বাঙ্গালীর সুদীর্ঘকালের ইতিহাস রণাঙ্গনের ইতিহাস।যুগে যুগে তারা সংগ্রাম করেছে কিন্তু বশ্যতা স্বীকার করেনি।ন্যায্য অধিকার আদায়ের ইতিহাসে দালাল মীরজাফরের কারনে বাঙালীরা সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে।১৯৭১ সালের মার্চ মাসের শেষের দিকে গুরুই গ্রামে এক  দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে ওঠে। এই গ্রামের আবাল বৃদ্ধ বণিতা পাকসেনাদের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে।আমি নিজেকে সৌভাগ্য মনে করি।কারণ আমি নিজে এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করতে পেরেছিলাম।আমার যুদ্ধকালীন সময়ের অন্যতম স্মরনীয় ঘটনা গুরুই গ্রামে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘটনা।

১৯৭১ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর ফজরের নামাজের পর কয়েকজন জেলে হিলচিয়া ক্যাম্পে সংবাদ পাঠায় যে, আজ নিকলী থেকে লঞ্চ ও নৌকা নিয়ে কারার মহাতাব উদ্দিনের ও কারার বাহারের নেতৃত্বে রাজাকারদের দল পাকবাহিনীকে সঙ্গে করে গুরুই গ্রাম আক্রমন করবে।কিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা জানতে পারি যে, নিকলী থেকে ৫-৬ টি নৌকা ও একটি লঞ্চ নিয়ে পাকবাহিনী গুরুই গ্রাম আক্রমন করছে।

সেই সঙ্গে সঙ্গেই আমি,কমান্ডার মহিউদ্দিন ভাই,মেজু ও সাহেদ আলী একটি স্টেনগান ও কিছু গ্রেনেড নিয়ে একটি নৌকায় ও অন্য একটি নৌকায় প্রায় ৭-৮ জন কিছু অস্ত্র নিয়ে গুরুই এর দিকে রওনা হই।কিছু ক্ষনের মধ্যেই গুরুই গ্রামের পূর্ব পাড়ার ইমাম বাড়ীতে নামি।অপর নৌকাটি ভসু,ইয়াকুব আলী,আঃ বারী খান ,নুরুল ইসলাম,সমু,বেচু,মহাতাব,নেফর আলী পাড়ার ভিতর ঢুকছে।পাড়ায় উঠেই দেখতে পেলাম যে, ৪ জন রাজাকার একটি নৌকায় নিরস্ত্র অবস্থায় লুন্ঠিত মালামাল পাহারা দিচ্ছে।এদের ধরে হাত,পা, বেধেঁ ক্যাম্পে পাঠায় দেই। আরও ২-৩ টি বাড়ী পার হয়ে দেখি ৩ জন রাজাকার কাধেঁ রাইফেল ঝুলিয়ে,১ জন লুন্ঠিত মালামাল বালতিতে করে অন্য ২ জন মালামালসহ একটি সাইকেল নিয়ে নৌকার দিকে এগিয়ে আসছে।

তাদের দেখেই সমু আড়াল থেকে ফায়ারকরে একজন কে ধরাশায়ী করে ফেলে।সমুর সঙ্গে সঙ্গে আরও ২ জন কে ফায়ার করে মেরে ফেলি। তাদের রাইফেল ও গুলির প্রসেজ খুলে নিই। অন্য ৩ জন কে গুলি করে ধরাশায়ী করি।গুলির আওয়াজে অন্যান্য রাজাকাররা আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে যায়।তারাও গুলাগুলি শুরু করে দেই।আমরা ফায়ার করতে করতে সামনের দিকে অগ্রসর হই,রাজাকাররা পিছু হঠতে থাকে।পূর্ব পাড়ার অর্ধেকেরও বেশি অতিক্রম করে মহরম আলীর বাড়ী পৌঁছে দেখি,আমার ভাগ্নে নুরুল ইসলাম পারার পূর্ব দিকে ধৈঞ্চা ক্ষেতের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হয়ে প্রায় শেষ প্রান্তে পৌঁছে কোণার হাটিঁতে দাঁড়ানো  ২ জন পাকসেনাকে গুলি  করে হত্যা করেছে।

