টিয়া বাংলাদেশের অতিপরিচিত, জনপ্রিয় ও সুদর্শন পাখি। বাংলার ছড়া, কবিতা, গল্প, পালাগান—সব জায়গায় আছে টিয়া পাখির কথা। আর বাংলাদেশের যে কয়টি প্রজাতির বন্য পাখি অবৈধভাবে খাঁচায় পোষা, ভাগ্য গণনা করা ও কেনাবেচা হয়, সবুজ টিয়া সেসব পাখির মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। গ্রাম ও শহরের বাড়িতে সবুজ টিয়া পাখি পুষতে দেখা যায়। গ্রামের ছেলেরা টিয়া পাখির বাসা থেকে ছানা তুলে নিয়ে আসে।
পাখিটির রঙের আভিজাত্য, সুন্দর ও স্মার্ট চালচলন, বুদ্ধিমত্তা, সহজেই পোষ মানা এবং মানুষের মতো করে কথা বলার পটুতার কারণেই সে মানুষের কাছে জনপ্রিয়।আমাদের দেশে সাত প্রজাতির টিয়া পাখির বসবাস। এগুলো হলো চন্দনা টিয়া, বাসন্তী লটকন টিয়া, মদন টিয়া, লালমাথা টিয়া, মেটেমাথা টিয়া, ফুলমাথা টিয়া ও সবুজ টিয়া। এরা সাধারণত বন, বৃক্ষবহুল এলাকা, প্রশস্ত পাতার বন, আর্দ্র পাতাঝরা বন, খোলা বন, পাহাড়ি বন, চা-বাগান, বসতবাড়ির বাগান, আবাদি জমি, পুরোনো বাড়িতে বসবাস ও বিচরণ করে। সাত প্রজাতির মধ্যে সবুজ টিয়ার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
সবুজ টিয়া কলাপাতা-সবুজ রঙের সুদর্শন পাখি। দেহের দৈর্ঘ্য ৪২ সেন্টিমিটার, ওজন ১৩০ গ্রাম। সামান্য কিছু পালক ছাড়া পুরো দেহই সবুজ। দীর্ঘ সবুজ লেজের নিচের দিকে নীলের আমেজ পাখিটাকে আরও সৌন্দর্যময় করে তুলেছে। ঠোঁট মিষ্টি লাল, গভীরভাবে নিচের দিকে বড়শির মতো বাঁকানো। চোখ হলদে-সাদা। ছেলেপাখি ও মেয়েপাখির গলায় ভিন্ন রঙের দাগ আছে। ছেলেপাখির থুতনিতে কালো রেখা, গলা ও ঘাড়ের পেছনে গোলাপি পাটল বর্ণ। মেয়েপাখির ঘাড় পান্না সবুজে ঘেরা।
সবুজ টিয়া সচরাচর ছোট দলে থাকে, তবে জোড়ায়ও দেখা যায়। খাদ্যতালিকায় আছে পত্রগুচ্ছ, ফুল, ফল, লতাপাতা, বীজ ও ফলের মিষ্টি রস। গ্রামের ধানখেতে সবুজ টিয়ারা নামে পাকা ধান খেতে। নদীর ধার দিয়ে শেষ বিকেল ও গোধূলিলগ্নে শত শত টিয়া পাখি ডেকে দিগন্তের দিকে উড়ে যায়। সে দৃশ্য কখনোই ভোলার নয়।অনেক টিয়া একসঙ্গে মিলে রাত কাটায়। সচরাচর পুনঃ পুনঃ উচ্চ স্বরে ডাকে। মেয়েপাখি একাই ডিমে তা দেয়। ছেলেপাখি মাঝেমধ্যে মেয়েপাখিকে খাবার খাওয়ায়। পাখিটির ইংরেজি নাম Rose-ringed Parakeet। বৈজ্ঞানিক নাম Psittacula krameri। আমাদের দেশে এ টিয়ারা ভালোই আছে। তবে খাঁচায় পোষা বন্ধ না করলে নিকট ভবিষ্যতে এ পাখিটি বিপন্ন হতে পারে।
সৌরভ মাহমুদ