পিছিয়ে পড়েও শুক্রবার ব্রাজিলকে কোয়ার্টার ফাইনালে ২-১ গোলে হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে প্রথম দল হিসেবে শেষ চারে উঠে গেছে নেদারল্যান্ডস। খেলার দশ মিনিটে ব্রাজিলকে এগিয়ে নেন রবিনহো। ৫৩ মিনিটে আত্মঘাতী গোলে খেলায় সমতা ফিরে আসে। নেদারল্যান্ডসের ওয়েসলি রেইডার জয়সূচক গোল করেন ৬৭ মিনিটে।

ম্যাচে লাল কার্ড পেয়ে ব্রাজিলের ফেলিপে মেলো মাঠ থেকে বেরিয়ে যান। ফলে শেষ ১৫ মিনিট ব্রাজিলকে খেলতে হয়েছে দশজনকে নিয়ে।
নেলসন ম্যান্ডেলা বে স্টেডিয়ামে প্রথম পাঁচ মিনিটে ব্রাজিল একবারও নেদারল্যান্ডেসের গোলমুখে আক্রমণ চালাতে পারেনি। এ সময় বল ঘুরেছে ওলন্দাজদের পায়ে পায়ে। তবে তারাও যে ভালো আক্রমণ করেছে তা নয়। খেলার দু’মিনিটে ডার্ক কুইট ব্রাজিলের গোলমুখে ক্রস করেছিলেন। তাতে অবশ্য মাথা ছোঁয়ানোর কোনো সুযোগ পাননি রবিন ফন পার্সি। ব্রাজিল প্রথম আক্রমণ চালায় খেলার সাত মিনিটে। সেই আক্রমণ থেকেই গোল পেয়ে যায় তারা। ড্যানি আলভেজের চমৎকার ক্রস থেকে গোল করেছিলেন রবিনহো। কিন্তু আলভেজ বল ধরার সময় অফসাইডে ছিলেন। তাই গোলটি বাতিল করে দেন রেফারি।

তবে তিন মিনিট পরই ব্রাজিল এগিয়ে যায়। মাঝ-মাঠ থেকে দারুণভাবে বল ঠেলে দিয়েছিলেন ফেলিপে মেলো। সেটি ধরে ফেলেন রবিনহো। এরপর চোখের পলকে ওলন্দাজ রক্ষণভাগকে ফাঁকি দিয়ে বল জড়িয়ে দেন জালে। নেদারল্যান্ডসের গোলরক্ষক মার্টিন স্টেকেলেনবার্গের কিছুই করার ছিল না। এ গোলের পরই প্রাথমিক জড়তা কাটিয়ে নেদারল্যান্ডসকে চেপে ধরে ব্রাজিল। উল্টোদিকে নেদারল্যান্ডস মাঝমাঠ দখলে নেয়ার চেষ্টা করে যায়। কিন্তু জিলবার্তো সিলভা এবং মেলো শক্তি প্রয়োগ করে খেলায় রেইডার এবং কুইট সামান্য গুটিয়ে যান। ফলে নেদারল্যান্ডসের আক্রমণ দানা বাঁধতে পারেনি। আসলে পুরো প্রথমার্ধে গোল করার মতো নিশ্চিত কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেনি নেদারল্যান্ডস। তাই ব্রাজিলের গোলরক্ষক জুলিও সিজারকে তেমন কোনো কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়নি।

খেলার ২৪ মিনিটে কর্নার পায় ব্রাজিল। আলভেজ বক্সের মধ্যে ক্রস করেন। কিন্তু সেই বলে হুয়ান ঠিক মতো শট নিতে না পারায় ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায় ব্রাজিলের। হুয়ানের শট বারপোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়।তবে ৩০ মিনিটে এগিয়েই যেতে পারতো ব্রাজিল। যে ‘সুন্দর ফুটবলের’ জন্য ব্রাজিলের কাছে তাদের ভক্তদের আকুল আবেদন, তারই এক ঝলক উপহার দেয় কার্লোস ডুঙ্গার দল। চমৎকার একটি পরিকল্পিত আক্রমণ থেকে রবিনহো ওলন্দাজ রক্ষণভাগে ফাটল ধরিয়ে বল দেন কাকাকে। তাতে শটও নেন তিনি। তবে সেই শট আরো দুর্দান্তভাবে বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে দলকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক।

এরপরই পাল্টা আক্রমণ চালায় নেদারল্যান্ডস। রেইডারের শট ধরে নিতে অসুবিধা হয়নি ব্রাজিল গোলরক্ষক জুলিও সিজারের।
বিরতির ঠিক আগে মাইকনের শট নেদারল্যান্ডসের পোস্টের ঠিক বাইরে চলে যায়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল শোধ করে নেদারল্যান্ডস। ৫৩ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে ব্রাজিলের গোলে ‘ক্রস’ করেছিলেন রেইডার। সেটি গোলরক্ষক সিজার এবং মেলোর ভুল বোঝাবুঝিতে জালে ঢুকে যায়। খেলার ৬০ মিনিটে তীব্র শট নিয়েছিলেন আলভেজ। বলটি পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে চলে যায়। পাঁচ মিনিট পর বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ে ভলি করেছিলেন কাকা। সেটিও অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

ঠিক দু’মিনিট পর এগিয়ে যায় নেদারল্যান্ডস। আরিয়েন রোবেন নিয়েছিলেন কর্নার-কিক। বল কুইটের মাথায় লেগে চলে যায় রেইডারের কাছে। তা থেকে জয়সূচক গোল করতে ভুল করেননি তিনি। এরপরই ব্রাজিলের খেলা অনেকটা এলোমেলো হয়ে যায়। কিছুটা মাথা গরম করে খেলা শুরু করে তারা। এর মাশুল গোনেন মেলো। খেলার ৭৪ মিনিটে দ্বিতীয়বারের মতো হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। দশজনের ব্রাজিল মরিয়া হয়ে ওঠে গোল শোধের জন্য। ফলে আক্রমণ চালায় উঠে-পড়ে। কিন্তু নেদারল্যান্ডেসের রক্ষণভাগ ভাঙতে পারেনি। বিশেষ করে আক্রমণভাগের মূল খেলোয়াড় ফ্যাবিয়ানো নামের প্রতি সুবিচার করে খেলতে পারছিলেন না। তাই শেষ পর্যন্ত কোচ ডুঙ্গা তার বদলে মাঠে নামান নিলমারকে।

তাতেও ব্রাজিলের ভাগ্য বদলায়নি। ৮৪ মিনিটে কাকা বক্সের ভেতর থেকে শট নেন। কিন্তু বল চলে যায় পোস্টের বাইরে দিয়ে। এরপর রেফারি শেষ বাঁশি বাজাতেই আনন্দে মেতে ওঠে নেদারল্যান্ডস দল। আর হতাশায় মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।