তসলিমা নাসরিন বা ব্রততী বন্দোপাধ্যায়– কারুর পরিচয়ই নতুন করে দেবার দরকার নেই। এবার কলকাতায় গিয়ে অবশেষে কিনতে পারলাম ব্রততীর আবৃত্তির ক্যাসেটটা। এর আগে অনেক খুঁজেছি, অন্তর্জালে কোথাও পাওয়া যায় কি না। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর খুঁজেও পাইনি। অবশেষে গ্যালো সেপ্টেম্বরে ভারত গিয়ে সুযোগ জুটল। তবু যা যা চেয়েছিলাম, সব যোগাড় করা হয়ে ওঠেনি আমার। চেয়েছিলাম ঋতিকা সাহনী’র না শোনা গানগুলোর ক্যাসেট নিয়ে আসতে। এবার ভারতে গিয়েই প্রথম ফোনে ঋতিকাদি’র সাথে আলাপ অব্দি হোলো। উনি জানালেন ওঁর আগের ক্যাসেটগুলো সব এইচএমভি বের করেছিলো অডিও ফরম্যাটে। ওগুলো সিডি হয়ে বেরুনোর আগেই একরকম বিলুপ্ত হয়ে গ্যাছে। জানালেন কলকাতায় খুঁজলেও আমি ক্যাসেটগুলো পাবো না। শুনে মন বিষণ্ণ হয়ে গেলো। চেয়েছিলাম অনূসূয়ার “ভ্রমর” আর “গানের ওপারে” ক্যাসেটদু’টো কিনব। খুঁজেই পেলাম না। ফোন নাম্বার ছিল (ওঁর সাইটেই পাওয়া যায়), কিন্তু ফোন করিনি। সেলিব্রিটিদের ব্যস্ততা আমাদের সাধারণ মানুষদের , এমনকি আমাদের মধ্যে যারা অনেক ব্যস্ত, তাদের থেকেও বেশি। ওদের ঘন ঘন ফোন করে জ্বালানোর কোনো মানে হয় না। তসলিমা নাসরিনের যতগুলো ক্যাসেট পাওয়া যায় নিয়ে যাব ভেবেছিলাম। এই একটা ছাড়া আর কিছুই আনতে পারিনি। অবশ্য আমি কলকাতায় ছিলাম মোটে পাঁচ দিন। বাকি দশ দিন দিল্লীতে ঘুরে বেড়িয়েছি। দিল্লীতে বাংলা বইও পাওয়া যায় না। ক্যাসেট দূরে থাক। এমনকি হিন্দী বইও ওখানে খুব কম মেলে। যা দেখেছি, মোটামুটি সবই ইংরেজী। দিল্লীতে ঋতিকাদির ক্যাসেটও খুঁজেছিলাম, বাংলা না থাক হিন্দীগুলো যদি পাই অন্তত…. পেলাম না। বেশিরভাগ দোকানদার নামই শোনেনি।

Kya Sharam ki Bat by tamosodeep

এক বন্ধুর বাড়িতে তসলিমা নাসরিনের কবিতা নিয়ে একটা গানের সংকলন শুনলাম। এইটাও অনেক খুঁজেছি আমি। দু’বছর খুঁজে খুঁজে অবশেষে ২০১০ এর মাঝামাঝিতে গায়িকা রাখি সেনের নতুন খোলা সাইটে দু’টো গান পেলাম। শুনে রীতিমত হতাশ হতে হোলো। এত সুন্দর কবিতাগুলোয় এত বাজে সুর লাগিয়েছে, কি বলব…….ভেবেছিলাম এ তো কেবল দু’টো গান, এই এলবামে তো আরও আছে। সেগুলো হয়তো ভালো হবে। বুকে একটা টিমটিমে আশা জ্বলছিল। যখন এলবামটা শোনা হল, সেটাও নিভে গ্যালো। একমাত্র “একটি করে দিন যায় আর বয়স বাড়ে” ছাড়া আর কোনো গানই আমার ভালো লাগেনি। তসলিমা নাসরিনের কবিতা থেকে তৈরী করা কোনো গান সেই প্রথম শোনা। তবে আগে তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে বেশ কিছু গান শুনেছি। সেগুলোর মধ্যে এক প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গানটা, “কলকাতা মুখ ঢাকো লজ্জায়” আর “এপিসোড ফর তসলিমা নাসরিন” ছাড়া আর কোনোটাই আমাকে স্পর্শ করেনি। ম্যাগোরিয়ার গাওয়া “দ্য গডেস ইন ইয়ু তসলিমা“র সুর বাদ্যসংগত তো রীতিমত ভয়ঙ্কর। আমাদের আইয়ুব বাচ্চুও সম্ভবত ওর চেয়ে অনেক ভালো গান করে। জেব্দার গানটার সুরও হাস্যকর।

