(সকালবেলা,  একটু সংযুক্ত পরিবারের ঘর)

ঠাকুরমা: উঠরে ভাইয়েরা, দাদুরা! উইঠ্যা পড়। রইদ উঠছে, মেলা বেলা হইছে। অ ধন! উইঠ্যা পড়, হাত-মুখ ধইয়া পড়তে বও। “সকালে শয়ন করি, সকালে উঠিবে, সুস্থ সুখী ধনী-জ্ঞানী তবে তো হইবে।”

নাতি-১: ঠাম্মা, সাত-সক্কালে খামাখা প্যাচাল পাইড়ো না।
ঠাকুরমা: কি কইলি? আমি প্যাচাল পাড়ি? হাচই?‍

নাতি-১: হ’, কইলাম। হাচা কথা।
ঠাকুরমা: আরে “রাত্তিখানি উনিপুক, তার নাই নাকমুখ”! হে আইছে আমারে

শিখাইতে? আরে আউয়াখানা, আরে প্যাট ব্যাক্কল! আমার তিনকাল গিয়া এককালে ঠেকছে আর এখন তরার কাছ থেইক্যা শিখন লাগবো?

হাইগ্যা হচতে শিকছস্ নি? এখনও সর্দি হইলে নাক দিয়া তর পাকনা লডা বাইরয়, ঠিকমত সান করস্ না। তুই আর রাও করিস না! এমুন হারগাজা!

নাতি-২: দিলা ত ঘুমডা ভাঙাইয়া? সকাল হইছে কি না, শুরু করছ এক আজইরা কাওসালি!

ঠাকুরমা: এইতা কিতা কস্্? তর বাপের মায়েরে? দেখ গো, বৌমা, তুমার ছ্যাড়াডি আমারে যেতা মলয় কইতে আছে।

ছেলে বৌ: কি হইছে মা? ক্যাডা আপ্নারে কি কইছে?

ঠাকুরমা: আরে! কি না কইতে বাকি রাখছে? এমুন বেত্তরিবৎ পুলাপুরি, আমারে কয় আমি নাকি খামোখা প্যাচ্যাল পাড়ি। দুষের মইধ্যে আমি কইছিলাম যে মেলা বেলা হইছে। দাদুভায়েরা উইঠ্যা পড়, পড়তে বস। মা-খুড়িরা আজাইর হইলে দুধমুড়িকলা খাইতে দিব হনে।

ছেলে-বৌ: মা, আপনেও একটু চুপ করেন। আপনের নাতিরা কাইল একটু রাইত জাইগ্যা পড়ছে, হের লেইগ্যা আইজ উঠতে দেরি হইছে। আপনেও বেশি পিডির-পিডির করেন আজকাইল।

ঠাকুরমা: ক্যারে? খারাপডা কি কইছ্্হি? এখন কালীপূজা হইয়া গেছে, পরীক্ষার তিন মাস বাকি মাত্র। এখন থেইক্যা ছনবন না কইরা মন দিয়া না পড়লে শ্যাষে কি করব? পরীক্ষার দিন কাইন্দা কূল পাইবো না। এইডারে আমরার দ্যাশে কয়–  “মুততে ছাগী ধরে না, দৌড়াইয়া লাগাল পায় না।”

(দুই নাতি লাফিয়ে উঠে বসেছে)

নাতি-২: ঠাম্মা এইডা কী কইল্যা, বাক্কা দেহি। একটু বুঝাইয়া কও।

ঠাকুরমা: বুঝনের আর কি আছে, ছাগীরে ধরতে হইলে হের মুতনের সময় ধরতে হইব। না হইলে পরে দৌড়াইয়া ও পারতা না।

নাতি-১: এইডারে ইংরাজিতে কয় “এ স্টিচ ইন টাইম, সেভস্ নাইন”।

ছেলে-বৌ: দ্যাখলাইন ত’ মা, আপনার নাতিরা পড়াশুনা ঠিকই করতে আছে। আপনে মাগনা চিন্তা কইরেন না। রাইত জাইগ্যা পড়ে, মাস্টাররাও ভালাই কয়।

ঠাকুরমা: হ’ ভালা? ভালা না পাদের ছালা। রাত জাইগ্যা পড়ে! আরে থও ফালাইয়া, বৌমা! সারাদিন পড়ার নামগন্ধ নাই, রাত্রে একটা বই লইয়া বিছানায় ল্যাপের তলে হামাইয়া যায় আর তুমি ভাব পড়ে! আরে নকল মলাট দিয়া লুকাইয়া গপ্পের বই পড়ে।

ল্যাদাপড়া? এই তানের নাম ল্যাদাপড়া!

ঝাঁডা মারি এমুন ল্যাদাপড়ার মাথায়। আমি লেহাপড়া করসি না বটে, কিন্তু লেহাপড়ার প্রণালী ঠিকই জানি। এরা খালি কুআরা করে।

নাতি-১: আর তুমি কি করতাছ?

ঠাকুরমা: রইচ্চে রে! আমার মুখে মুখে জেরা করস? হেইদিন হইলে বাইরাইয়া চাপার দাঁত ফালাইয়া দিতাম নে। আইজ আমার এমুন হাছুনবাইড়া কপাল!

(ছেলে-বৌ বেগতিক দেখে নিজের স্বামীকে নিয়ে এসেছে।)

ছেলে: সকাল থেইক্যা মন দিয়া পত্রিকাডা পইড়া এক কাপ চা খাইয়া বাজারে যাইয়াম ভাবছিলাম, কিন্তু তুমরা এমুন হুমালি-দুমালি শুরু করছ যে চিৎকারের চুডে কাক-চিল বইতে পারতাছে না। কি হইছে, হইছে ডা কি?

ঠাকুরমা: তরে কুনদিন পড়াশুনার লেইগ্যা কওনের লাগজে না। নিজের থেইক্যাই পড়তে বইতি। আর আইজ তর ছ্যাড়াডি সময়মত পড়তে বয় না, কইলে তর্ক করে। সামনে পরীক্ষা। হেইদিন ত’ প্রশ্নপত্র দেইখ্যা পরীক্ষার খাতায় হাইগ্যা ছ্যাড়াভেরা করব।

ছেলে: কেডা আমার মা’র মুখে মুখে জবাব দিছে?

নাতি-২: আমি না, নারুদা।

ঠাকুরমা: নারুদা! নারু তর আপন দাদা না, বড়দা কইতে পারস না! হে কি পাড়ার দাদা, যে নাম ধইরা ডাকস্্? তবে ত’ কাইল থেইক্যা তর বাপ-মারে বাবা-মা না কইয়া নাম ধইরা রঞ্জন-বাবা আর রত্না-মা কইয়া ডাকলেই হয়।

ছেলে: উফ্ মা! সকাল থেইক্যা আকামের কথা না কইয়া কামের কথা কন। আর তরা বড় বেশি উছুইল্লা উঠছস্? সকাল-সন্ধ্যা ল্যাহা নাই, পড়া নাই, খালি বান্দরের লাহান উবে ফাল পিডন্? প্যাডের মইধ্যে পাড়া দিয়া প্যাডা গাইল্লালবাম, উষ্ঠাইয়া ফুটবল খেলবাম। আরেকবার যদি ঠাম্মার থেইক্যা কোন নালিশ শুনি তাইলে বাইড়াইয়া পাছার ছাল তুইল্লালবাম। যা পড়তে ব’।

লিখেছেন,  রঞ্জন রায়