ব্রহ্মপুত্রের সেই আদি রূপের বিবরণ এখন শুধু ভৌগোলিক ইতিহাস ঘাঁটলেই জানা যাবে। উত্তাল ব্রহ্মপুত্র এখন শুধুই মরা খাল। কিশোরগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের এটিই বর্তমান হাল। ব্রহ্মপুত্র নদ জেলার হোসেনপুর, পাকুন্দিয়া, কটিয়াদী, কুলিয়ারচর ও ভৈরব উপজেলার ভেতর দিয়ে বহমান। একসময় দেশের অভ্যন্তরে প্রায় আড়াইশত কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদকে ঘিরে দু’পাড়ের হাজার হাজার মানুষ শত শত বছর ধরে গড়ে তোলে বসতি ও জীবিকার সংস্থান।

এখন তা ক্রমশই বিলীয়মান হচ্ছে। বিপন্ন হয়ে পড়েছে পরিবেশ। হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। ফুরিয়ে যাচ্ছে মত্স্য সম্পদের অফুরন্ত ভান্ডার। ইতিহাসবিদদের মতে, কিশোরগঞ্জ জেলার কোন কোন এলাকায় একসময় ব্রহ্মপুত্র নদ ১০ থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রশস্তই ছিল। সেই উত্তাল নদকে ঘিরেই প্রাচীন আমলে বিভিন্ন স্থানে প্রসিদ্ধ নৌ-বন্দর ও বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। বিশ্বখ্যাত পরিব্রাজকরা এই নৌ-পথেই এই জেলায় এসেছিল।

যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্য সৈন্য ও গোলাবারুদ এই নৌ-পথেই আনা-নেয়া হতো। এর শাখা নদীগুলোও ছিল প্রবল খরস্রোতা। কিন্তু কালের বিবর্তনে বেশির ভাগ শাখা নদীর চিহ্ন পর্যন্ত আজ আর নেই। ব্রহ্মপুত্র নদও আজ মৃতপ্রায়। ভরা বর্ষাকালেও হেঁটেই এই নদ অতিক্রম করা যায়। নদীর দু’পাড়েই জেগে ওঠছে বিশাল বিশাল চর। আর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে ফসল উত্পাদন করে ভোগ-দখল করে খাচ্ছে নদীর দুই পাড়ের মানুষ। হয়তো অচিরইে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে একেবারেই হারিয়ে যাবে এই ব্রহ্মপুত্র নদ।

– সংকলিত, ইত্তেফাক হতে