আগামী দিনে প্রযুক্তি বিশ্বে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে? ভবিষ্যতের কম্পিউটিং এ কী ঘটতে পারে? এমনই জল্পনা-কল্পনা এখন প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের মাঝে। আরও অভাবনীয় পরিবর্তন আসবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে ডেস্কটপ কম্পিউটারের ভাগ্যে কী ঘটতে পারে এমনই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এটা ঠিক যে, ডেস্কটপ কম্পিউটার অনেক বছর যাবত্ মার্কেটে বেশ শক্তভাবে অবস্থান করছিল। কিন্তু যেভাবে প্রযুক্তি বিশ্বে পরিবর্তন ও নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে তাতে ডেস্কটপ কম্পিউটারের ভবিষ্যত্ কী অন্ধকার হয়ে আসছে? তবে কী সামনের দিনে মোবাইল কম্পিউটিং জনপ্রিয় হতে যাচ্ছে? এ কথা বলা সমীচীন, প্রযুক্তিতে ঘটে যেতে পারে আরও চোখ ধাঁধানো চমক।
ডেস্কটপ কম্পিউটারের বিবর্তন
ডেস্কটপ কম্পিউটার অনেক ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে আজকের এ অবস্থানে চলে এসেছে। সর্বশেষ পর্যায়ে ডেস্কটপ কম্পিউটারের ডেস্কে এখন সিআরটি মনিটরের বদলে শোভা পাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন এলসিডি মনিটর। বলা যায়, গত কয়েক বছরে ডেস্কটপ কম্পিউটারে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। কম্পিউটিং ডেস্কটপ কম্পিউটার হতে ক্রমে সরে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, ডেস্কটপ কম্পিউটারের জনক হেনরি এডওয়ার্ড রবার্টস পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন এ বছর ১ এপ্রিলে। তাহলে এর মাধ্যমে কি ডেস্কটপ কম্পিউটারের ভবিষ্যত্ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে? একটি সমীক্ষায় জানা গেছে, অ্যাপল করপোরেশন ডেস্কটপ পিসি অপেক্ষা নোটবুক পিসি অধিক বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছে। অবশ্য অন্যান্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নোটবুক পিসির বিক্রির হার বেড়েছে। এই দিনে নোটবুক কম্পিউটার অনেক ক্ষমতাসম্পন্ন।
বাজারে নেই সিআরটি মনিটর
বাজারে নেই কোনো ব্র্যান্ড সিআরটি মনিটর। এ ধরনের মনিটর বাজার থেকে যেন উঠে গেছে। এর পরিবর্তে বাজার দখল করেছে এলসিডি মনিটর। বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিআরটি মনিটরের তেমন কোনো চাহিদা নেই। কদাচিত্ কম বাজেটের ব্যবহারকারীরা এ ধরনের মনিটর কিনতে আগ্রহী হলেও এদের সংখ্যা নিতান্তই সামান্য। একসময় সিআরটি মনিটর জনপ্রিয় থাকলেও প্রযুক্তির বিকাশে তা হারিয়ে যেতে বসেছে। বরং হালকা ও ক্ষুদ্রাকৃতির কম্পিউটিং ডিভাইসগুলো বাজার দখল করছে এবং ব্যবহারকারীর আগ্রহ এসব আকর্ষণীয় ডিভাইসের প্রতি। বর্তমানে মনিটরের ওজন ক্রমে হালকা হয়ে আসছে এবং জায়গাও দখল করে অতি অল্প পরিসরে। অনেক কম পরিসরে এলসিডি মনিটর বরং কাজের পরিবেশকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলেছে।
ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ পিসি
ডেস্কটপ পিসি এবং ল্যাপটপ পিসির মধ্যে মৌলিক তেমন পার্থক্য নেই। উভয় ধরনের পিসিতে রয়েছে একই অপারেটিং সিস্টেম এবং একই ধরনের ডিভাইস বা যন্ত্র। অবশ্য ল্যাপটপ পিসির ডিভাইসগুলো অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রাকৃতির। তবে ল্যাপটপ পিসির একটি উল্লেখ্যযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি বহনযোগ্য অর্থাত্ সহজেই যে কোনো অবস্থানে নিয়ে যাওয়া যায় অনায়াসে। হার্ডওয়ারের দিক থেকে বিবেচনা করলে লক্ষ্য করা যায়, ল্যাপটপ পিসির ডিভাইসগুলো অনেক হালকা।
আগামী দিনের কম্পিউটিংয়ে ল্যাপটপ কম্পিউটার