আমরাও গুলি ছুড়ঁতে থাকি।উভয় দলের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।আমাদের গুলিতে ৩ জন রাজাকার ও পাকসেনা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।পাড়ার মুক্তিকামী লোকেরা সাহায্য করার জন্য উপস্থিত হয়।তাদের দ্রুত পাড়া ছেড়ে চলে যেতে বলি।পাকসেনাদের মুল গ্রুপ মসজিদপাড়ায় অবস্থান করছিল। পাকবাহিনীর ভয়ে এ পাড়ায় সমস্ত নারী পুরুষ মসজিদের ভেতর আশ্রয় নিয়েছিল।পাকসেনারা মসজিদের ভেতর প্রায় ৫০-৬০ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে জড়ো হয়ে বসে থাকতে দেখতে পায়।মসজিদের ভেতর থেকে তাদের টেনে হিচঁড়ে বাইরে নিয়ে আসে।রাজাকারদের মাধ্যমে তাদের বোঝানো হয় যে, সৈন্যরা পাকিস্তানী এবং ভালো।কিন্তু মুক্তিসেনারা সন্ত্রাসী ও খারাপ।মুক্তিসেনাদের ধরিয়ে দেওয়া উচিত।তখন তারা আমতা আমতা করে বলে ,এখানে কোন মুক্তিসেনা নেই।

 মুক্তিসেনা পেলে ধরিয়ে দিবে। নারী ও শিশুর কান্নাকাটির ফলে পাক কমান্ডার তাদের বাড়ি চলে যেতে বলে।মসজিদে অন্যান্যদের সঙ্গে আমার বড় বোন মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের মাও ছিল। তাকে ছিনতে পারলে ছেলে মুক্তিযোদ্ধা এ অপরাধে তাকে হয়তো তৎক্ষানাৎ নির্যাতন করতে করতে মেরে ফেলতো।এরই মধ্যে বেশ কিছুক্ষন পূর্ব পাড়ায় গোলাগুলির শব্দে পাকসেনারা মনে করেছিল  গোলাগুলি হয়তো নজেরাই করছে।একজন রাজাকার মারফত গোলাগুলি বন্ধ করার নির্দেশ  দেয়।রাজাকারটি জোরে চিৎকার দিয়ে গুলি বন্ধ করতে বলে।গোলাগুলি বন্ধ হচ্ছেনা দেখে তারা চিন্তিত হয়ে পড়ে।তখন কোণারহাটী হতে রাজাকাররা দোড়ে মসজিদপাড়ায় এসে তাদের কমান্ডরকে বলে যে,মুক্তিযোদ্ধারা পূর্ব পাড়া আক্রমন করছে।গুলিতে কোণারহাটীতে ২ জন পাকসেনা নিহত হয়েছে।

এ কথা শোনার সাথে সাথে পাকসেনারা মেশিনগানের ফায়ারে পূর্ব পাড়া ধ্বংস করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।তখনও আমরা সেখানে যুদ্ধ করছি।হঠাত দিঘীর পশ্চিম পাড় থেকে বৃষ্টির মতো গুলি পূর্ব পাড়ায় এসে পড়ে।আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।একজন গ্রামবাসী আমাদের কাছে এসে বলে যে,লঞ্চের উপর একজন পাকসেনা অদ্ভুত একটা যন্ত্র দিয়ে কি যেন বিড় বিড় করে বলছে।আমরা বুঝতে পারি পাকসেনা ওয়ারলেস দিয়ে সসাহায্য কামনা করছে।