Episode for Taslima Nasrin by tamosodeep

সবশেষে আশা বলতে ছিল এই ক্যাসেটটা, আর তসলিমা নাসরিনের স্বকণ্ঠের কিছু আবৃত্তি। “গোল্লাছুট” বলে একটা সিডি বেরিয়েছিলো অনেক আগে, সেটায় উনি নিজে অনেকগুলো কবিতা পরপর আবৃত্তি করেছিলেন। সেই আবৃত্তিগুলোর কিছু আমি অনেক আগে এস্নিপ্সে পেয়েছিলাম, আর কিছু পেলাম কিছুদিন আগে, ফেসবুকের এক বন্ধুর কল্যাণে। তিনি বললেন যে তসলিমা নাসরিন নিজেই নাকি ওঁকে ওই আবৃত্তির ক্লিপিংসগুলো দিয়েছেন। আর উনি টেম্পো কমিয়ে ভিডিও বানিয়ে সেগুলো আপলোড করেছেন। ওই টেম্পো কমানোতেই গন্ডগোল বেঁধে গ্যালো। একটা আবৃত্তিও ভালো করে শোনা যায় না। তবু যতটুকু যা আসে, তাতে বোঝা যায় যে তসলিমা নাসরিন অসাধারণ আবৃত্তি করেন তাঁর কবিতাগুলো।

এর আগে ওঁর কিছু ইংরেজী আবৃত্তি পেয়েছি ইউটিউবে, সেগুলো একেবারে মন্দ লাগেনি। ওঁর কবিতা নিয়ে ধানাইপানাই কিছু ভিডিও-ও পেয়েছিলাম, সেগুলো একেবারেই ভালো লাগেনি। তসলিমা নাসরিনের নিজের আবৃত্তি, সে যার কবিতারই হোক, সবসময়ই ভালো লেগেছে আমার। “নহি সামান্য নারী” এলবামে রমা মন্ডলের গানগুলোর চেয়ে ওঁর আবৃত্তিগুলোই শুনতে বেশি ভালো লেগেছিল। “গোল্লাছুটে”র আবৃত্তিগুলোও অসাধারণ। কিন্তু সেটাও পাঁচ দিনের কলকাতা ভ্রমণে তাড়াহুড়ো করে সংগ্রহ করা হয়ে উঠল না।

আসলে যত ক্যাসেট কিনেছি সবই পার্ক স্ট্রীটের “মিউজিক ওয়ার্ল্ড” থেকে। ওখানে কেবল ব্রততীর সিডিটাই পেয়েছিলাম। আমাকে মিউজিক ওয়ার্ল্ড থেকে বলেছিল সাউথ সিটি মোড়ে যেতে। সেখানে যাওয়া তো দূরের কথা, সময়ের অভাবে সেটা যে কোথায় তাও অবদি খুঁজে বের করা হয়নি।

 

