একসময়ের (প্রাচীন ও মধ্যযুগ) বিখ্যাত জনপদ এগারসিন্দুরের নামাকণের সঠক উৎস নির্ণয় করা দুরুহ। উদাহরণস্বরুপঃ প্রাকজ্যোতিষপুর রাজ্যাধীন এগারসিন্দুর এলাকার আজহাবা নামে একজন কোচ সামন্তরাজ রাজত্ব করতেন।সে সময়ে পাশবর্তী বটং নামে অপর কোচ রাজার সাথে আজহাবার যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে আজ-হাবা ১১ টি ও বটং রাজ ৯ টি শুন্ডধর (হাতি) ব্যবহার করেছিলেন। যুদ্ধে আজহাবার জয় হয়। এগার শুন্ডধরধারী রাজা হিসেবে আজহাবার রাজ্য ‘এগার শুন্ডধর,উচ্চারন বিবর্তনে এগার শুন্ডর থেকে এগারসিন্দুর হয়েছে।

কারো মতে এই এলাকায় প্রথমবারের মত ইসলাম প্রচারের জন্যে মোট ১২ জন আউলিয়া সিলেট থেকে এসেছিলেন। কিন্তু এ স্থানে ধর্ম প্রচারের জন্য এগারজনের স্থান হওয়ায় অন্যজন সঙ্গীদের ছেড়ে উত্তর দিকে চলে যান এবং যাওয়ার আগে বলে যান “ইয়ার সে দূর” অর্থাৎ বন্ধু বান্ধব থেকে দুরে। এ থেকে ইয়ার সে দূর শব্দটি নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগারসিন্দুরে রুপলাভ করেছে।

পরমহংসীয় বৈষ্ণব মতে, এগার ইন্দ্রীউ থেকে দূরে থাকার ব্রত হিসাবে স্থানীয় পরমহংসী বৈষ্ণব শাখার নরনারীরা সিন্দুরের ১১ টি ফোটার তিলক ব্যবহার করতেন। অনেকের মত এগার তিলক ধারী বৈষ্ণব্দের প্রাধান্য থেকে স্থানটি এগার সিন্দুরিয়া, উচ্চারনের বিবর্তনে এগারসিন্দুর হয়েছে।

এক সময়ে বর্তমান এগারসিন্দুর এলাকায় প্রচুর আম্র বৃক্ষের বন ছিল এবং এ বনে বিভিন্ন প্রকার আম্র ফলের মধ্যে ‘সিন্দুরিয়া’ জাতের-ই এগার প্রকার আম এখানে পাওয়া যেত। কারো কারো মতে, এগারজাতের সিন্দুরিয়া আমের ফলন থেকে এগারসিন্ধুর/এগারসিন্দুর নাম হয়েছে। অপর মতে, স্থানটিতে অসংখ্য সিন্দুর বর্ণের অগুরু বৃক্ষের বন ছিল। এখান থেকে প্রচুর অগুরু সিন্দুর সংগৃহীত হয়ে দেশ বিদেশে চালান হত বলে স্থানটির নাম “অগুরু সিন্দুর” থেকে এগারসিন্দুর হয়েছে।

কেহ কেহ মনে করেন প্রাচীন প্রাকযোতিষ রাজত্বকালে বর্তমান ব্রক্ষপুত্র থেকে পূর্বে প্রাকযোতিষপুর পর্যন্ত ১১ টি ক্ষুদ্র সামন্ত রাজ্য ছিল। এর মধ্যে ব্রক্ষপুত্রের মোহনার রাজ্যটিই ছিল শৌর্য, বীর্য ও ঐশ্বর্যে সেরা। ফলে এর রাজধানীকে এগার টি রাজ্যের টিপ অর্থাৎ কপালের সিন্দুর হিসেবে এগারসিন্দুর নামকরণ করা হয়েছিল।

খিজিরপুরের ঈশা খাঁ ১৫৭৬ খ্রীষতাব্দে মোগল সেনাপতি খান জাহান আলীর সঙ্গে বর্তমান অষ্টগ্রাম থানার কাস্তল নামক স্থানে প্রবল যুদ্ধের পর পরাজিত হয়ে তৎকালীন অরন্যসংকুল ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে এসে এক কামেল পীরের সাক্ষাত পান। বিস্ময়বিষ্ট হয়ে এমনি নির্জন স্থানে পীর কে দেখে পীরের কাছে স্থান টির নাম জানতে চাইলে পীর হিয়ালীপূর্ণভাবে জবাব দেন ‘ইগার্ছে দূর’। অর্থাৎ স্থান টি ইগার রিপু থেকে দূর বা ইন্দ্রিয় থেকে মুক্ত। কিন্তু ঈশা খাঁ ফকিরের এই হিয়ালীপানা বুঝতে না পেরে স্থান টির নাম-ই ইগার্ছে দূর মনে করেন।পরবর্তীতে উচ্চারন বিবর্তনে ইগার্ছে দূর থেকে এগারসিন্দুরে রুপান্তরিত হয়।

অন্যমতে বর্তমান এগারসিন্দুর এলাকাটি ব্রক্ষপুত্র, বানার, লাক্ষা, শংখ, বংশাই ইত্যাদি এগারটি মোহনায় অবষ্টিত একটি গুরুত্বপুর্ণ নৌবানিজ্য বন্দর হিসেবে খ্যত ছিল। এই এগারটি নদীর সংগম ও বিশেষ গুরুত্বপুর্ণ স্থান হিসেবে এর নামকরন করা হয়েছিল নদীর-এগার এবং স্থানের বৈশিষ্টপূর্নের প্রাচীনকালে জন্যে ‘সিন্দুর’-এ দুটি শব্দ মিলিয়ে এগারসিন্দুর। এই সকল মতামতের মধ্যে কোন টি গ্রহন যোগ্যতা বিচার করা আজ আর সম্ভব নয় বলে মনে হয়।