খোকন মিয়াকে জুতার মালা গলায় পরিয়ে সারা গ্রাম ঘোরানো হয়। সেই সঙ্গে দিতে হয় ২০ হাজার টাকা জরিমানা। আর মেয়েটিকে দিয়ে এক পুকুর থেকে আরেক পুকুরে পাঁচ কলস পানি ঢালানো হয়। অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ এনে দুজনকে ওই সাজা দেন গ্রামের সালিসকারীরা। ঘটনাটি ঘটে গত বৃহস্পতিবার কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলা সদরের কুর্শা গ্রামে।
ঘটনার পর চরম অপমানিত হয়ে ওই রাতেই আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন খোকন। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে এ ধরনের শাস্তি দেওয়ায় খোকনের পরিবারের সদস্যরাও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। এর বিচার চেয়ে খোকনের মা বেদেনা খাতুন বাদী হয়ে গত সোমবার সালিসকারী সাতজন মাতব্বরকে আসামি করে নিকলী থানায় মামলা করেছেন।
নির্যাতনের শিকার ওই দুজনের পরিবার, পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, খোকনের সঙ্গে একই গ্রামের একটি মেয়ের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে, এমন অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার ওই গ্রামের মনসুর মিয়ার বাড়িতে সালিস বৈঠক বসে। গ্রামের সাতজন মাতব্বর সালিসে নেতৃত্ব দেন।ওইদিন রাতেই খোকন গলায় রশি বেঁধে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বাড়ির লোকজন টের পেয়ে তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে পরে তাঁকে বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেও অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
নিকলী থানা সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় খোকনের মা বেদেনা বাদী হয়ে সামছুদ্দিন ভূইয়া, রতন মিয়া, মল্লিক খাঁ, রুবেল, কেনু, সুমু ও নূরুল ইসলাম নামের সাত মাতব্বরের বিরুদ্ধে শনিবার রাতে মামলা করেছেন।গত মঙ্গলবার নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মাহবুব আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আসামিরা পলাতক রয়েছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মীর রেজাউর আলম বলেন, পুলিশকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
-প্রথম আলো