প্রস্তাবিত বাজেটে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) তহবিলের তিন হাজার কোটি টাকা থেকে ১৬০০ কোটি টাকা দিয়ে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল ও হাইটেক পার্ক স্থাপনে বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে প্রতিনিধিত্বকারী তিন সংগঠন রোববার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায়।

সংগঠনের নেতারা ই-কমার্স ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করারও সুপারিশ করেন।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মিডিয়া বাজারে সংবাদ সম্মেলনে বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় এ দাবি জানায়।

বিসিএস সভাপতি মোস্তফা জব্বার জানান, আইসিটি নীতিমালা ২০০৯ বাস্তবায়নে সরকারের বর্তমান কাজের গতি অত্যন্ত ধীর। এ গতিতে কাজ করলে যথাসময়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবে না সরকার।

তিনি বলেন, “আইসিটি খাতের উন্নয়নে সরকার বাজেটের আগে কিছু প্রস্তাব দিতে বলেছিল আমাদের। আমরা তা দিয়েছি। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে আমাদের প্রস্তাবগুলো আদৌ বিবেচনা করা হয়নি।”

হতাশা প্রকাশ করে জব্বার জানান, বাজেটে হাইটেক পার্ক, ল্যান্ড ডিজিটাইজেশন এবং দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের কথা বলা হয়েছে ঠিকই কিন্ত এসব খাতের উন্নয়নে বাজেটে তেমন কোনো বরাদ্দের উল্লেখ নেই। পিপিপি-তে শুধু অবকাঠামো না রেখে আইসিটি ও সংশ্লিষ্ট সেবাখাতকে অন্তর্ভূক্ত করার সুপারিশ করেন তিনি।

লিখিত বক্তব্যে বিসিএস সভাপতি জানান, আইসিটি নীতিমালা অনুযায়ী এ শিল্পের জন্য প্রায় ৭ শ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল। আইসিটি শিল্পের জন্য এডিপির ৫ শতাংশ এবং রাজস্ব খাতের ২ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও এবারের বাজেটে তা উল্লেখ করা হয়নি।

তিনি বলেন, “দেশের সামগ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্ব�পূর্ণ মাধ্যম ইন্টারনেট। এজন্যে ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইউথ এর মূল্য ১৮ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৭ হাজার টাকার নিচে আনা উচিত। একই সঙ্গে ই-কমার্স ও ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর ভ্যাট প্রত্যাহার করা উচিত।”

সরকার এবার আইসিটি খাতে ১১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে উল্লেখ করে জব্বার জানান, ২০১৪ সালের মধ্যে ই-গর্ভনেন্স বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারকে নির্দিষ্ট রোডম্যাপ ধরে এগুতে হবে।

আইএসপিএবি’র সভাপতি আখতারুজ্জামান মঞ্জু জানান, সরকার ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর এখনো ১৫ শতাংশ ভ্যাট ধরে রাখছে। আবার বলছে ৩ শ’ টাকায় ইন্টারনেট সেবা দিতে। এটা কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না।

ই-কমার্সের ওপর ভ্যাট আরোপের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এটি জন্মানোর আগেই একটা সন্তানকে হত্যা করার মত অবস্থা। গত ৩ জুন এটি চালু হয়েছে। ৪ টি ওয়েব সাইট ব্যবহার করে ই-কমার্স হচ্ছে। এরই মধ্যে এই সেবার ওপর সরকার ভ্যাট বসিয়েছে।”

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার ও ই-কমার্সের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।

আপাতদৃষ্টিতে এ বাজেট আইসিটির জন্য উৎসাহজনক নয় বলে মত দেন বেসিস সভাপতি মাহবুব জামান।

ঢাকায় কয়েকটি সফটওয়্যার পার্ক করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “মাহাখালীতে আইটি ভিলেজের জায়গা আছে। কিন্তু এটাকে কাজে লাগানো হচ্ছে না। কারওয়ান বাজারে জনতা টাওয়ার রয়েছে। মিরপুরে আইটি পার্ক করা যেতে পারে।”

দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় কম্পিউটার ও ল্যাব স্থাপন চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বলে জানান মাহ্বুব।

ই-কমার্সের ওপর ভ্যাট আরোপকে হাস্যকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এখানো জার্মানিতে ই-টিকিট করলে ১৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়াতে একই রকম অবস্থা। সেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে আগ্রহী সরকার ই-কমার্সের ওপর ভ্যাট আরোপ করছে।”

সংবাদ সম্মেলনে তিন সংগঠনের সভাপতি ছাড়াও তিন সহসভাপতি এবং বিসিএস মহাসচিব মজিবুর রহমান স্বপন, বেসিস মহাসচিব ফোরকান বিন কাসেম, আইএসপিএবি’র মহাসচিব এম এ হাকিম উপস্থিত ছিলেন।