কোন এক বাংলা অনুষ্ঠানে যে ছেলেটার সাথে পরিচয় হয়েছিল মনে করতে পারছিনা, তবে ওর কিছু বিশেষ দিক খুব বেশ মনে আছে। সাধারন বাঙ্গালি ছেলেদের গায়ের রঙ এর চেয়ে ও একটু ফর্শা, মুখে  কেমন যেন একটু মুচকি হাসি, ঠোটের কোনে আলতো ভাবে লাগানো। সারা অনুষ্ঠানে “জ্বি” “না” এর মধ্যেই ওর কোথপকথন সীমিত। সংক্ষেপে ইংরেজিতে যাকে বলে “ইন্ট্রভার্ট” জাতীয়। ঐদিন আর ছেলেটা সম্পর্কে বেশী কিছু আর জানা হয়নি।

একদিন কেমন ভাবেই যেন ছেলেটার প্রসংগ চলে এলো-
-আবির কে. চেনেন না! আশ্চর্য হয়ে  জিজ্ঞাস করলো ময়মনসিংহের ছেলে কামরান

-না তো, আবির টা আবার কে!
কামরান একটু মুচকি হেসে বললো,

-কেনো, ঐযে ভাস্বর ভাইয়ের বাসায় দেখলেন না, সারা অনুষ্ঠান কিচেন এর কোনায় দাঁড়িয়ে কাটিয়ে ছিল- দেশ থেকে এসেছে মাস তিন/চারেক হবে,
-কোন ইউনিভারসিটি তে এসেছে, জিজ্ঞাস করলাম

-জানিনা 
 -কোথায় থাকে বলতে পারো

কামরানের মুখে আবারও এক ঝলক মৃদু হাসি খেলে গেলো, বুঝলাম হাসির অর্থটা আমার কাছ থেকে লুকতে চাইছে। মাঝে মাঝে ওর এসব আচার আচরনে আমি বেশ রাগ হই, কিন্তু বেশি ক্ষন থাকতে পারি না রাগ করে। ও আমার দারুন ভক্ত, কেনো তা আজও জানিনা। কিছু সময় চুপ থেকে বল্লো,

-জানিনা, শুধু জানি স্টুডেন্ট ভিসায় এসেছে
– ইউনিভারসিটিতে কি দেখো ও কে?
-সেমিষ্টারে তো শেষ হয়ে যাবে আগামি সপ্তাহে, একদিন ও তো ওকে ক্যাম্পাসে দেখিনি
 আবির সমন্ধে আমার আগ্রহটার কারন হলো, আমি যখন আবির এর মতো স্টুডেন্ট ভিসায় পড়তে এসেছিলাম, তখন এক সিনিয়র ভাই, উনি পি, এইচ, ডি করতেন ফুলব্রাইট বৃত্তিতে, আমাকে দারুন ভাবে গাইড দিতেন, মাস সাতেক উনার সান্নিধ্য পেয়েছিলাম। দেশে ফেরার আগের দিন এক সন্ধ্যায় আমাকে ডেকে নিয়ে অনেক কথা বলেন, আমি বললাম,

– ভাইয়া আপনার ঋন কখনও শোধ করা যাবে না
উনি বেশ সহজ ভাবে বললেন

-কেনো যাবে না
-কি ভাবে
-আমার কাছে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, তুমি আমার দুটো শর্ত পালন করবে

প্রথমটি হলো, ছাত্র অবস্থাতেই থাক আর যে পেশায়ই থাকো, দেশ থেকে ছাত্র বা পেশাজিবী নুতন এদেশে আসলে তুমি তোমার সাধ্যমত তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করবে, তাদের খোজ খবর রাখবে। তারা নিজের পা’য়ে দাড়ানোর আগ পর্যন্ত। তা’হলেই ঋন পরিশোধ হয়ে যাবে। আর উনার দ্বিতীয় শর্তটি এখানে না প্রকাশ করাই শ্রেয়।

প্রথম শর্তটির বশঃবর্ত্তী হয়েই আবির সমন্ধে এতকিছু জানা, ভাবনা হতে লাগলো বেচারা কোথায় থাকে কোথায় খায় কে জানে। কারো কারো কাছে শুনেছি, বাইরে কোথাও ইমিগ্রেশনের ভয়ে লুকিয়ে কাজ করে, বাংগালীদের এড়িয়ে চলে, মাঝে মধ্যে কোন কোন ঘরোয়া অনুষ্ঠানে  দেখা যায়।

