শত প্রতিকুলতাকে মোকাবেলা করে ভাস্কর্য্য তৈরী করে কৃতিত্ব অর্জন করেছে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার দুই কিশোর সহোদর সুসেন আচার্য ও শ্যামল আচার্য। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি তাদেরকে পেয়ে বসে ভাষ্কর্য্য তৈরীর নেশা। অথচ দরিদ্র পিতা-মাতার ঘরে জন্ম নেওয়া এই দুই কিশোরের এ বিষয়ে নেই কোন প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিণ এবং উপকরণের সহায়তা। দারিদ্রতার কারণে সামর্থ্য না থাকায় শুধুমাত্র খালি দুটি হাত ও সাধারণ মাটি দিয়ে দুই সহোদর এসব ভাস্কর্য্য ইতিমধ্যে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে, নিপুন হাতে এ দুজন একদিকে যেমন নির্মাণ করেছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, নোবেল বিজয়ী প্রথম বাংলাদেশী ড. মুহম্মদ ইউনুস, মরমী শিল্পী লালন শাহ’র মত বরেণ্য ব্যক্তিত্বের ভাস্কর্য্য তেমনি অপূর্ব দতায় নির্মাণ করেছে মহান ভাষা শহীদদের স্মারণে শহীদ মিনার, স্বাধীনতাকামী মুক্তিপাগল জনতার মিছিল থেকে শুর“ করে গ্রাম-বাংলার চিরন্তন জীবন বৈচিত্রকে। ভাস্কর্য্য নিমার্ণে পারদর্শীতা দেখিয়ে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী আয়োজিত জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় মাটির কাজ বিষয়ে ২০০৬ সনে সুসেন ও ২০০৭ সনে শ্যামল সারা দেশের মধ্যে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করে। দুই ভাইদের এই অনন্য কৃতিত্বে গর্বিত এখানকার স্থানীয় মানুষ।
প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে তারা মস্ত বড় শিল্পী হবে, মুখ উজ্জ্বল করবে দেশের- এমনটাই স্বপ্ন সুসেন ও শ্যামলের। শ্যামলকে সঙ্গে নিয়ে সুসেন বলে, আমরা দুই ভাই নিজেদের প্রচেষ্টায় ভাস্কর্য্য চর্চা করি, আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা নেই, আমাদের নেই কোন যন্ত্রপাতি। বাবার সামান্য আয়ের উপর সংসার চলে না এবং এই আয়ের উপর আমরা ভাস্কর্য চর্চা করতে পারি না, খোলা আকাশের নীচে ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ করি এবং ভাস্কর্য রাখার কোন জায়গা নেই। সরকার বা সংস্থা যদি আমাকে সহায়তা দিত তবে ভবিষ্যতে অনেক বড় ভাষ্কর্য শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন আমাদের কাজে লাগত। ভাস্কর্য্য নির্মাণে দু’ছেলের আগ্রহ ও নিজেদের আর্থিক দৈনতার কথা বর্ণনা করে স্বামী সুশিল আচার্যকে সঙ্গে নিয়ে মা পারুল রানী আচার্য্য বলেন, আমার দুই ছেলের ছোটবেলা থেকেই এই কাজে খুব আগ্রহ। তাদের বাবা গরীব। যন্ত্রপাতি কিনে দিতে পারে না, সরকার যদি সহায়তা করত তারা আরো বড় ভাষ্কর্য শিল্পী হতো। এ ব্যাপারে তাদের শিক আবুল হাসেম ভূইয়া বলেন, সুসেন ও শ্যামল আমার ছাত্র। ছোটবেলা থেকেই তারা মেধাবী ছাত্র ছিল এবং ভাস্কর্য্য শিল্পেও মেধাবী। তাদের বাবা গরীব মানুষ ভাস্কর্য্য শিল্পের কাজে তাদেরকে কোন সহায়তা করতে পারছেন না, সরকার কোন সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ভবিষ্যতে আরো বড়  ভাস্কর্য্য শিল্পী হবে। ছোটবেলা থেকেই সুসেন ও শ্যামলের প্রতিভার বিষয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় দামিহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর ভূঞা। তিনি তাদেরকে সহায়তার আবেদন করে বলেন, অনেক প্রতিক‚লতা মোকাবেলা করে সুসেন ও শ্যামল ছোটবেলা থেকেই ভাস্কর্য চর্চা করে আসছে। তারা আমাদের এলাকা তথা জেলার জন্য অনেক সুনাম বয়ে এনেছে। আমরা ক্ষুদ্র সামর্থ দ্বারা তাদেরকে যতটুকু পারি সাহায্যের চেষ্টা করে গেছি। সরকার যদি তাদের পাশে দাঁড়ায় তবে তারা ভবিষ্যতে বড় ভাস্কর শিল্পী হবে সন্দেহ নেই। দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবে। অনেক প্রতিকুলতার মাঝেও সুসেন ও শ্যামল ভাস্কর্য্য চর্চা করে যে সুনাম বয়ে এনেছে তার জন্য গর্বিত এলাকার স্থানীয় মানুষ। সরকারী কিংবা বেসরকারী সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে এই দুই সহোদর অনেক বড় শিল্পী হবে এমনটাই আশা সকলের।