ঘরের হাঁড়ি-পাতিল থেকে শুরু করে সব আসবাব বিক্রি করা হয়ে গেছে। সেই টাকায় এত দিন নেশা করেছেন। এখন বিক্রির আর কিছু নেই। কিন্তু নেশার খরচ জোগাতে টাকা চাই। শেষে নজর পড়েছে নিজের সন্তানের ওপর। চার সন্তানের মধ্যে ছোটটিকে টাকার বিনিময়ে অন্যের হাতে তুলে দিতে যাচ্ছেন এক বাবা। এরই মধ্যে ৫০০ টাকা অগ্রিম নিয়েছেন। আজ শনিবার আরও এক হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে শিশুটিকে এক নারীর হাতে তুলে দেবেন ওই বাবা। পাঁচ মাস বয়সী শিশুটির নাম রাব্বি। বাবা মনির হোসেনের (২৭) বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের চণ্ডীবের দক্ষিণপাড়ায়। এদিকে নাড়িছেঁড়া ধনকে অন্যের হাতে তুলে দিতে হবে ভেবে মা সাবিনার (২২) কান্না থামছে না। গতকাল শুক্রবার সকালে কথা হয় সাবিনার সঙ্গে। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আমার রাব্বিরে কাইল দিয়া দিতে হইব।’ কেন দিয়ে দিতে হবে জানতে চাইলে সাবিনা বলেন, ‘হে (মনির) নেশা করে। সব বিক্রি করছে। আমার কাছে টেহা চায়। দিতে পারি নাই। এই কারণে আমারে মারছে। পরে এক মহিলার কাছ থাইক্কা টেহা লইয়া পোলাডারে দিয়া দিত চাইতাছে।’

মনিরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর এক বন্ধুর মাধ্যমে কথা হয় মুঠোফোনে। নেশা করার কথা অকপটে স্বীকার করে মনির বলেন, ‘অভাবের ঘর। ছয়জনের খাওন খরচ জোগান কষ্ট। এই কারণে পোলাডারে দিয়া দিতে বাধ্য হইতাছি।’ সাবিনা ও মনিরের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাবিনার বাড়ি ভৈরবের পাশে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার গৌরীপুর গ্রামে। বাবা আলকাছ মিয়া। মনির চণ্ডীবের দক্ষিণপাড়ার জব্বার মিয়ার ছেলে। নয় বছর আগে বিয়ে হয় তাঁদের। বিয়ের আগে থেকেই মাদক সেবন করতেন মনির। বিয়ের সময় ভৈরব বাজারে তাঁর একটি বালতি তৈরির কারখানা ছিল। নেশার খপ্পরে পড়ে কারখানাটি হাতছাড়া হয়। এরপর নানা কাজ করলেও সংসারে সচ্ছলতা আসেনি আর। প্রথম সন্তান সাব্বিরকে স্কুলে ভর্তি করা হয়। কিন্তু মনিরের সহযোগিতা না থাকায় সেই ছেলের স্কুলে যাওয়াও বন্ধ হয়ে যায়। রাব্বিকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে মনিরের মামি সাইকুল বেগম বলেন, ‘আগে মনির সোনার ছেলে আছিল। এখন পুরাপুরি অস্বাভাবিক। সন্তানদের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে দেখি নাই।

এখন হেরোইন খাওনের লাইগ্গা নিজের পোলারে দিয়া দিতাছে।’ মর্জিনা বেগম (৪৫) নামের এক নারীর হাতে রাব্বিকে তুলে দেওয়া হবে। তাঁর বাড়ি জামালপুরের বকশীগঞ্জে। ২৫ বছর ধরে তিনি ভৈরবের ডিপোঘাট এলাকায় আছেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি, রাব্বিরে হে (মনির) কারও না কারও কাছে দিবই। দিবই যহন, তহন আমি টাকা দিয়া নিতাছি।’ এ জন্য তিনি মনিরকে অগ্রিম ৫০০ টাকা দিয়েছেন। বাকি দেড় হাজার টাকা আজ শনিবার দেবেন। তারপর রাব্বিকে নিয়ে আসবেন। মর্জিনা জানান, তাঁর নিজের তিন সন্তান আছে। এমন ঘটনা শুনলে তাঁর মায়া লাগে। তাই শিশুটিকে তিনি নিচ্ছেন। ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহান কবির বলেন, ‘সন্তানকে এভাবে ব্যবহারের কোনো অধিকার কোনো বাবার নেই। এমনটি হলে অবশ্যই অন্যায় হচ্ছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তকে প্রয়োজনে আইনের আওতায় আনা হবে।’ সুত্রঃ প্রথম আলো

লিখেছেনঃ সুমন মোল্লা, ভৈরব