ময়মনসিংহ প্রাচীন শহর। তার চেয়েও প্রাচীন কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর। সেটি অবশ্য পৌর মর্যাদার দিক থেকে। আজ থেকে ১৪২ বছর আগে ১৮৬৯ সালের ৮ এপ্রিল পৌরসভার মর্যাদা পায় বাজিতপুর। এর এক দিন পর পায় ময়মনসিংহ। পরিসংখ্যানগত এই তথ্যের ব্যবধানই যা। এ দুই পৌরসভার মধ্যে যোজন যোজন ব্যবধান। ময়মনসিংহ এখন বিভাগে উন্নীত হওয়ার জন্য লড়ছে। আর বাজিতপুরবাসী আছে দ্বিতীয় শ্রেণীর পৌরসভার মর্যাদা নিয়ে। শুধু তা-ই নয়, আদি এই পৌরসভার নাগরিকেরা নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বঞ্চনার কষ্ট মাঝেমধ্যে আন্দোলনে গড়ায়। নির্বাচন এলে প্রতিশ্রুতি আসে। ইতিবাচক পরিবর্তনের কথা বলেন প্রার্থীরা। এবারের মেয়র পদপ্রার্থীরাও পিছিয়ে নেই। বলছেন পূর্বসূরিদের মতোই।

বাজিতপুর পৌর পরিষদ সূত্র জানায়, ব্রিটিশ শাসকদের চোখে বাজিতপুরের সম্ভাবনার বিষয়টি প্রথম নজরে আসে। এ কারণে ৬ দশমিক ৮ বর্গকিলোমিটার সীমানা নিয়ে তৎকালীন এই থানাটিকে পৌরসভায় উন্নীত করা হয়। তখন বৃহত্তর ময়মনসিংহের মধ্যে আর কোনো জেলা বা উপজেলা পৌরসভার মর্যাদা পায়নি। পৌরসভা হওয়ার পর দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বাজিতপুরের সম্ভাবনার বিষয়টি জাগ্রত ছিল। এই সময়ের মধ্যে সরকার বাজিতপুরে একটি বিমানবন্দর, একটি কৃষি বিমানবন্দর, একপর্যায়ে একে জেলায় উন্নীত করার কথাও ভাবনায় আনে। এ জন্য জমি অধিগ্রহণসহ প্রয়োজনীয় দাপ্তরিক অগ্রগতিও হয়েছিল। পরে তা আর এগোয়নি। এখন সবই অতীত। নির্বাচন এলে সম্ভাবনার স্বপ্ন আর দুঃস্বপ্নের আলোচনা সাধারণ নাগরিকদের বাড়তি মনোবেদনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এই বঞ্চনা ও ক্ষোভের কথা প্রার্থীদেরও অজানা নয়। এ কারণে ভোটারদের ভাবনার সঙ্গে মিল রেখে তাঁরাও স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। জানা গেছে, গেল অর্থবছরে পৌরসভার বাজেট ছিল এক কোটি ১০ লাখ টাকা। আর রাজস্ব আদায় হয় ৭২ লাখ টাকা, যা একটি পৌরসভা ও তার বাসিন্দাদের জীবনমানের রুগ্ণ চিত্রই তুলে ধরে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পৌরসভার অনেক স্থানে এখনো পাকা সড়ক হয়নি। যা হয়েছে তা-ও ভাঙাচোরা। সড়কবাতি থাকলেও বেশির ভাগই বিকল। পয়োনিষ্কাশন ও নর্দমাব্যবস্থা নাগরিকদের ভোগান্তির আরেক কারণ। এগোয়নি শিক্ষায়ও। প্রাচীন এই জনপদে নেই সরকারি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান.বাজিতপুর ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান গোলাম মস্তফা বলেন, ‘অতীতই আমাদের সব। বর্তমানটা ভালো যাচ্ছে না। ভবিষ্যৎ নিয়েও বেশি আশাবাদী হতে পারছি না। এত আগের পৌরসভার চেহারা এমন থাকতে পারে না।’ বাজিতপুর বাজারের পুস্তক ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাজিতপুরে যোগ্য ও সময়োপযোগী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এতে করে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। এখন আমাদের শুধু পৌরসভার বয়স নিয়ে গর্ব করা ছাড়া কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।’

ভোটার ও সাধারণ নাগরিকদের এমন ভাবনার সঙ্গে দ্বিমত নন প্রার্থীরাও। বাজিতপুর পৌরসভায় এবার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচজন। বড় দুই দল একক প্রার্থী মনোনয়ন দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ওই দুই দলের হয়ে মাঠে আছেন এক জোড়া করে প্রার্থী। তাঁরা হলেন, আওয়ামী লীগের ছারোয়ার আলম ও রফিকুল ইসলাম। বিএনপির এহসান কুফিয়া ও আমিরুল হোসেন। অপর প্রার্থী হলেন জাতীয় পার্টির নেতা নাজমুল আরেফিন। একটি বিষয়ে পাঁচ প্রার্থীর সবাই প্রায় একমত এবং সে ব্যাপারে তাঁরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। নির্বাচনে জয়ী হলে পিছিয়ে থাকা এ জনপদকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করবেন।

সাইফুল হক মোল্লা ও সুমন মোল্লা, বাজিতপুর (কিশোরগঞ্জ)