দূর মহাকাশে গতকাল বুধবার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এমন একটি অতিকায় নক্ষত্রের সন্ধান পেয়েছেন যার আলোক-উজ্জ্বলতা আমাদের সূর্যের চেয়ে এক কোটি গুণ তীব্র। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই প্রথম এ জাতীয় অতিমাত্রায় দানব আকৃতির নক্ষত্র আবিষ্কার করলেন। সদ্য আবিষ্কৃত এই ‘আর১৩৬এ১’ নক্ষত্রের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ব্রিটেনের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল ক্রাউথার বলেন, সূর্যের চেয়ে এ নক্ষত্র আয়তনে প্রায় ৩২০ গুণ বড় এবং ভর ২৬৫ গুণ বেশি। অথচ মহাকাশবিজ্ঞানের এতদিনকার হিসাব মতে, একটি নক্ষত্রের ভর খুব বেশি হলে সূর্যের চেয়ে ১৫০ গুণ বড় হতে পারে।

অধ্যাপক পলের নেতৃত্বে ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরি (ইএসও) সংস্থার একদল বিজ্ঞানী মহাকাশ অনুসন্ধান কাজে ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ (ভিএলটি) ব্যবহার করে এ দানবীয় নক্ষত্রের সন্ধান পান। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব প্রায় এক লাখ ৬৫ হাজার আলোকবর্ষ (এক আলোকবর্ষ সমান প্রায় ৯ লাখ ৪৬ হাজার কোটি কিলোমিটার)।

মহাবিশ্বের কোটি কোটি নক্ষত্রের মধ্যে আমাদের সূর্য নেহাতই মাঝারি মানের নক্ষত্র। অধ্যাপক পল বলেন, এ অতিদানব নক্ষত্রকে যদি আমাদের সৌরজগতে সূর্যের পরিবর্তে বসানো হয় তবে এর উজ্জ্বলতা এতটাই ছাড়িয়ে যাবে যে, সূর্যকে মনে হবে চাঁদের মতো অনুজ্জ্বল।
অধ্যাপক পলের অনুসন্ধানী দল এ নক্ষত্রকে শনাক্ত করতে মহাকাশের এমন একটি এলাকা বেছে নিয়েছেন যেখানে অসংখ্য বড় নক্ষত্র মৃত্যুর আগে সুপারনোভার পরিণতি লাভ করে।

মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মতে, মহাকাশের নক্ষত্রের পরিণতি নির্ভর করে চন্দ্রশেখর সীমার মানের ওপর। এ মান হচ্ছে সূর্যের ভরের ১ দশমিক ৩৮ গুণ। যেসব নক্ষত্রের ভর এই মানের চেয়ে কম তারা শ্বেত বামন-এ পরিণত হয়। একটি সাধারণ নিউট্রন তারার ভর সাধারণত সূর্যের ভরের ১ দশমিক ৩৫ থেকে ২ দশমিক ১ গুণ হয়ে থাকে।

কোনো নক্ষত্রের ভর সূর্যের চেয়ে আট থেকে ১৫০ গুণ বেশি হলে তারা মৃত্যুর আগে সুপারনোভা নক্ষত্রে পরিণত হয়। সুপারনোভা অবস্থায় এসব নক্ষত্র প্রচণ্ড শক্তি ও তীব্র আলো বিকিরণ করে ক্রমশ নিষ্প্রভ হয়ে যায়। চূড়ান্ত অবস্থায় এরা ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়।
এখন এমন একটি নতুন নক্ষত্রের সন্ধান পাওয়া গেল যা ১৫০ থেকে ৩০০ গুণ বৃহৎ হতে পারে। তাই এ নক্ষত্রের পরিণতি নিয়ে নতুন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

পল ও তাঁর সহকর্মীরা দেখতে পেয়েছেন, ‘আর১৩৬এ১’ নক্ষত্রের ভেতরে এমন প্রচণ্ড ঝড়ো অবস্থা চলছে, যা এটাকে সূর্যের মতো গোলাকৃতি না দেখিয়ে অনেকটা অঁশা-আঁশ দেখায়। পল বলেন, এর কক্ষপথে কোনো গ্রহের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা নেই বলেই চলে। এসব নক্ষত্র সাধারণত আরেকটি বড় নক্ষত্রের খুব কাছে অবস্থান করে। তাই কোনো গ্রহের অস্তিত্ব থাকলেও সে গ্রহে রাত হতে পারত না অন্য নক্ষত্রের আলোর কারণে।

তাঁর মতে, এসব নক্ষত্রের মাধ্যমে বিগ ব্যাংয়ের পর সদ্যসৃষ্ট মহাবিশ্বের অনেক অজানা রহস্য জানা সম্ভব। কেননা, মহা বিস্ফোরণের পরপরই এ ধরনের অতিকায় নক্ষত্রের সৃষ্টি হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ‘মান্থলি নোটিশেস’ পত্রিকায় এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সূত্র : বিবিসি, ইএসও।