এখনি হয়তো মেজর দুররানী সরারচর ও বাজিতপুর ইউনিটকে সাঁড়াশি আক্রমনের নির্দেশ দেবেন।এ দিকে বৃষ্টির মতো গুলি আসছে তো আসছেই।এ অবস্থায় পিছু হটা ছাড়া আমাদের আর কোন পথ নেই।তাই কমান্ডার মহিউদ্দিন ভাই আমাদের পিছু হটার নির্দেশ দেন।আমরা দৌড়ে ইমাম বাড়িতে চলে আসি।কোন রকমে নৌকায় ওঠে আমরা সবাই শুয়ে পড়ি।মাঝিরাও ভয়ে শুয়ে পড়ে।এ অবস্থায় সবাই শুয়ে থাকলে মৃত্যু অনিবার্য,তাই মাঝিকে নৌকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।ভয়ে কেউই বৈঠা ধরছেনা,আমাদের সাহসী সঙ্গী সমু বৈঠা হাতে নিচ্ছেনা।তখন মাঝি তরিবুল্লাহ আবু ও খুর্শিদ দাঁড় টানতে শুরু করে।নৌকা বাইতে শুরু করে,নৌকা দক্ষিনে  দৌলতপুরের দিকে যেতে থাকে।

গুরুই ও দৌলতপুরের মধ্যে প্রায় ১-২ মাইল ফাঁকা মাঠ।সেই মাঠ নিরাপদে অতিক্রম করতে পারলেই আমরা বাঁচতে পারব।মাঠের মাঝামাঝি আসতেই আমাদের বাড়ি থেকে পাকসেনারা আমাদের দেখে নৌকা লক্ষ করে মেশিনগান দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে।আমাদের বাড়ী মসজিদ পাড়ার দক্ষিণ মাথায় অবস্থিত।ফায়ারের গুলি আমাদের নৌকার ৫-৬ হাত পেছনে পড়ে,আবার ফায়ার করে।এবার গুলি আমাদের মাথার উপর দিয়ে ২-৩ হাত সামনে গিয়ে পড়ে।এভাবে আল্লাহতাল্লার অসীম রহমতে পাকসেনাদের ব্রাশফায়ারের হাত থেকে বেঁচে যাই।ইতিমধ্যে আমাদের নৌকা দ্রুত বরমাইপাড়ার দিকে যেতে থাকে।আবারও পাকসেনারা আমাদের লক্ষ করে ফায়ার করে।এ ফায়ার বরমাইপাড়ার চেয়ারম্যম্নের বাড়ীতে গিয়ে পড়ে।গুলির আঘাতে বেড়ার টিন ও চাল ছিদ্রি হয়ে যায়।আমরা দৌলতপুরের দিকে যেতে থাকি।আমাদের সংবাদ পেয়ে অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা এবং প্রায় সবাই সমবেত হয়।সঙ্গী নেফর আলীকে অনুপস্থিত দেখে ভিষণ চিন্তায় পড়ে যায়।সে মারা গেছে না ধরা পরেছে,সেটা কেউ বলতে পারছেনা।

মৌলভী সাহেবের ছেলে সামসুউদ্দিন বিভিন্ন ঘর থেকে খাবার এনে আমাদের খবারের ব্যবস্থা করেন।খাবার খেয়ে বল্ক হয়ে যাওয়া রাইফেলগুলো ফুল থ্রো করে পরিস্কার করি।হাতিয়ার ও এনিমুশেন নিয়ে আবারও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়।ইতিমধ্যে নেফর আলী হাতিয়ার সহ এসে পৌঁছে।সে জানায় যে, পূর্ব পাড়ায় আমাদের ছেড়ে পানিতে পজিশন নয়ে ফায়ার করতে করতে একদম উত্তরের মাথায় চলে যায়।অনেকক্ষন পর গোলাগুলি থেমে যাওয়াতে বিপদ বুঝতে পেরে বৈষ্ণা ক্ষেতে ডুব দিয়ে কচুরিপানা মাথায় দিয়ে ১-৩ মাইল পূর্বে সরে যায়।