সেমিস্টারের প্রথম দিকে, অন্য কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংগালি বন্ধুরা ধরেছিলো-ভারতীয়, পাকিস্তানি ছাত্র/ছাত্রীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবে, বাংলাদেশ ক্লাবের জন্যও বাজেট বরাদ্দ হয়েছে, সমস্যা হলো অনুষ্ঠান করার লোকজন নেই , অনেক কষ্টে অনুষ্ঠান করেছিলাম, আমার শহর থেকে রিহার্সাল এর নির্দ্ধারিত স্থান ছিল প্রায় পঞ্চাশ মাইল দূরে, একদিন পর পর রিহার্সাল মাস দুয়েক, তারপর শো। উল্লেখ্য তিনদেশের মধ্যে বাংলাদেশ সবচে ভালো করেছিলো। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার এক পাকিস্তানি ছাত্র বন্ধু পুরো অনুষ্ঠান টি ভিডিও তে ধারন করেছিলো। মাঝে মধ্যে দেখা সাক্ষাৎ হলেই বলতো, আমার কাছে ক্যাসেটটা আছে, নিয়ে কপি করে রেখো। ঐপর্যন্তই।  

 দেখতে দেখতে সেমিষ্টার শেষ হয়ে গেল। গাছের পাতার পাতার বিভিন্ন রং, হাল্কা শীত, জানান দিতে লাগলো Fall সেমিষ্টারের আগমনী বার্তা। আমার ক্যাম্পাস বদল হলো। মুল ক্যাম্পাস থেকে প্রায় সত্তর মাইল দূরে। সেমিষ্টারটা ওখানেই থাকতে হবে সপ্তাহে পাঁচদিন।ছোট একটা রুম ভাড়া করে থাকি। শুক্র বার ক্লাশ শেষে চলে আসি আবার রবিবার রাতে ফিরে যাই। কারন কয়েক সপ্তাহ পরে দেশ থেকে মা এসে আমার সাথে কিছু দিন থেকে যাবেন।

কোন এক শুক্রবার রাতে আমি দেরি করে ফিরেছি, আনুমানিক রাত সারে বারোটা বাজে-

ফোন বাজলো, এত রাতে আবার কে
অপরপ্রান্তে আমার এক ভারতীয় বন্ধু, যে নাকি ঐ অনুষ্ঠানে “বাংরা” নেচে সারা অনুষ্ঠান মাত করেছিলো-

-অনেক দিন পর, কি মনে করে, জিজ্ঞাস করলাম
-একটা বিশেষ অনুরোধ বন্ধু, অনেক চেষ্টা করেও তোমাকে ফোনে পাই নি।

-কি ব্যাপার
-বিয়ে করতে যাচ্ছি।
-বাহ! বাহ! অভিনন্দন, তা, কি বিয়ের নিমন্ত্রন? কবে, কখন-

-কালকে সন্ধ্যার ফ্লাইটে দেশে যাচ্ছি, কিন্ত যাবার আগে একটা জিনিষ তোমার কাছে চাইবো, শুনেছি, এটা একমাত্র তোমার কাছেই আছে। আমার হবু স্ত্রী এবং ওর পরিবারের সবাইকে দেখাতে হবে হবু স্বামীধন কত গুনের। আমাদের অনুষ্ঠানের ভি,ডিও ক্যাসেট টা আমাকে দেবে আমি দেশ থেকে এসেই তোমাকে ফেরত দিয়ে দেবো।

-বন্ধু আমি জানিনা, কি করে জানলে আমার কাছে ক্যাসেট টা আছে, আমার কাছে ক্যাসেট নেই তবে কার কাছে, কোথায় আছে বলতে পারবো
-বলার দরকার নেই, ইয়ার, যাভাবেই পারো কাল সকাল দশটার মধ্যে ক্যাসেট জোগার করে দাও, প্লিজ! প্লিজ!!