Kolkata Mukh Dhako Lajjay by deeptamoso

ব্রততীর আবৃত্তি বলে অনেক আশা করে বসেছিলাম। দুই বাংলার শ্রেষ্ঠ আবৃত্তিশিল্পী ওঁ। শুনেছি উনি যা-ই আবৃত্তি করেন যখনই করেন, সে যত ছোট কবিতাই হোক কি যত বড়ই হোক, সব মুখস্ত আবৃত্তি করে যান। মঞ্চে দাঁটিয়ে একের পর এক বলে যেতে থাকেন কবিতা, একটাও বই দেখে নয়। বাংলাদেশের প্রতিও আগ্রহ বেশ আছে। তসলিমা নাসরিনের কবিতা নিয়ে আস্ত এলবাম তো করেছেনই, একসময় ওঁর সাইটে ঢুকলেই শোনা যেত হুমায়ুন আজাদের “ভালো থেকো জল মিটিমিটি তারা”। হুমায়ুন আজাদ আমার প্রিয় না হলেও এই কবিতাটা খুব প্রিয়। আমার ফেলে আসা বন্ধুদের, যাদের সাথে আমার জীবনের সোনাঝরা দিনগুলো কেটেছে, ফেলে চলে আসার আগে এই কবিতাটা মনে মনে নিজেকেই শুনিয়েছিলাম। ব্রততীরটা ছাড়াও বিদ্যা বালানের “ভালো থেকো” ছবির শেষের আবৃত্তিটাও ছুঁয়ে দেয় আমাকে। ব্রততীর রবীন্দ্রনাথের কবিতাগুলোর আবৃত্তি তন্ময় হয়ে শুনি। যখন বলেন “অমন আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে চলবে না”, কি আশ্চর্য আকুলতা খেলা করে ওর কন্ঠে! যখন পড়েন “সে এসেছিল সুন্দরের বার্তা নিয়ে”, তখন আমি মনে মনে জল থেকে ছিঁড়ে আনা শাপলার মতো সোঁদা হৃদয়ের গন্ধমাখা নারীর কন্ঠস্বর শুনতে পাই। যখন আবৃত্তি করেন “তোমায় খোঁজা শেষ হবে না মোর”, ওঁর হৃদয়াবেগ ভরা গেলাসে রেড ওয়াইনের মতো ছলকে ওঠে। “চোখের বালি”তে ঐশ্বরিয়ার ঠোঁটে ওঁর সমস্ত সংলাপ আমাকে অনেকবার আবেগের সমুদ্রে ডুবিয়েছে। চার বছর আগে ছবিটা প্রথম দেখেছিলাম, আজও দেখি। অন্তত তিনশ’ বার দেখা হয়ে গ্যাছে এই একই ছবি।

এই এলবামের আবৃত্তিগুলো একেবারে মন্দ করেনি ব্রততী। নেপথ্যের বাদ্যসংগতগুলো আরও ভালো হতে পারত। ব্রততীর বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের আবৃতিগুলোর সাথের ইন্সট্রুমেন্টাল খুব ভালো। তসলিমা নাসরিনের “গোল্লাছুটে”র “নূরজাহান” আর “মেয়েবেলা” কবিতাদু’টোর বাদ্যসংগত অসাধারণ হলেও অন্যগুলো তেমন নয়। তসলিমা নাসরিন প্রত্যেকটা আবৃত্তির আগে “নির্বাচিত কলাম” থেকে পাঠ করেছেন। আমার কাছে তসলিমা নাসরিন পাঠটাকে ব্রততীর আবৃত্তির থেকে Better মনে হোলো। সম্ভবত ব্রততী খুব একটা সময় পাননি আবৃত্তিগুলো করতে গিয়ে। তসলিমা নাসরিনের কবিতার কোনো আবৃত্তি যারা আগে কখনো শোনেনি, তারা অবশ্য বুঝতে পারবে না এসব। আমি এর আগে তসলিমা নাসরিনের কন্ঠে একই কবিতাগুলো শুনেছি। আমার অনেক Better মনে হয়েছে এই আবৃত্তিগুলোর থেকে।