একটি জেলের নৌকা দেখতে পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে সাহায্যের অনরোড করে।তারা তাকে এখানে পৌঁছে দিয়ে যায়।নতুনভাবে আবার কর্মপরিকল্পনা তৈরি করি।আমরা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে নতুন পরিকল্পনা করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হই।ইতিমধ্যে সেখান থেকে দেখা যাচ্ছে যে, উত্তর দিকের আকাশ কালো ধোঁওয়ায় ছেয়ে গেছে।বুঝতে পারলাম আমাদের বাড়ি সহ পাকসেনারা পুরো গ্রাম আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।আমি মহিউদ্দিন,ভাই,ভসু, দেয়ারিশ মিয়া,নুরুল ইসলাম, ছিদ্দিক, বেসু, সমু, হাশিম, নেফর আলী, কফিল উদ্দিন, সাহেব আলী,কেন্ত মুন্সী ও নৌকার মাঝিদের নিয়ে একটি দাঁড়ের বড় নৌকায় গুরুই যাওয়ার জন্য হিলচিয়া বাজারের পশ্চিম পাশে অবস্থান নেই।

ইতিমধ্যে মুষুল ধারে বৃষ্টী শুরু হয়। বৃষ্টী একটু কম্লে পাড়া বাজিতপুরের পশ্চিম মাথা দিয়ে বিয়াতিরচর মসজিদের কাছে যাই। আমাদের দেখে ২-১ জন জেলে এসে বলল,কিছুক্ষন আগে পাকসেনারা গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে।যাবার সময় আমাদের  বাড়ি ও সমস্ত পূর্ব পাড়ায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে এবং অনেক লোককে গুলি করে মেরেছে নৌকা দিয়ে আমাদের বাড়ীর পাশে খালে ঢূকে দেখি,আমাদের ঘরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।পূর্ব পাড়ার রহমত আলীর ঘাটে নৌকা ভিড়াই।তখনও বৃষ্টি হচ্ছিল।বৃষ্টির ফোঁটা ঘরের আগুনের উপর পড়ছে আর আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে।পাড়ায় ঊঠ ২-৩ টি বাড়ী পার হয়ে দেখতে পাই পায় একটি লাশ পুড়ে বীভৎস রুপে মাটিতে পড়ে আছে।

বুঝতে পারি তাকে জ্বলন্ত আগুনে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে।কি বীভৎস দৃশ্য ! কাছে গিয়ে দেখছি এ লাশ কার ?হঠাৎ আমাদের সঙ্গেরই যোদ্ধা ছিদ্দিক ভাই,ভাই বলে চিৎকার করে লাশটি জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে।মৃত ব্যক্তিটি ছিদ্দিক আলীর বড় ভাই ইয়াকুব আলীর। ছিদ্দিককে সান্ত্বনা দেওয়ার মত ভাষা তখন আমাদের ছিলনা। তবুও এই শোককে শক্তিতে পরিণত করার কথা বলে তকে সঙ্গে নিয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে লাগলাম।

৪-৫ টি বাড়ি পার হতেই ইন্তাজ ব্যাপারীর বৈঠোক ঘরের বারান্দায় একটি শিশুর কান্না শুনতে পাই।অন্ধকার বারান্দায় টর্চের আলো ফেললে দেখতে পাই পাকসেনারা শিশুর মাকে গুলি করেছে।গুলির ফাঁকে আল্লার রহমতে এই নিষ্পাপ শিশুটি বেঁচে আছে।টর্চের আলোতে মহিলাকে চিনতে পারি।তিনি আমাদের সঙ্গী কেন্তু মিয়ার চাচাত ভাইয়ের স্ত্রী।শিশুটি কে এক সঙ্গী কোলে তুলে নেয়।চারিদিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে অন্ধকার রাত নেমে আসছে।শশ্মানের আগুনের মতো পাড়ার ঘর বাড়ি পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে।জনমানবহীন পাড়াটীকে একটি ভূতুড়ে গুহার মতো মনে হচ্ছে।আর আমরা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা যেন সেই গুহায় প্রবেশ করছি।আমাদের শব্দ পেয়ে এদিক ওদিক লুকিয়ে থাকা ৩-৪ জন বৃদ্ধ এগিয়ে আসে এবং আমাদের জড়িয়ে ধরে কান্নাজড়িত কন্ঠে পাকসেনারা যে নির্মম বর্বরতা ও নৃশংসভাবে মানুষজন হত্যা করেছে তার বর্ণনা দিতে থাকে।তাদের কথা শুনে আমরা স্তম্ভিত হয়ে যাই।ইসলাম ধর্মের শান্তিবাহী পতাকা মুসলমান এতো নিষ্ঠুর কি ভাবে হয়? তাদের কথা মতো খুর্শিদ মিয়ার বাড়ির পূর্ব পাশে বেশ কিছু লাশ দেখতে পাই।

