কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ট্রেন স্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালসহ জনবহুল এলাকাগুলোতে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তিন দিনে ভৈরবে সাতজন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে দুজন অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন। অজ্ঞান পার্টির শিকার ব্যক্তিরা সড়ক কিংবা রেললাইনের পাশে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকলেও অনেক সময় মিলছে না প্রয়োজনীয় চিকিৎসা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার সকালে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের আউটার সিগন্যাল পয়েন্ট এলাকায় লাইনের পাশে পড়ে ছিলেন অজ্ঞান তিন ব্যক্তি। পরে এলাকাবাসী ও স্টেশনে কর্মরত লোকেরা এসে সেবা দিয়ে তাদের সারিয়ে তোলে। জ্ঞান ফেরার পর তাঁদের মধ্যে আকবর হোসেন (৪৫) জানান, ট্রেনে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যেতে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভৈরব স্টেশনে আসেন। সে সময় অপরিচিত এক লোক খাতির জমিয়ে তাঁকে আউটার সিগন্যাল পয়েন্টের কাছে নিয়ে যায়। এর পরের ঘটনা সম্পর্কে তিনি আর কিছু বলতে পারেননি। তাঁর সাড়ে আট হাজার টাকা খোয়া গেছে। অপর দুজনের জ্ঞান কিছুটা ফেরার পর তাঁরা নিজেদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালিগচ্ছ গ্রামের ইদ্রিস আলী ও সৈয়দ মিয়া বলে পরিচয় দেন।

শনিবার ভৈরবে এসে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পিরিচকান্দির সোহাগ মিয়া এবং নরসিংদীর বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর এলাকার সবুজ মিয়া অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে অচেতন হন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁদের ভৈরব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সবুজ মিয়া জানান, ভোরে ভৈরব বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময় এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। ওই ব্যক্তি তাঁকে চানাচুর কিনে খাওয়ান। এর পরের ঘটনা আর কিছুই বলতে পারেননি তিনি। তাঁর আট হাজার টাকা আর মুঠোফোন খোয়া গেছে।

শুক্রবার আশুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার সাপমারা গ্রামের কবির মিয়া (৪২) ও ইব্রাহীম মিয়া (৪৮) অচেতন হন। স্টেশনের দোকানিরা প্ল্যাটফর্মে অচেতন পড়ে থাকতে দেখে তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। একই দিন ভৈরব উপজেলা পরিষদ হাজী মার্কেটের সামনে হেলাল মিয়া ও জমির উদ্দিন নামের দুই জুতা ব্যবসায়ী অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারান। তাঁরা সিলেট থেকে ভৈরবে জুতা কিনতে এসেছিলেন।

রেলওয়ের ভৈরব স্টেশন মাস্টার আবদুল মোতালিব জানান, ভৈরব জংশন স্টেশন হওয়ায় এখানে সব সময় যাত্রী সমাগম বেশি থাকে। ঈদের আগে অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বাড়ে। তিনি বলেন, ‘অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়।’
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহান কবির জানান, ঈদ এলে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা সক্রিয় হয়ে ওঠে সত্য। তবে ভৈরবে কেউ অজ্ঞান পার্টির শিকার হচ্ছে না। বাসে যাত্রীরা জ্ঞান হারালে চালকেরা তাদের নামিয়ে দেওয়ার স্থান হিসেবে ভৈরব বাসস্ট্যান্ডকে বেছে নেয়। কারণ এই বাসস্ট্যান্ডের কাছেই রয়েছে সরকারি হাসপাতাল।