বাংলাদেশ ফারটিলাইজার এসোসিয়েশন (বিএফএ) কিশোরগঞ্জ জেলা ইউনিটের সভাপতি ও ভৈরব উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি নাদিরুজ্জামান ভূঁইয়া ফের সার পাচারের ঘটনা ঘটিয়েছেন। গত রবিবার রাতে সরকারি নিয়ম না মেনে তিনি ভৈরব থেকে অন্য জেলায় সার পাচারের সময় ধরা পড়ে। ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত এ অপরাধে তাকে ত্রিশ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা করেন। এ নিয়ে গত একবছরে তার বিরুদ্ধে তিনটি সার কেলেংকারির খবর পাওয়া গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলমের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদলতে র্যাব-৯ ভৈরব ক্যাম্পের অধিনায়ক স্কোয়ার্ডন লিডার শেখ মোহাম্মদ আলী, সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো.শামীম হোসেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম উপস্থিত ছিলেন। এর কিছুক্ষণ পর খবর পেয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরাও সেখানে উপস্থিত হন।
র্যাব-৯ ভৈরব ক্যাম্প সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রবিবার রাতে পৌর শহরের ডিপোঘাট সংলগ্ন একাধিক সারের গুদামে অভিযান চালানো হয়। এ সময় তারা সার ভর্তি দুটি ট্রাক আটক করে। ট্রাকের ড্রাইভার গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে জানান, সারগুলো নরসিংদী ও বাজিতপুরে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল। পরে গুদামের ভিতর থেকে আরও দুই হাজার ৪শ’ বস্তা সার পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে গুদামের পরিচালক দেলোয়ার হোসেনকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে আসে র্যাব।
নিয়মানুসারে যে কোন সার ডিলার তার গুদামের সংখ্যা এবং অবস্থান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে জানানোর কথা থাকলেও সেখানে উপস্থিত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, নাদিরুজ্জামান ভূঁইয়ার ডিপোঘাটের চার গুদাম সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম জানান,‘ নাদিরুজ্জামান ভূঁইয়ার কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখা গেছে তিনি বিধি বহির্ভূত(অনিয়মাতান্ত্রিকভাবে) সার মজুত রেখেছেন। তাই সার ব্যবস্থাপনা আইনের তাঁকে ত্রিশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
এর আগে নাদিরুজ্জামান ভূঁইয়া বিরুদ্ধে সার উত্তোলন না করেই আমদানি ও বিক্রির ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে তিনি সরকারের কাছে প্রায় ৭০লাখ টাকা ভর্তুকি দাবি করার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে সারের ভর্তুকি নিয়ে জালিয়াতি করার অভিযোগের সত্যতা পায় কৃষি মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে আলোচিত ভৈরবের এ সার ডিলারের ডিলারশিপ বাতিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি অর্থনীতি গবেষণা অধিশাখার উপ-প্রধান ও উপ-সচিব মো. মোশাররফ হোসেনের স্বাক্ষরে গত ২৮ এপ্রিল জেলা প্রশাসককে পাঠানো এক চিঠিতে ‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা অনুযায়ী নাদিরুজ্জামানের মেসার্স ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে সার বরাদ্দ স্থগিত রেখে ডিলারশিপ বাতিলের নির্দেশ দেয়া হয়।
এদিকে সার পাচারের কথা অস্বীকার করে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন (বিএফএ) কিশোরগঞ্জ জেলা ইউনিটের সভাপতি ও মেসার্স ভূইয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক নাদিরুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, ঐ গুদামে রাখা এবং ট্রাকের সারগুলো আমার নয়। আমি ট্রান্সপোর্টের ব্যবসার সাথে জড়িত। বাজিতপুরের এক সার ডিলার আমার ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে সার নিয়ে যাচ্ছিল। প্রশাসন ভুল করে আমাকে জরিমানা করেছে।
You must log in to post a comment.