অনেকগুলি নিরীহ লোককে দড়ি দিয়ে বেঁধে একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করেছে। পাড়ার উত্তর মাথায় নেওয়াজের বাড়ীতে আরো ৬ জন নারী পুরুষ কে বর্বর পাকসেনারা গুলি করে হত্যা করে। এ পাড়ায় মোট আমরা ২৫ জনের লাশ দেখতে পাই।আমরা ভীত ও স্তম্ভিত হয়ে পড়ি।লাশ গুলি যেন শিয়াল কুকুরে খেতে না পারে তার জন্য হারিকেন জ্বালিয়ে লাঠি হাতে সবাই একত্রে জেগে রাত কাটাতে হবে।আজ আমরাও গ্রামে ত্থাকব এ আশ্বাস দিয়ে মসজিদ পাড়ায় চলে আসি।তবে নিরাপত্তার জন্য আমরা গোওপনে হিলচিয়া ক্যাম্পে চলে আসি।

রাতে আমাদের কারো চোখেই ঘুম আসেনা। এপাশ ওপাশ করে শুয়ে বসে জেগে থেকে কোন রকমে রাত কাটাই। ৭ সেপ্টেম্বর ভোর বেলায় গুরুই গ্রামে এসে লোকজন ডেকে এনে আমিন মুন্সীর দ্বারা কোন রকমে লাশ গুলো দাফন কাফনের ব্যাবস্থা করি।সমস্ত গ্রাম ঘুরে সবার খবরাখবর নিতে থাকি।গ্রামবাসীরা সব কিছুকেই স্বাভাবিক ভাবে গ্রহন করে নিজ নিজ কাজে লিপ্ত থাকে।আমাদের সোর্স নিকলী থেকে খবর নিয়ে আসে,পাকসেনাদের ৪ টি লাশ হেলিকপ্টারে করে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ৬ রাজাকার ও পুলিশের লাশ কিশোরগঞ্জে পাঠানো হয়েছে।এহেন পরিস্থিতিতে মেজর দুররানী নিকলীতে খুব ভয় ও আতঙ্কে রয়েছেন।নিকলী স্কুলের নিরাপত্তা জোরদার করেছেন।

 এ সংবাদে আমাদের মনোবল বেড়ে যাই।রাতে আমি কমান্ডার মহিউদ্দিন ভাই,আধ্যাপক ইয়াকুব আলী, দেয়ারিশ মিয়া ,ভসু ও বারী খানকে নিয়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় যে,পাকবাহিনী যে কোন সময় আমাদের ক্যাম্পে সাঁড়াশি আক্রমন করতে পারে।সেই আক্রমন প্রতিহিত করতে আমাদেরও আরও শক্ত ও ভারী হাতিয়ারের প্রয়োজন।তাই আবার ভারত যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।১০ সেপ্টেম্বর ৩ নং হেড কোয়ার্টারে ট্রাকে করে মনতলা গিয়ে কমান্ডার মহিউদ্দিন ভাই সেক্টর কমান্ডার কর্নেল শফিউল্লার কাছে গুরুই গ্রামের যুদ্ধ সহ তার বর্ণনা দেন।গুরুই গ্রামের যুদ্ধের কথা ভারতীয় পত্রিকা বসুন্ধরাতে প্রকাশিত হয়েছে।

 

লেখকঃ এ কে এম আনোয়ারুল হক