ওর কন্ঠের অনুনয়ে মনে হচ্ছিলো, এর থেকে মুল্যবান বস্তু এই মুহূর্তে ওর কাছে এ পৃথিবীতে আর কিছু হতে পারে না। আর না হওয়াইতো স্বাভাবিক!
রাত প্রায় একটা, সত্তর মাইল ড্রাইভ করে মাত্র এসেছি, ক্লান্ত। আবার চল্লিশ/পয়তাল্লিশ মাইল ড্রাইভ, এতো রাতে, মন কেনো জানি সায় দিচ্ছে না। ভাবছি, ক্যাসেট পেতে হলে একক্ষুনি বেরুতে হবে-

-বন্ধু, আমার বিয়েতে কি তুমি আমাকে উপহার দিতে না?
-অবশ্যই।
-শুধু, ক্যাসেটটা আমার হাতে এনে দাও, এ হবে আমার বিয়ের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার!! 
 আমার ভাবনায় দারুন ভাবে ছেদ পরলো।
-ঠিক, আছে চেষ্টা করবো, সকাল দশটার দিকে ফোন করো-

নিচে গিয়ে গাড়ী স্টার্ট করলাম, শুক্রবার রাতের ভির কাটিয়ে মিনিট বিশেক এর মধ্যে হাইওয়ে I-70(W) উঠে গেলাম। স্পিডোমিটারের কাটা সত্তর পেরিয়ে যাচ্ছে, পাশ কেটে, সাই সাই করে মস্ত মস্ত ট্রাক গুলো অভারটেক করে চলে যাচ্ছে, আমার লেনে আমিই একা, মনোটোনাস বাতাসের আর ইঞ্জিনের শব্দ মিশে মাথায় কেমন জানি একটা ঝিম ঝিম ভাব এসে যাচ্ছে, জানালার কাচ নামিয়ে বাইরে তাকিয়ে এক ঝাপটা ফ্রেশ বাতাস চোখ মুখে লাগানোর চেস্টা করলাম। হঠাৎ করেই সাই সাই করে পাশ কেটে যাওয়া ট্রাক গুলু কোথাও যেনো উধাও হয়ে গেলো। রাস্তার দৃষ্টিসীমা (ভিজিবিলিটি)  আস্তে আস্তে কমতে থাকলো। তাহলে কি আমার ঘুম পাচ্ছে, রেস্ট এরিয়া তে থেমে কি একটু কফি নিয়ে নেবো,

হেড লাইট হাইবীম থেকে লো বীমে নিয়ে আসলাম, সামনে ঘন কুয়াশা আসছে, এলাকাটার আশে পাশে নিশ্চয় লেক বা জলাভুমি থাকবে, হঠাৎ করেই গাড়ী এক দলা কুয়াশা পিন্ডের মধ্যে ঢুকে দৃষ্টিসীমা প্রায় শুন্যের কোঠায় নামিয়ে দিল, হেডলাইটের আলো ঘন কুয়াশায় বাধা পেয়ে গাড়ীর ভিতর এক অদ্ভুত সাদা আলোর বিকিরন ঘটালো, হঠাৎ করেই মনে হলো কে যেন আমার উইনসিল্ডে দুইহাতে ভর রেখে আমার গাড়ীর ধাক্কা থেকে নিজেকে বাচিয়ে দ্রুত রাস্তা পার হয়ে যাচ্ছে, কি করবো বুঝে উঠতে পারলাম না, নিমিষে,সাদা আলোর বিকিরন গাড়ীর ভেতর থেকে চলে গেল, দৃস্টিসীমা এখন সাধারন, বুঝতে পারলাম কুয়াশা কেটে বেরিয়েছি।

স্পিডোমিটারে তাকালাম মাত্র পচিশ! হাইওয়ে লিগ্যাল স্পীডলিমিটের অর্ধেকেরও কম!! এস্কেলেটর চাপলাম।হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছলাম। ক্যাসেট বন্ধুর বাসার কলিং বেল চাপলাম, রাত তখন তিনটা। আমাকে এত রাতে দেখে এবং আগাম ফোন করে না আসায় বন্ধুটি হতভম্ব, বিষয়টি খুলে বলে কাংখিত ক্যাসেট নিয়ে বিদায় হলাম।

 ফেরার পথ হাইওয়ে I-70(E) মোটামোটি নীরব। মাঝে মধ্যে অপর দিক থেকে ভারী যানবাহন আসছে কিন্ত কি ব্যাপার ওদের সবার হেডলাইট হাইবীমে কেনো। আমার লাইটও ক্ষনিকের জন্য হাই বীমে নিলাম, না, সবই তো পরিস্কার, কিন্ত গাড়ীর ভিতরে হঠাৎ করেই কেমন যেনো ঠান্ডা হয়ে আসতে লাগলো। গাড়ীর গতি বাড়িয়ে দিলাম। মিনিট পাচেক এর মধ্যেই আমার উইনসিল্ডে বরফ বৃষ্টি চিট চিট শব্দে আঘাত করতে লাগলো, শীতপ্রধান দেশ গুলুতে মোটর চালকের কাছে বরফ বৃষ্টি, এক দুঃস্বপ্ন ছারা আর কিছু নয়, সাধারনত, আকাশে মেঘ থাকলে এবং অতি দ্রুত তাপমাত্রা নিচে নেমে গেলে বৃষ্টির ফোটা গুলি লবন/সাগু দানার আকৃতি ধারন করে পতিত হয়, শেষ পর্যায়ে তুষারে পরিনত হয়। বরফ বৃষ্টি রাস্তায় পরে রাস্তার উপর কাচের প্রলেপে রপান্তরিত হয়, তখন কাচের উপর গাড়ী চালানো আর হাইওয়ে তে  গাড়ী চালানো একই ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। তখন গাড়ী চলে ৫-১০ মাইল বেগে। এরকম অপ্রত্যাশিত আবহাওয়ার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। বাসায় যখন ফিরলাম তখন ঘড়ির কাটা সাড়ে পাচটা ছুই ছুই করছে।

