ভিয়ার ভেলায় চড়ে সেমিফাইনালে স্পেন। কোয়ার্টার ফাইনালে প্যারাগুয়েকে একমাত্র গোলে হারিয়ে শীর্ষ চারে ইউরোপের এ দেশটি। সেমিফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ জার্মানি।
৮২ মিনিটে গোলটি করেন ডেভিড ভিয়া।
বল নিয়ে বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন ভিয়া। গোলপোস্টে শ্যুট নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। মুহূর্তের মধ্যে বল ডানে পাস করেন সতীর্থ পেদ্রোর উদ্দেশে। ডান পায়ের জোরালো শট। দূরের পোস্টে লেগে ফিরে আসে বল। ফিরতি বল ভিয়ার পায়ের সামনে এসে হাজির। লাথি না দিয়ে উপায় কি? এবার সাইড বারে লেগে জালে জড়িয়ে যায় বল।
টিভি ধারাভাষ্যকাররা ঘুমের মধ্যেও বলে বসতে পারেন ‘ইট ইজ স্পেন’ ‘ওহ নো স্পেন’। খেলার ৯০ মিনিটে এত বেশি তাদেরকে স্পেন এবং স্প্যানিশ খেলোয়াড়দের নাম বলতে হয়েছে অবচেতন মন তা জাগিয়ে দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
যারা টিভি সেটের সামনে বসে স্পেন আর প্যারাগুয়ের ম্যাচ দেখেছেন তাদেরও এ সমস্যা হতে পারে। কিই বা করার। স্পেন এত বেশি আক্রমণে গেছে তাদের নাম অনেকবার না শুনে উপায় ছিলো না। কিন্তু ‘ওহ নো’ শব্দটিও কম শুনতে হয়নি। কারণ তাদের বেশিরভাগ আক্রমণই পরিণতি পায়নি। এমনকি পেনাল্টি শ্যুটও না।
শুরু থেকেই অন্য এক স্পেনকে দেখা গেছে। একচেটিয়া আক্রমণ রচনা করে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে প্রতিপক্ষের রক্ষণদুর্গ। কিন্তু প্যারাগুয়ের দুর্ভেদ্য রক্ষণ প্রাচীর কিছুতেই ভেদ করতে পারছিলো না সাবেক শাসকরা। তার ওপর গোলবার পাহারায় ছিলেন জাস্তো ভিয়ার বিশ্বস্ত একজোড়া গ্লাভস।
মুশকিল হয়ে যায় স্পেনের জন্য। বিরতি পর্যন্ত অনেক আক্রমণ কিন্তু কোনটাই ঠিক জায়গায় আঘাত করতে পারেনি। খেলার দ্বিতীয় মিনিটেই ফ্রি কিক পেয়েছিলো দেল বস্কের দল। কিন্তু জাভি আলোন্সো বল পাঠিয়ে দিলেন সীমানার বাইরে।
১৭ মিনিটে আবারো ফ্রি কিক পায় স্পেন। লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন সার্গিও রামোস। এর কিছু সময় পরই প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে জাভি আলোন্সর আচমকা শট বেরিয়ে যায় ক্রসবারের সামান্য ওপর দিয়ে। ৩১ মিনিটে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাকে ফেলে দেওয়ায় নতুন ফ্রি কিক। কিন্তু সফল হয়নি। উল্টো প্যারাগুয়ে বিপদের মুখে ফেলে দিয়েছিলো ঝটিকা হানা দিয়ে। এভাবে চলে ৪৫ মিনিট।
বিরতির পর পাল্লা দিয়ে চলে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ। ৫৯ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আসে প্যারাগুয়ের। পেনাল্টি মিস না করলে সেমিফাইনালে টিকিট হয়তো তারাই পেয়ে যেতো। কিন্তু গোল করতে ব্যর্থ হন অস্কার কার্দোস। তার নেওয়া দুর্বল শট বাম দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলের নিয়ন্ত্রণ নেন স্প্যানিশ গোলরক্ষক ইকার ক্যাসিয়াস। এ যেন তেজি ষাড়।
পরের মিনিটেই পেনাল্টি আদায় করে নেয় স্পেন। শ্যুট নেন জাভি আলোন্স। গোলে বলও পাঠান। কিন্ত স্পেনের খেলোয়াড়রা আগেই বক্সে ঢুকে পড়ায় গোল বাতিল করেন রেফারি। পুনরায় শট নিতে হয়। এবার আর গোল হয়নি। প্যারাগুয়েন গোলরক্ষক ভিয়ার ঝাঁপিয়ে পড়ে বল থামান। বিপদ মুক্ত করেন তার সতীর্থরা।
৮২ মিনিটে অপেক্ষার অবসান ঘটে। অনেক চেষ্টার পর একটি গোল। এখানেও ভিয়া। গুরুত্বপূর্ণ সব ম্যাচেই তার গোলে জয় পেয়েছে স্পেন। এতে অবশ্য ব্যক্তিগত লাভও হয়েছে ভিয়ার। পাঁচ গোল নিয়ে সবার ওপরে চলে গেলেন সোনার বুটের দাবি নিয়ে।
শেষ বাঁশি বাজার ঠিক দুই মিনিট আগে সমতা আনতে পারতো প্যারাগুয়ে। কিন্তু রক সান্তা ক্রুস গোলরক্ষককে একা পেয়ে বল জালে পাঠাতে পারেননি। এ যাত্রায় কোয়ার্টার ফাইনালে সন্তুষ্ট থাকতে হলো দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিকে।