ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে যখন থানা প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন কেবল বাজিতপুর ও নিকলীর নাম পাওয়া যায়। জঙ্গলবাড়ী ও হোসেনপুর তখন হয়তো আগের শ্রী হারিয়ে ফেলেছিল। এর মূল কারন খুব সম্ভব ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পরিবর্তন। অন্যদিকে মেঘনা এবং ধনু/ঘোড়াউত্রা ছিল অনেক সজীব। একই কথা বলা চলে এগারসিন্দুর সম্পর্কে।

কিশোরগঞ্জের আগে হোসেনপুর চৌকী বা মুন্সেফী আদালত স্থাপিত হলেও কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল,তা অনেক চেষ্টা করেও জানা যায়নি। শুধু জানা যায় ১৮৯১ খ্রীষ্টাব্দে হোসেনপুরের মুন্সেফী আদালত কিশোরগঞ্জে নিয়ে আসা হয়। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পনীর অধীনে ময়মনসিংহ জেলার কার্যকাল শুরুর পর্যায়ে কোম্পানীর বেগুনবাড়ীর কুঠিতে এবং আবশ্যক মত অন্যান্য স্থানে কাচারীর কাজ চলতো। কিন্তু বেগুনবাড়ীর কুঠি ব্রহ্মপুত্রের প্রবল প্রবাহে নিমজ্জিত হলেও কাকডলিতে কাছারী প্রস্তুতের জন্য তৎকালীন কালেক্টর ষ্টিফেন বেয়ার্ড (১৭৯০-১৭৯৩) (Stephen Bayard) বোর্ড অব রেভিনিউ’র নিকট প্রস্তাব দেন।

কিছুদিন পর কাকডলিও ব্রহ্মপুত্রের প্রবল প্রবাহের নিকট নিরাপদ নহে বিবেচনা করে হোসেনপুরের দক্ষিনে কাওনা নদীর তীরে, বর্তমান পাকুন্দিয়া থানার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের দ্গদ্গায় জেলা শহর স্থাপনের জন্য প্রস্তাব দেন (১২-১-১৭৯১)।  কিন্তু সে সময়ের ময়মনসিংহ ও আলাপসিংহের আপত্তির মুখে তৎকালীন কালেক্টর “সেহরা” গ্রামে জেলা শহর স্থাপনের জন্য পুনরায় প্রস্তাব প্রেরন করেন। একই ভাবে এই এলাকা গুরুত্ব হারিয়ে ফেললেও এখনো দ্গদ্গা গ্রামের সাধারন মানুষেরা এলাকার নাম দ্গদ্গা জেলা বলে থাকেন ।

নিকলী ও বাজিতপুর কিশোরগঞ্জের প্রাচীনতম থানা, প্রতিষ্ঠাকাল ১৫-০৮-১৮২৩ ও ১৮৪৫ খ্রীষ্টাব্দে যখন জামালপুর মহকুমা স্থাপিত হয় তখনো কিশোরগঞ্জ এলাকায় উক্ত দু’টি থানায় ছিল। ১৮৬০ খ্রীষ্টাব্দে যখন কিশোরগঞ্জ মহকুমা স্থাপিত হল তখনই কেবল কিশোরগঞ্জ থানার নাম জানা যায়। অথচ কিশোরগঞ্জ সাবেক মহকুমার এক প্রান্তে অবস্থিত । সেদিক থেকে নিকলী ছিল মাঝামাঝি পর্যায়ে এবং নিকলীকে কেন্দ্র করে নিকলী মহকুমা স্থাপনের প্রস্থাব ও ছিল । কিন্তু তা না করে কিশোরগঞ্জকে কেন মহকুমার প্রধান কার্যালয় করা হল তা আজও স্পস্ট করে জানা সম্ভব হল না ।

ধারনা করা হয় ১৮৪৫ খ্রীষ্টাব্দের পর ও ১৮৬০ খ্রীষ্টাব্দের পূর্বে কিশোরগঞ্জ অত্যন্ত আকর্ষনীয় ও গুরুত্বপূর্ন স্থান হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠে। কারন হিসাবে বিখ্যাত প্রামানিকদের প্রভাবের কথা বলা হয়ে থাকে। ব্রজকিশোর প্রামানিক ১৭৭০ খ্রীষ্টাব্দে হিন্দু মন্দির নির্মান করেন। প্রমানিক পরিবারের একুশ রত্ন মন্দির নির্মান ও লক্ষীনারায়ন বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা একদিকে যেমন বিপুল ধর্মীয় প্রভাব বিস্তার করেছিল , অন্যদিকে ব্জ্রকিশোর প্রামানিক মসলিন ব্যাবসায় বিপুল উন্নতি করায় ইষ্ট ইন্ডিয়া কম্পানীর কর্তৃপক্ষের সাথে খুব ঘনিষ্ট হবার সুযোগ পান। তবে ব্রজকিশোর প্রামানিকের কথা গেজেটিয়ার সমুহে উল্লেখ থাকলেও পরবর্তীতে যে সকল দলিল পত্র পাওয়া যায় এবং জনশ্রুতি যা রয়েছে সেখানে ব্রজ কিশোর নয়, নন্দকিশোর এর কথাই বলা হয়েছে । (অসমাপ্ত চলবে )