ক্যাসেটটা বেড সাইড টেবিলের উপর রেখে বিছানায় শুয়ে ব্ল্যাংকেট টানলাম, ল্যাম্পটা নিভানোর আগে, টেবিলে রাখা ক্যাসেটটার দিকে একবার তাকালাম, নিজের উপর ভীষন রাগ করতে ইচ্ছে করছে, নিমিষে চোখের সামনে ভেসে উঠলো একজোড়া নবদম্পত্তির হাসিমুখ। বাতি নেভালাম।

ফোনের কর্কশ শব্দে ঘুম ভাংলো,  মাত্র সকাল সারে সাতটা, ব্যাটার কি আর তর সইছে না  রিসিভার টা হাতে নিয়ে ভাবলাম, এখন ওকে একটা ধ্যাতানী না দিলে আর হচ্ছে না, আরে বাবা বলেছিইতো সকাল দশটায় যোগাযোগ করতে-

-হ্যালো

-আমি কি জনাব জাফর এর সাথে কথা বলতে পারি?
একটু ভ্যাবাচ্যাকা, খেয়ে গেলাম, সামলিয়ে নিয়ে বললাম-

জ্বি বলছি-
হ্যালো মিস্টার জাফর, পুলিশ ডিপার্টমেন্ট, হমোসাইড ডিভিশন থেকে সার্জেন্ট কোহেন বলছি-
কিছু ভেবে পাচ্ছি না, এত সকালে পুলিশ কল করবে কেনো?

-জ্বি বলুন
-আমি দুঃখিত এই ভোর সকালে আপনাকে একটা দুঃসংবাদ দিতে হচ্ছে-
পিলে চমকে,গলা দিয়ে বেড়িয়ে আসতে চাইলো, গলা শুকিয়ে যাচ্ছে-
-আপনি কি মিঃ আবির হাসান নামে কাউকে চেনেন?
-হ্যা চিনি, কেনো কি ব্যাপার?

-গত রাত স্থানীয় সময় পৌনে তিনটায় দিকে, বরফ বৃস্টিতে, তার গার্লফ্রেন্ডের মা’য়ের বদল কাজে নিউজ পেপার বিলি করার সময় গাড়ীর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক খুটির সংগে গাড়ি আঘাত লাগলে মিঃ আবির গাড়ির উইনসিল্ড ভেংগে রাস্তায় ছিটকে পরে। দুমরে মুচরে যাওয়া গাড়ি থেকে মৃত দেহ পাওয়া যায় প্রায় তিনশ গজ দূরে…

আমি এগুলো কি শুনছি, দুঃস্বপ্ন নয় তো-
-আমরা অনুমান করছি, মাল্টিপল আঘাত তার মৃত্যুর কারন হতে পারে, যেমন সীট  বেল্ট পরা থাকলে হয়তো উইন্সিল্ডের সাথে মাথার সংঘর্ষ হতো না, এবং ছিটকে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতো না। হাতের  নখের নীচে এবং মুখে, শরীরে কাদা মাটি এবং ঘাস ছিলো। মনে  হচ্ছে সাহায্যের জন্য অনেক খামচা খামচি করেছে চেস্টা করেছে অনেক, কিন্তু বুঝতেই পারছেন , গত রাতে যে ঠান্ডা ছিলো-সুস্থ মানুষেরই এই ঠান্ডায় বেচে থাকা দায়।

 উহঃ আর সহ্য করতে পারছিনা এ বর্ননা,-দাড়িয়ে থাকতে পারছিনা, মনে হছে মাথা ঘুরে পরে যাবো এক্ষুনি-

