এক নজরে লালচে ও গাঢ় বাদামি রঙের এক সুন্দর পেঁচা এটি। চোখের মণি স্ফটিক-গোলাপি, মণি ঘিরে অতি সুন্দর হলুদ রঙের বৃত্ত। বুক-পেট সাদাটে-ছাই, তার ওপর লালচে বাদামি রং মেশানো ও সুন্দর ছোপ আঁকা। পা হলদেটে, নখ কালো। লেজের তলায় পাশাপাশি তিনটি করে চওড়া কালো দাগ আঁকা।
বাংলাদেশের অন্য পেঁচাদের তুলনায় এদের মাথা ছোট। শরীরের গড়ন-ধরনও ছোট শিকারি বাজপাখির মতো। বাজের মতো ক্ষিপ্র গতি, ছোঁ দিতেও অত্যন্ত দক্ষ এবং তুখোড় শিকারি। এ জন্য ইংরেজিতে এদের নাম Brown Hawk Owl. বৈজ্ঞানিক নাম Ninox Scutulata. আকার ৩৫ সে.মি.। উড়ন্ত শিকারকে এরা পাকড়াও করতে পারে দর্শনীয় ভঙ্গিতে। সাহসী, বুদ্ধিমান ও তীক্ষ দৃষ্টিসম্পন্ন এই পাখি অতিশয় ধুরন্ধরও বটে। মূল খাদ্য এদের ধেনো ইঁদুরের বাচ্চা, গেছো ইঁদুর, তক্ষক, ছোট পাখি, ব্যাঙ, ঢোঁড়া ও মেটে সাপের বাচ্চাসহ অন্যান্য পোকামাকড়।
বাদামি পেঁচা ঢাকা শহরে আছে। দিনে এরা সাধারণত ঘন পাতাওয়ালা গাছের ডালে চুপচাপ বসে ঘুমায়-ঝিমায়। লতাজাতীয় ফুল গাছের ঘন পাতার আড়ালেও থাকে। ঢাকা শহরে আমি এদের বাসা বেশ কয়েকবার দেখেছি, দেখেছি ডিম-ছানা। ডিম পাড়ে তিন-চারটি। একটু গোলাকার ধরনের। রং খড়িমাটির মতো সাদা। সদ্যজাত ছানারা হয় কার্পাস তুলার মতো সাদা। ছানাদের চোখ ফোটে ৬-১০ দিনে। বাসায় ডিম বা বাচ্চা থাকলে ভেতরে থাকা মা-পাখিটি দুই ঠোঁটে ‘কিট্ কিট্’ আওয়াজ করে শত্রুকে ভয় দেখায়। চোখ ফোটার পর ছানারাও এভাবে ভয় দেখায় শত্রুকে।
এদের কণ্ঠস্বর ভীতিকর। ‘কু-উক্, কুক্, কু-উক্, কুক্’ শব্দে থেমে থেমে ডাকে। বিখ্যাত বাঘশিকারি জিম করবেটের ভাষায় বলতে হয়, ‘মনে হয়, কোনো মৃতের আত্মা তার দেহ ফিরে পাওয়ার জন্য বিলাপ করছে।’ হ্যাঁ, ডাকটা ভৌতিক। শৈশবে আমাদের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের সাতশৈয়ায় রাতে ওদের ডাক শুনতাম। এখনো—৫০ বছর বাদে—বাড়িতে গেলে ওদের ডাক শুনতে পাই। নিজেকে বড়ই ভাগ্যবান মনে হয় এ জন্য। ওদের ডাক আমার কাছে আজ আর মোটেও ভীতিকর নয়, আমার কানে এসে বাজে রাতের স্মৃতি হয়ে। টিকে থাক পাখিটি মানুষের বন্ধু হয়ে, প্রকৃতির অতি আপনজন হয়ে।
-লিখেছেনঃ শরীফ খান