গ্রিক পুরাণে আপেলকে নিষিদ্ধ ফল হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। কট্টর খ্রিস্টানরাও এক সময় আপেল খেতেন না। তাদের ধারণা ছিল আপেল অনিষ্টকারী ফল। এই ফল খাওয়ার কারণেই আদম-হাওয়া স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। আপেল নিয়ে এমন অনেক গল্প-গুজব ও কুসংস্কার রয়েছে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও সাহিত্যে।

কিন্তু তাই বলে এ ফলের জনপ্রিয়তা ধরে রাখা যায়নি। এ সুস্বাদু ফলটির প্রসার হয়েছে দুনিয়াজোড়া। বর্তমানে এটি আন্তর্জাতিক ফল।বিশ্বের এমন কোন দেশ নেই যেখানে আপেল খুঁজে পাওয়া যাবে না। যত ফল আছে সম্ভবত তার মধ্যে আপেলই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ফল । আপেলকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর কম করে হলেও কয়েক হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়। প্রতিবছর বিশ্বে সাড়ে ৫ থেকে ৬ কোটি টন আপেল উৎপন্ন হয়। এগুলোর আনুমানিক মূল্য ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলার। আপেলের আদি নিবাস মধ্য এশিয়া।

কিরগিজস্তান, তাজাকিস্তান ও কাজাকিস্তানে আপেলকে আলমা বলা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, আলমা থেকেই এ ফলটির নাম হয়েছে আপেল। এ কয়টি দেশের বন-জঙ্গলে এখনও হাজার হাজার আপেল গাছ দেখা যায়। এগুলো বন্য আপেল। চাষবাস ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে এমনিতেই হয়েছে। আপেল ইউরোপে ছড়িয়েছে বিশ্ববিজয়ী বীর মহামতি আলেকজান্ডের মাধ্যমে। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ সালে তিনি মধ্য এশিয়ার কয়েকটি দেশ জয় করে দেশে ফেরার সময় বেশ কিছু আপেল গাছ সঙ্গে করে নিয়ে আসেন।

সেগুলো রোপণ করেন নিজ দেশ গ্রিসে। আবহাওয়া এ ফলের উপযোগী হওয়ায় আপেল গাছের দ্রুত বিস্তার ঘটে গ্রিসে। এখান থেকেই এই ফলের চাষ দ্রুত ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। উত্তর আমেরিকায় আপেলের চাষ শুরু হয় ১৬০০ সালে। আমেরিকার ওয়াশিংটনে ১৯০০ সালের গোড়ার দিকে বাণিজ্যিকভাবে আপেল চাষ শুরু হয়। বর্তমানে বিশ্বে বছরে প্রায় ৬ কোটি টন আপেল উৎপন্ন হয়। । চীন আপেল উৎপাদনে প্রথম। বিশ্বের মোট আপেলের ৩৫ শতাংশ হয় চীনে। দেশটিতে বছরে আপেল উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ ৬ হাজার টন।

আপেল উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে আমেরিকা। বিশ্বের মোট আপেলের সাড়ে সাত শতাংশ জšে§ এ দেশে। প্রতিবছর আমেরিকায় উৎপাদিত আপেলের পরিমাণ প্রায় ৪২ লাখ ৫৪ হাজার টন। এছাড়া শীর্ষ আপল উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে রয়েছে তুরস্ক, ইরান, ইতালি, ফ্রান্স, পোল্যান্ড, রাশিয়া, জার্মানি ও ভারত। ফল হিসেবে আপেল অত্যন্ত সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, অ্যান আপেল এ ডে কিপস দ্য ডক্টর অ্যাওয়ে। অর্থাৎ প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে রোগব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ডাক্তারের প্রয়োজন হবে না।

 বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, আপেল স্তন ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত আপেল খেলে ওজন কমে। হƒদযন্ত্রের ঝুঁকি হ্রাস পায়। কলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আপেল বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। আপেলের পুষ্টিগুণ বেশ। প্রতি ১০০ গ্রাম আপেলে কার্বোহাইড্রেটের (যা শরীরে শক্তি জোগায়) পরিমাণ ১৩ দশমিক ৮১ গ্রাম। ফ্যাট বা চর্বির পরিমাণ শূন্য দশমিক ১৭ গ্রাম। প্রোটিন আছে শূন্য দশমিক ২৬ গ্রাম। এছাড়া আপেলে ভিটামিন এ, বি, সি, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, জিংকসহ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক উপকরণ আছে।

লিখেছেন : পবিত্র পাপী (আমার ব্লগ)