পুলিশ অফিসার আবারও বলে যেতে লাগলো, মিঃ আবিরের গার্লফ্রেন্ড গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছে, ভাগ্যিস ও সিটবেল্ট পরেছিলো, নতুবা ওর পরিনতি ও একই হতো।

পুলিশ অফিসার এবার একটা দীর্ঘশ্বাস নিলেন-
-মিঃ জাফর আমরা সাধারনতঃ ময়না তদন্ত এবং অন্যান্য তথ্য/আলামত সংগ্রহ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভিকটিমের পরিবারের সদস্য ছাড়া কাউকে কিছু জানাতে পারি না-

 -কিন্ত আমি তো মিঃ আবিরের পরিবারের কেউ নই- 
 -জ্বী আমরা জানি, অনেক খুজাখুজি করেও এদেশে আবিরের পরিবারের কাউকে আমারা খুজে পাইনি, তবে আবিরের প্যান্টের পেছন পকেটে রক্ত মাখা ওয়ালেটে (মানিব্যাগে)ড্রাইভার লাইসেন্স, ক্রেডিট কার্ড এর সাথে,একটি ছোট কাগজে হাতে লিখা যে একটুকরো তথ্য আমারা পেয়েছি, তার জের ধরেই আপনাকে সব বলা-

কি সেই তথ্য?

“In case of emergency, please contact Mr. Zafar Imtiaj at (785)550-****

(জরুরী প্রয়োজনে, দয়া করে যোগযোগ করুন, জনাব জাফর ইমতিয়াজ এই ফোন নাম্বারে (৭৮৫) ৫৫০-**** আৎকে উঠলাম। মনে মনে ভাবলাম আমাকে কেনো? আর কথা বলতে পারছিনা-

 -দয়া করে হাসপাতাল মর্গে আসবেন। আপনার সাহায্য এবং সহযোগিতা ছাড়া মৃতের আনুসাংগিক, অত্যাবশ্যক কাগজ পত্র সম্পন্ন করা কষ্টকর হবে। দুঃখিত। রিসিভার নামিয়ে রাখলেন পুলিশ অফিসার। কি করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না অসম্ভব মাথা ঘুরছে, বমি বমি ভাব হচ্ছে-তাহ’লে গত রাত পৌনে তিনটার দিকে সাদা কুয়াশা পিন্ডের ভেতর আমার গাড়ীর বাইরের দিক থেকে উইনসিল্ডে দুহাতে ভর করে আমি কাকে দ্রুত সরে যেতে দেখেছিলাম!

যদিও চেষ্টা করেছ্‌ ওর খোজ খবর তো তেমন ভাবে রাখতে পারিনি, যতদুর মনে পরে ওর সাথে কথা বার্তাও হয়নি তেমন ,কোথায় থাকতো, কি করতো কিছুই জানতে পারিনি- অথচ আবির কি করে জানতো ডিগ্রী নিয়ে দেশে ফেরার প্রাক্কালে কোন এক সন্ধ্যায় আমার প্রতি পি,এইচ,ডি ভাইয়ের অতি গোপনে বলা ঋন মুক্তির প্রথম শর্তটি?

 কলিং বেল বাজলো, চমকে উঠলাম, আবার কে এলো, নীচে গিয়ে দরজা খুললাম

-আরে বন্ধু, সারা রাত তো আর ঘুমাতে পারিনি-
-বললাম, কেন?

-ক্যাসেটের চিন্তায়, মনে কিছু করো না ফোন না করেই দশটার আগেই সরাসরি চলে এসেছি-
-তুমি একটু দাঁড়াও আমি উপর থেকে ক্যাসেট নিয়ে আসছি
কেন যেন আর ওর উপর রাগ হলো না, সিড়ি ভাংতে ভাংতে ভাবলাম  আমার ভারতীয় বন্ধুর আনন্দ স্মৃতির ক্যাসেটটায় ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের দৃশ্য জুড়ে না দেয়াই ভালো-

 -এই নাও তোমার ক্যাসেট
বাচ্চা ছেলে পুলে চকলেট পেলে যেমন খুশী হয়, ঠিক তেমনি ভাবে খুশি হলো আমার বন্ধুটি, খানিক পরেই কেমন জানি মন খারাপ করে বললো- 
– আচ্ছা ,সকালের খবর দেখেছো টি,ভি তে, -গতরাতের বরফ বৃষ্টিতে গাড়ী দুর্ঘটনায় নাকি তোমার দেশের এক লোকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে?

আমি নীরব রইলাম।