শোলাকিয়া বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় অবস্থিত একটি এলাকা। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত এখানে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রতি ঈদের জামাতে এখানে প্রায় ৩ লাখ মানুষ অংশগ্রহন করে থাকে। ঈদগাহটি নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় ৭ একর এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এখানে ২৫০টি কাতারে প্রায় ১৫০,০০০ মুসুল্লী একসাথে নামাজ পড়ে থাকেন। প্রায় সমসংখ্যক মুসুল্লী পার্শ্ববর্তী মাঠ, রাস্তা এবং নিকটবর্তী এলাকায় দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজে অংশ নেন। অল্প কিছু নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা দুইতলা মিম্বরের ভবনটিতে নামাজ পড়েন, যেখানে প্রায় ৫০০ লোকের স্থান সংকুলান হয়। ঈদুল ফিতর ছাড়াও ঈদুল আজহার নামাজেও অনুরূপ বিশাল জনসমাগম হয়ে থাকে। শোলাকিয়ার স্থানীয় অধিবাসীর সংখ্যা ১,০২৬, যা ১৮০ টি পরিবার নিয়ে গঠিত।
ইতিহাসঃ
তৎকালীন ঈশা খাঁর বংশধর দেওয়ান হয়বত খাঁ তাঁর নিজস্ব তালুকের নরসুন্দা নদীর তীরে ১৮২৮ খৃস্টাব্দে নিজস্ব মৌজার ৭ একর জমির ওপর “শোলাকিয়া ঈদগাহ” প্রতিষ্ঠা করেন ।তাঁর সাথে জঙ্গলবাড়ীর জমিদার ও বৌ্লাইয়ের জমিদার গন জায়গাদানে সংযুক্ত ছিলেন ।দেওয়ান হয়বত খাঁ শোলাকিয়া একটি মসজিদ নিমার্ণ করেন এবং তার নিযুক্ত ইমাম শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ তার মসজিদে ইমামতি করতেন , পরে দেওয়ান হয়বত খাঁর নির্দেশে শোলাকিয়ার শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ প্রথম ঈদের জামাত পরান ।সেই দিনের সেই জামাতে ১,২৫,০০০ (অর্থাৎ সোয়া লাখ) লোক জমায়েত হয় এবং এর ফলে “শোলাকিয়া” নামটি (“সোয়া” মানে পূর্ণ এক এবং চার ভাগের একভাগ এবং “লাখ” মানে এক লক্ষ) চালু হয়ে যায় (সোয়া লাখ-এর অপভ্রংশ সোয়ালাক যা থেকে শোলাকিয়া)।
পরবর্তীতে ১৯৫০ সনে হয়বত নগরের শেষ জমিদার দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁ ঈদগাহের জন্য ৪.৩৫ একর জমি ওয়াক্ফ করে দেন ।
প্রতিষ্ঠানঃ
মুফতি আবুল খায়ের মো: শফিউল্লাহ ২০০৪ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ঈদের নামাজ পরিচালনা করেন। তার আগে তার পিতা অধ্যাপক মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ নুরুল্লাহ, ১৯৭৫ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ২৮ বছর ধরে এই নামাজগুলো পরিচালনা করেন। মুফতি নুরুল্লাকে এখনো তার সন্তান নামাজের সময় স্মরণ করেন। জেলা কমিশনারকে (ডিসি) প্রেসিডেণ্ট করে ঈদগাহের ৫১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি আছে। প্রতিটি জমায়েতে, জেলা পুলিশ প্রশাসক মেটাল ডিটেক্টর, মাইন ডিটেক্টর ও ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাসহ প্রচুর পরিমাণ পুলিশ নিয়োগ করেন। মেডিকেল টিম ও অগ্নিনির্বাপক দলকে প্রার্থনা চলাকালে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়। মুসলিম-প্রধান বাংলাদেশে ঈদ-উল-ফিতর হচ্ছে বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব এবং ঈদ-উল-আযহা দ্বিতীয় বৃহত্তম।