কিছুটা আশাহত হলাম। তবে পুরোটা নয়। কিছু কিছু কবিতা আবার ব্রততী দারুণ করে পড়েছে। যেমন, “চরিত্র” কবিতায় “লোকে তোমাকে চরিত্রহীন বলে গাল দেবে” লাইনের চরিত্রহীন শব্দটা ব্রততীর পাঠে অসম্ভব তীব্র হয়ে ফুটে উঠেছে। কন্ঠ শ্লেষে বিদ্রুপে এবং সেই সাথে সমাজ নামক প্রতিষ্ঠানটার জন্য বিরক্তি আর বিবমিষামাখা করুণায় ভরপুর। “সুদর্শন ফরাসী যুবক, শোনো” কবিতার শেষের লাইনগুলোতেও শুদ্ধ আবেগের প্রয়োগ যথেষ্ট, কবিতার “মিউজিয়াম” শব্দটাকে ব্রততী যখন “মিউসিয়ম” উচ্চারণ করে, তখনও বেশ কানে লাগে। ইংরেজী ভাষায় একই শব্দ একেক এক্সেন্টে একেকভাবে উচ্চারিত হয়। এতে দোষের কিছু নেই। “ঈদুল আরা” কবিতার এক লাইনে গিয়ে ব্রততী যখন “গোসল” কে “গো-ওসাল” উচ্চারণ করেন, একটু নবাবী উর্দূর মতো করে, তখন মনে খটকা লাগে, বাংলাদেশের কবির বাঙাল শব্দ সম্পর্কে ওঁর হয়তো পরিস্কার ধারণা নেই। হয়তো শব্দটাকে আদ্যোপান্ত ইসলামিক ভেবে উনি এরম করে উচ্চারণ করছেন। “মা কষ্ট পেলে আমাদের কিছু যেত আসত না” কবিতাটার শেষ কয়েকটা লাইন আবৃত্তিতে বাদ পড়ল। কেনো জানি না। যতদূর বুঝলাম, ওই লাইনগুলোয় মা’কে কবর দেয়ার কথা লেখা আছে, যেটা হয়তো কলকাতার সংস্কৃতির সাথে ঠিক যায় না। “ফরাসী প্রেমিকে” একই কবিতা গদ্য আকারে আছে (বইটায় তসলিমা নাসরিনের মা’কে নিয়ে লেখা প্রায় সব কবিতাই গদ্য করে দেয়া আছে), সেখানে সমাপ্তিতে কবরের বদলে চিতার কথা বলা হয়েছে। হয়তো দু’দুটো ভার্সন হয়ে গিয়েছিল বলেই ওই অংশটুকু বাদ দেয়া হয়েছে। অবশ্য এক’টা ছাড়া আর তেমন কোনো কবিতার আবৃত্তি অতটা নাড়া দিতে পারল না। কলকাতার বন্ধুদের কাছেই শুনলাম এলবামটার কাজ হয়েছে বেশ তাড়াহুড়ো করে। তসলিমা নাসরিন নাকি নিজের বাড়িতে বসে পড়েছেন “নির্বাচিত কলামে”র গদ্যাংশগুলো। আর ব্রততী ওনার পাঠ রেকর্ড করে নিয়ে গিয়ে নিজের স্টুডিওর আবৃত্তি জোড়া লাগিয়ে এলবামটা সম্পূর্ণ করেছেন।

আজ সন্ধ্যেয় নেটে বসে ব্লগে কিছু লিখতে ইচ্ছে করছিল। কি লিখব কি লিখব ভাবতে ভাবতে মনে হোলো, এলবামটা নিয়ে লিখে ফেলি। কিছুদিন আগে পুরো এলবামটাই আপলোড করেছি। এই সুযোগে বাংলাদেশের কিছু ব্লগারের কাছে পৌঁছে দেয়া যাবে ক্যাসেটটা। আধঘন্টা লাগল এই বিবরণটুকু লিখতে। এবং নিচে রইল আস্ত ক্যাসেটখানা, শুনে আপনাদের কেমন লাগল জানাবেন-

Mondo Meye by preventneorazakrs

পোস্টটা দিতে গিয়ে তসলিমা নাসরিনের স্বকন্ঠের দু’টো আবৃত্তি একটা সাইটে আপলোড করে এম্বেড করে দিলাম। দু’টোই আমি পেয়েছি জয়ন্তদা’র কাছ থেকে। উনি অডিওর ওপর ছবি আর টুকরো টুকরো ফিল্ম বসিয়ে ভিডিও বানিয়েছেন তসলিমা নাসরিনের অনেকগুলো আবৃত্তি থেকে। তার মধ্যে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে “আমার মেয়েবেলা”র আবৃত্তি। কাল তসলিমা নাসরিনের স্বকন্ঠের যে দু’টো আবৃত্তি এম্বেড করেছি, তার মধ্যে ওটাও ছিল। দু’টো কবিতাতেই নারীর জীবন তীব্র শৈল্পিকতার সাথে ফুটে উঠেছে, জয়ন্তদার বানানো ভিডিওটাও দারুণ। আপলোড করার লোভ সামলাতে পারলাম না। রাত সাড়ে চারটা’র দিকে আপলোড করে ফেললাম মেটাক্যাফেতে। নিচে ভিডিওটা রইল, সেই সাথে কবিতা দু’টোও-

