imageঘটনার সূত্রপাত আজ থেকে প্রায় পাঁচবছর আগে। বৃটিশ আলকচিত্রি ডেভিড স্লেটার ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি তে বিলুপ্তপ্রায় মেকাঊ প্রজাতির বানরের ছবি তুলাতে ব্যস্ত। আলোকচিত্রি যখন তাঁর ক্যামেরাখানি কিছু সময়ের জন্য রেখে যায়, “নারটু” নামক ম্যাকাঊ বানর ক্যামেরা নিয়ে হেসে খেলে উঠীয়ে নেয় বিশ্বখ্যাত এই সেলফি’টী। বিশ্বময় দ্রুত ছড়িয়ে যেতে থাকে “বান্দর সেলফি”। “ভাইরাল” এ ছবিটী আয় করতে থাকে অর্থকড়ি। কিন্তু এর কোন অংশই মিলে না, আলকচিত্রি ডেভিড এর কপালে। দাবী তুলেন ডেভিড সামাজিক এবং সংবাদ মাধ্যমে বিশ্বখ্যাত ছবিটির কপিস্বত্ত্ব নিজের বলে, সাফ জানিয়ে দেয় ঊইকিমিডিয়া সংবাদ সংস্থা কে তাঁর (বানর সেলফি) ছবি প্রত্যাহারে, ঊইকিমিডিয়াও নাছোরবান্দা ডেভিড কে পরিস্কার জানায় –যেহেতু ছবিটি মনুষ্য ধারনকৃত নয় সেহেতু এ বানর সেলফি জনগন সম্পত্তি (পাবলিক ডোমেইন) অন্তর্ভুক্ত। তাই উক্ত ছবি থেকে প্রাপ্ত কোন প্রকার রয়ালিটী ডেভিড এর প্রাপ্য নয়। আর তখনি শুরু হয়ে যায় আন্তর্জাতিক কপিস্বত্ত্ব আইনি বিতর্ক।

যারা যুক্ত্ররাষ্ট্রে কুকুর বিড়াল বা কোন প্রানী পোষেন তারা কিছুটা হলেও যুক্তরাস্ট্র ভিত্তিক PETA বা প্রানী অধিকার সংগঠন সম্বন্ধে জানেন। সংগঠনটির শৈশব থেকেই আমি সংগঠনটির সাথে পরিচিত। ইদানিং সাগর তলার প্রানী থেকে শুরু করে ভীনগ্রহের প্রানীদের(?) অধিকার আদায়ে দলটি এখন আন্তঃর্জাতিক পরিমন্ডলেও বেশ সোচ্চার।

এরই ক্রমধারতে গতবছর নারটূ বান্দরের প্রানী অধিকার( এক্ষেত্রে বানরের কপিস্বত্ত্ব)আদায়ের লক্ষ্যে বানরের পক্ষ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টে মামলা ঠুকে এই প্রানী অধিকার সংগঠনটি।

দীর্ঘ একবছর আইনী লড়াইয়ের পর, ইউ,এস ফেডারেল বিচারক উইলিয়াম ওঋক গত বুধবার এই মর্মে বান্দরের বিপক্ষে রায় ঘোষণা করেন যে-“এ বিষয়ে (প্রানী কপিস্বত্ত্ব) আইনী সিদ্ধান্ত দেয়ার উপযুক্ত এখতিয়ার প্রাপ্ত ব্যক্তি আমি নই, ব্যাপারটি যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস(আইন সভা) এবং খোদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এর এখতিয়ার ভুক্ত। যদি তাঁরা মনে করেন এবং সংবিধান অনুযায়ী কপিস্বত্ত্ব আইন মানুষ ব্যতিরকে জন্তু জানোয়ার কূলেও বর্ধিতব্য হয় তবে কংগ্রেস এবং প্রেসিডেন্টের তা আইনে প্রনোয়ন করতে কোন বাধা থাকবে না।

২০১৪ সালে মার্কিন কপিরাইট অফিস উল্লখে করে “ যে কোন শিল্প কর্ম যা জীবজন্তু এবং প্রকৃতি দ্বারা সৃজিত এ সমস্ত শিল্পকর্ম কপিরাইট আইন বহির্ভুত” এদিকে প্রানী অধিকার সংগঠন (PETA) এইমর্মে আইনী লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আভাস দিয়ে বলছে -কপিরাইট আইনে একটি ব্যপারে পরিস্কার, যে ক্যামেরার মালিক ছবির কপি স্বত্ত্বাধীকারী নন, বরং যে ছবি তুলে সেই ছবিস্রষ্টা এবং একমাত্র সৃজনশীল কাজের স্বত্ত্বাধীকারী।

ব্যাক্তিগত ভাবে আমি একটি প্রবাদে বিশ্বাসী ছিলাম সেটা হলো-
Monkey See Monkey Do (বানর দেখে, বানর করে) এ ঘটনার পর ভাবছি, Monkey See Monkey Sue (বানর দেখে, বানর মামলাও লড়ে) ।

সৃজনশীল কাজে অনুরাগী মানুষ আমি। নিজেও ক্যামেরা প্রেমী। নিজের সৃজনশীল কাজ অন্যনামে দেদারছে চলুক এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। এতে প্রকৃত সৃষ্টিরই শুধু অপব্যবহার হয়না, সাথে নির্মম অপমৃত্যু হয় একজন মেধাবী স্রষ্টারও।