কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অধিকাংশ সময় চিকিৎসকদের পাওয়া যায় না—এমন অভিযোগ হাওরবাসীর অনেক দিনের। কখনো কখনো কিছু সময়ের জন্য হাসপাতালে থাকলেও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ফি নিয়ে রোগী দেখার অভিযোগও ছিল জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে।

এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক সিদ্দিকুর রহমান গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় হাসপাতালটি পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক পাননি। তবে তখন চিকিৎসকের অপেক্ষায় ছিলেন বেশ কিছু রোগী। এতে বিস্মিত জেলা প্রশাসক সঙ্গে থাকা জনপ্রতিনিধি এবং উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘কোথাও কেউ নেই, দুঃখজনক দৃশ্য। এই দৃশ্য পাল্টাতেই হবে।’

হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে উপজেলা সম্মেলন কক্ষে ডিসির উপস্থিতিতে মতবিনিময় সভায় প্রধান আলোচ্য হয়ে ওঠে হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকার বিষয়টি। সভায় উপজেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি নির্মল কুমার সাহা বলেন, ‘দিনের পর দিন চিকিৎসকেরা হাসপাতালে না এলেও তাঁদের জবাবদিহি করতে হয় না। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা এসে চিকিৎসক না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরেন। তবে কোনো কোনো সময় এই হাসপাতালে স্বাস্থ্য সহকারীরা রোগী দেখেন।’

মুঠোফোনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. সালমান বৃহস্পতিবার ওই সময় হাসপাতাল চিকিৎসকশূন্য থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘হাসপাতালের নয়জন চিকিৎসকের মধ্যে প্রেষণে আছেন চারজন। কর্মরতদের মধ্যে ডা. আলমগীর ও রিয়াজুল করিম ছুটিতে ছিলেন। নাজমুল হাসান ভূঁইয়া অবশ্য ছুটি নেননি। পরে আমি ও সহকারী সার্জন হাসিবুল হাসান গিয়ে রোগী দেখেছি।’

ওই দিন বিলম্বে হাসপাতালে যাওয়ার কারণ হিসেবে মো. সালমান বলেন, ‘হাসপাতালের কম্পিউটারটি মেরামত করতে বাজিতপুর নিয়ে গিয়েছিলাম।’ তিনি বলেন, হাসপাতালের ভেতর চিকিৎসকদের থাকার উপযোগী কোনো ভবন নেই। প্রয়োজনীয় অনেক কিছুর সংকট রয়েছে। এত সব প্রতিকূলতার কারণে মূলত চিকিৎসকেরা এখানে মানসিকভাবে স্থির হতে পারছেন না। হাসপাতালে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ফির বিনিময়ে রোগী দেখার অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, আগে কিছু কিছু হয়ে থাকতে পারে, তবে এখন হচ্ছে না।

জেলা প্রশাসক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘নিজ চোখে হাসপাতালের যে চিত্র দেখেছি, তা এক কথায় দুঃখজনক; মেনে নেওয়া যায় না। সমস্যার সমাধান করতেই হবে। চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানিয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।’