১৯৪৩ সাল তখনো কিশোরগঞ্জ এ কোন কলেজ স্থাপিত হয়নি। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী কিশোরগঞ্জের কৃতী সন্তান খান বাহাদুর আব্দুল করিম সাহেবের সাথে এক বিবাহ মজলিশে শিক্ষানুরাগী আইনজীবি জনাব জিল্লুর রহমান কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আলাপ করলে তিনি সানন্দে সম্মতি প্রদান করেন। ফলশ্রুতিতে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক সাদত হোসেন চৌধুরী (পদাধিকার বলে সম্পাদক), আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী ও বিপিন রায়কে (যুগ্ম-সম্পাদক), শাহ আব্দুল হামিদ, প্রফুল্ল চন্দ্র ধর এবং কিশোরগঞ্জের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও আইন পরিষদের সদস্য সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়।
৬ সেপ্টেম্বর ১৯৪৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়‌‌ ‘‘কিশোরগঞ্জ কলেজ’’ রাখুয়াইল পাট গবেষণা কেন্দ্রের পাশে তৎকালীন  সিএন্ডবি এর ডাক বাংলোতে।  প্রথম প্রিন্সিপাল নিযুক্ত হন ড. ডি. এল. দাস। এখানেই কলেজের কার্যক্রম চলল দুই বছর। তখন কলেজের চরম আর্থিক সংকট চলছিল।   ঐ সময় এগিয়ে এলেন ইটনা থানার কাটৈর গ্রামের নিরক্ষর কৈবর্তরাজ গুরুদয়াল সরকার। তিনি বিনাশর্তে দান করলেন ৫০ হাজার টাকা। ‍তাঁর টাকায় কলেজর বর্তমান জায়গা খরিদ করা হয়। তাঁর বদান্যতা কিশোরগঞ্জবাসী বিস্মৃত হয়নি। তাঁরই নামানুসারে কলেজের নাম পরিবর্তন করে রাখা হল ‘‘গুরুদয়াল কলেজ’’।    ১৯৪৫ এর শেষে অথবা ১৯৪৬ এর প্রথম দিকে গুরুদয়াল কলেজ বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯৪৫ সনে বিএ ক্লাস খোলা হয়। বিজ্ঞানী সত্যেন বসুর পরামর্শে ১৯৪৮ সনে কলেজে বিজ্ঞান শাখা খোলা হয়। প্রায় প্রতি বছর বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষার মেধাস্থান অধিকার করায় এর সুনাম সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ড. ডি.এল. দাসের পরে অধ্যক্ষ ওয়াসীমুদ্দিনের হাতে এ কলেজ পরিপূর্ণতা লাভ করে। ১৯৮০ সনে কলেজটি সরকারীকরণ করা হয়। বর্তমানে কলেজে ১৬টি বিষয়ে অনার্স কোর্স এবং ৬টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু রয়েছে। অনার্স ও মাস্টার্সে ১ম শ্রেণীতে ১ম থেকে শুরু করে অন্যান্য স্থান অত্র কলেজের শিক্ষার্থীরা অধিকার করছে। কলেজে রয়েছে দক্ষ শিক্ষকমন্ডলীর তত্ত্বাবধানে শিক্ষার চমৎকার পরিবেশ।  এ কলেজের অনেক শিক্ষার্থী আছে যাঁরা সমাজ ও রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুণী বক্তিবর্গ প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রতি বিচারপতি সাহাবউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার এডভোকেট আবদুল হামিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য প্রফেসর ড. আ: মান্নান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ও বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাঙলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা, রাজনীতি ও সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্ঠা প্রফেসর ড. আলাউদ্দিন আহমেদ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. দূর্গাদাস ভট্টচার্য্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. আবুল হাসান, প্রাক্তন সেনা প্রধান ও মন্ত্রী লে. জেনারেল নূরুদ্দীন খান, সিএমএইচ এর প্রাক্তন চীপ মেডিক্যাল অফিসার বর্তমানে বারডেম এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব:) জিয়া উদ্দিন আহমেদ, তত্তাবধায়ক সরকারের প্রাক্তন স্বরাষ্ট উপদেষ্ঠা মেজর জেনারেল (অব:) আব্দুল মতিন ও কবি আবিদ আজাদসহ অসংখ্য মেধাবী কৃতি শিক্ষার্থী যারা সমাজ ও রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে লব্ধ প্রতিষ্ঠিত তাঁরা অত্র কলেজেরই ছাত্র ছিলেন।   

এ ছাড়া কলেজের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছে অত্র এলাকার গর্বিত সন্তান বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাঁর সুযোগ্য সন্তান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, বাংলাদেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. এম. ওসমান গণি এর পুত্র প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ড. এম. ওসমান ফারুক।   

 অত্র কলেজের স্বনামধন্য অধ্যক্ষ প্রফেসর দীপক কুমার নাগের ঐকান্তিক ইচ্ছা ও প্রচেষ্ঠায় উপাধ্যক্ষসহ অন্যান্য সকল শিক্ষক এর সম্মিলিত সমর্থনে কলেজ ক্যাম্পাসে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী শহীদ মো: সিরাজুল ইসলাম ‘বীর বিক্রম’ এর আবক্ষ ভাস্কর্য ও অত্র কলেজের প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গীয় গুরুদয়াল সরকার এর আবক্ষ ভাস্কর্য নির্মান করা হয়েছে, যা বর্তমান প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ও প্রকৃত ইতিহাস জানতে সহায়তা করে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করবে ।  

  সুত্রঃ http://gurudayalgovtcollege.com/