় যে নক্ষত্রমণ্ডলী রয়েছে তার থেকে অন্তত ১৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে। দক্ষিণাঞ্চলীয় এই নক্ষত্রমণ্ডলীতে রয়েছে অসংখ্য নক্ষত্রের সমাবেশ। ড. রিচি মন্তব্য করেছেন, ‘আমাদের পৃথিবী যদি এই অসাধারণ নক্ষত্রমণ্ডলীর মধ্যে অবস্থিত হতো, তাহলে আমাদের রাতের আকাশ ভরে থাকত পূর্ণ চাঁদের মতো বড় অসংখ্য তারায়।
আদি তারার বৈশিষ্ট্য হিসাব করে গবেষক দল এদের জীবনকাল বিশ্লেষণ করেছেন। প্রকাণ্ড এসব নক্ষত্রের মৃত্যু ঘটে এদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে ছোট তারার অনেক আগেই। এর কারণ হলো এদের ভেতরের বিশালত্ব। এত বড় নক্ষত্রগুলোকে জ্বলার উপযোগী জ্বালানি সরবরাহ করতে গিয়ে এদের হাইড্রোজেনের মজুত দ্রুত ফুরিয়ে যায়।
গবেষণাপত্রের সহলেখক স্পেনের ইউনিভার্সিটি অব এলিসেন্টের প্রফেসর ড. নেগুয়েরুয়েলা বলেছেন, মিসিং ব্ল্যাকহোলের রহস্য হয়তো লুকিয়ে আছে আদি নক্ষত্রগুলোর মধ্যে। আদি নক্ষত্রগুলোর জ্বালানি হারিয়ে নিভে যাওয়ার আগের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারলে ওই রহস্য উদ্ঘাটন করা যেত।
ব্ল্যাকহোল নিয়ে নতুন থিওরির আলোচনা-সমালোচনাও শুরু হয়েছে। যুক্তরাজ্যের একজন জোতির্বিদ মাইক ক্রুজ বলেছেন, ‘এটা একটা চমত্কার অনুসন্ধান। গবেষকরা শুধু থিওরিই দাঁড় করাননি, তারা পুরো ব্যাপারটা হিসাব নিকাশ করে বোঝাবারও চেষ্টা করেছেন।’