এটা ঠিক যে, আগামী দিনের প্রযুক্তিতে মানুষের চাহিদার কথা বিবেচনা রেখে পরিবর্তন আসছে। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে, প্রযুক্তি মানুষের জীবনে সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে। আসছে নতুন নতুন প্রযুক্তি। এসব প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে চারপাশ। কী অফিস, কী বাসা, কী সরকার ব্যবস্থা সর্বত্র আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ পরিবেশ। সমপ্রতি ল্যাপটপ পিসি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এটি ডেস্কটপ পিসির সব ধরনের সুবিধা এনে দিতে সক্ষম। বরং এতে বাড়তি সুবিধা রয়েছে। ভ্রমণে এটি ব্যবহার করা যায় খুবই স্বাচ্ছন্দ্যে। এ কারণে বর্তমানে প্রযুক্তি-মনস্ক মানুষের আগ্রহ ল্যাপটপ পিসির দিকে। বাসা, অফিস, ভ্রমণ সব অবস্থানে একাকার হয়ে যাচ্ছে এ প্রযুক্তি উপকরণ। ফলে আগামী দিনে একমাত্র ল্যাপটপ হতে পারে ডেস্কটপ পিসির বিকল্প।
বাংলাদেশে তৈরি হতে যাচ্ছে ল্যাপটপ কম্পিউটার
আমাদের দেশের জন্য একটি ইতিবাচক সংবাদ হচ্ছে, সরকারের উদ্যোগে বাংলাদেশ টেলিফোন শিল্প সংস্থা এবং মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠান টিএফটির কারিগরি সহায়তায় দেশেই তৈরি হতে যাচ্ছে ল্যাপটপ। প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি মাসে ১০ হাজার ল্যাপটপ তৈরি করা হবে। আর এই ল্যাপটপ পাওয়া যাবে মাত্র ১২ হাজার টাকায়। এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। ফলে এর মাধ্যমে সামনের দিনে আমাদের দেশে আরও ব্যাপকভাবে ল্যাপটপ পিসি বিস্তৃতি লাভ করবে। তবে সরকারি উদ্যোগের কতটা বাস্তবায়ন নিশ্চিত হবে তার ওপর নির্ভর করছে এ প্রজেক্টের ভবিষ্যত্।
মোবাইল কম্পিউটিং
বিশ্বে মোবাইল কম্পিউটিংয়ের এখন দারুন সুদিন! তরুণরা স্মার্ট কম্পিউটিংয়ের দিকে অধিক ঝুঁকে পড়ছেন। ফলে তাদের মাঝে ল্যাপটপ এবং স্মার্ট ফোন বেশি জনপ্রিয় হয়ে পড়ছে। স্মার্ট ফোনে যোগাযোগ, ই-মেইল আদান-প্রদান, ওয়েব ব্রাউজ, সামাজিক নেটওয়ার্কিংসহ টুকিটাকি সব কাজ সারা অনেকটাই যেন সহজ। বর্তমানে মোবাইল ফোনের উপযোগী বিভিন্ন ফিচারসমৃদ্ধ অপারেটিং সিস্টেম উন্নয়নে অধিক গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর যেন আগ্রহের শেষ নেই। আবার ডেস্কটপ কম্পিউটারের সব কার্য সম্পাদন করা যায় ল্যাপটপ কম্পিউটারে। ল্যাপটপ কম্পিউটার নানা কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এটি সহজে বহনযোগ্য, ওজনে হালকা এবং এর হার্ডওয়্যার ডিভাইসগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট হওয়ায় এতে বিদ্যুত্ খরচও কম। তা ছাড়া এটি যে কোনো অবস্থানে যেমন ভ্রমণেও ব্যবহার করা যায় স্বাচ্ছন্দ্যে। উল্লেখ্য, আমাদের দেশে সমপ্রতি এক সমীক্ষায় জানা গেছে, বর্তমানে কম্পিউটার মার্কেটের শতকরা ২৫ থেকে ৩৫ ভাগ ল্যাপটপ কম্পিউটারের দখলে। অর্থাত্ ২৫-৩৫% ল্যাপটপ কম্পিউটার বিক্রি হচ্ছে আমাদের দেশে। ফলে বুঝতে পারা যাচ্ছে মোবাইল কম্পিউটিংয়ের অবস্থান কোন পর্যায়ে এসেছে।
তরুণ প্রজন্মের কাছে ডেস্কটপ কম্পিউটারের চেয়ে ল্যাপটপ কম্পিউটারের ব্যবহার অনেক বেশি পছন্দনীয়।
ডেস্কটপ কম্পিউটারের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যেতে পারে। সার্চ ইঞ্জিন প্রতিষ্ঠান গুগলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এমনটা মনে করছেন। অবশ্য এর পেছনে যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। প্রযুক্তি বিশ্বে এমনই পরিবর্তনের আলামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গুগলের মতে, পরবর্তী তিন বছরে এমনটাই ঘটবে। কনজ্যুমার বাণিজ্য আরও বেশি ঝুঁকে যাবে মোবাইল ডিভাইসগুলোর দিকে। এক সমীক্ষায় জানা গেছে, বর্তমানে জাপানে
স্মার্ট ফোন বেশি জনপ্রিয়, পারসোনাল কম্পিউটার নয়। মানুষ ক্রমে স্মার্ট ও স্লিম প্রযুক্তির দিকে মনোনিবেশ করছে। সবকিছু জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রযুক্তি বিশ্বে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা এখন দেখার বিষয়।