আমার মেয়েবেলা”র প্রচ্ছদ, কলকাতা থেকে বেরুনো মেয়েবেলা
~*~*~*~*~
১.
তিরের মতো শীত বেঁধে গায়ে তখন, তখন আমার হাতের
তালুতে ধোঁয়া ওঠা ভাপাপিঠে আর ভাপাপিঠের
পেটের ভেতর পাটালি গুড় আর কথা বললে মুখ থেকে ধোঁয়া বার হয় যেন
চুলো, যেন জঙ্গলের ঝরাপাতার আগুন, যেন ভাত ফুটছে, যেন
ডালে হচ্ছে পাঁচফোড়ন, যেন
বাড়িঘর পুড়ছে, পেটের নাড়ি পুড়ছে, জিভ পুড়ছে

তখন একহাতের ভাপাপিঠের দাগ, আরেক হাতে ডাংগুটির গুটি
ডাং হাতে দাঁড়িয়ে লাবু বাবু হাবু সাবু…ছয় ভাই
অপর পক্ষে একা আমি, গুটি হাতে, গুটির পেছন উর্দ্ধশ্বাস দৌড়, গুটি
ওড়ে কড়ইগাছে, চালে, পগারে, রোদে দেওয়া শুকনো মরিচে,
বরইয়ের আচারে…হাত পা মেখে যায় কাদায়, তেলে, কালো পিঁপড়েয়,
লাবুরা ছক্কা মেরে ছয় ভাই আমার পিঠে চড়ে বাড়ি ফেরে, আমার হাঁটু ছিলে যায়,
হাতের তালু ছিলে যায়, ভাপাপিঠের দাগ মুছে যায়।

২.
গুঙ্গি সই। মামু কই? মাছের কাছে? মাছ কই? চিলে নিছে! চিল কই? উইড়া গেছে,
ধপ্পত।
এভাবে ধপ্পত পড়তে পড়তে, মানুষের পায়ের পাতা থেকে কাত হয়ে শীতলপাটিতে
মাটিতে
পড়তে পড়তে আরও একটি খেলা খেলেছি
এই মেয়ে তোর বাড়ি কই? শিউলিতলা। শিউলিতলায় শিউলি নেই?
বানর আছে। শিউলিতলায় শিশির নেই? ইঁদুর আছে। শিউলিতলায় ঘাস নেই? কাদা
আছে।

পা পিছলে আলুর দম। ধপ্পত।
এই মেয়ে তোর বুকে কী?

৩.
বুকের মধ্যে বরই হয়, বুকের মধ্যে সুপুরি, বুকের মধ্যে কমলালেবু, বুকের মধ্যে কুমড়ো
আর শেষে গিয়ে বুকের দড়িতে চামচিকে
সারা সকাল বরই পাড়ল বালকেরা, বুড়োরা কোঁচড় ভরে সুপুরি নিল, কড়া দুপুরে
কমলালেবু কামড় দিল মস্ত মস্ত যুবক, কুমড়োকে মোরব্বা করে খেল হাভাতেগুলো
আর রাতে চামচিকে ঝুলতে দেখে ছেলে বুড়ো সব পালাল।

কাব্যগ্রন্থঃআয় কষ্ট ঝেঁপে জীবন দেব মেপে

বালিকার গোল্লাছুট” কবিতাটার ওপর ধর্মেন্দ্র রাথোরের আঁকা তৈলচিত্র

বালিকার গোল্লাছুট
~*~*~*~*~*~*~*~

আমরা বালিকারা যে খেলাটি খেলব বলে পৃথিবীতে বিকেল নামত
সে খেলার নাম গোল্লাছুট।
সারা মাঠ জুড়ে বিষম হই চই-
সেই নিশ্ছিদ্র আনন্দ থেকে
গড়িয়ে গড়িয়ে কবেই এসেছি শতচ্ছিন্ন দুঃখের ছায়ায়,
মনে নেই, মনে নেই কোন দল কোন দিকে ছোটে,
কাকে ছুঁলে হয় নিখাদ বিজয়!
বালিকারা এখনও কি খেলে হাওয়ায় উড়িয়ে চুল গোল্লাছুট খেলা?

 

আমার আবার ইচ্ছে করে খেলি
এখনও মাঝে মধ্যে আকুপাকু করে পায়ের আঙুল
ধুলোয় ডুবতে চায় গোপন গোড়ালি।
ইচ্ছে করে যাই,
পৃথিবীর সমস্ত বয়স্ক বালিকা দিই গোল্লা থেকে ছুট।

কাব্যগ্রন্থঃঅতলে অন্তরীণ

লিখেছেনঃ ব্লগার তমসো দীপ