ভাটির শার্দুল হিসাবে পরিচিত কিশোরগঞ্জ-৪ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আব্দুল হামিদ এডভোকেট জাতীয় সংসদের স্পিকার। বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ আবদুল হামিদ এডভোকেট সপ্তমবারের মতো জাতীয় সংসদের এমপি নির্বাচিত হন। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে জড়িত। তাঁর জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন আওয়ামী রাজনীতির অঙ্গনে। তিনি আন্দোলন-সংগ্রামসহ দলের সংকটময় সময়ে নেতাকর্মীদের পাশে রয়েছেন।দেশের ১০ টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে ৭ বার একই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয় ।

বর্তমানে তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।   ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্ম। তাঁর বাবার নাম মরহুম হাজি মো. তায়েব উদ্দিন এবং মাতার নাম মরহুমা তমিজা খাতুন। ব্যক্তিগত জীবনে আবদুল হামিদ এডভোকেট বিবাহিত। মেট্রিকুলেশন ১৯৬১ সালে নিকলী জিঃ মিঃ উচ্চ বিদ্যালয় ।  কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ থেকে আইএ ও বিএ ডিগ্রি এবং ঢাকার সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি আইন পেশায় কিশোরগঞ্জ বারে যোগ দেন। ১৯৯০-৯৬ সময়কাল পর্যন্ত পাঁচবার কিশোরগঞ্জ জেলা বার সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

জনাব হামিদের রাজনৈতিক জীবনের শুরু ১৯৫৯ সালে, তৎকালীন ছাত্রলীগে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে। ১৯৬১ সালে কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। ফলে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাঁকে কারারুদ্ধ করে। ১৯৬৩ সালে তিনি কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৫ সালে একই কলেজের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে কিশোরগঞ্জ সাবডিভিশনের ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং ১৯৬৬-৬৭ সালে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

আবদুল হামিদ ১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ-১৮ থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং ভারতের মেঘালয় রিক্রুটিং ক্যাম্পে এবং তৎকালীন সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (মুজিব বাহিনী) সাবসেক্টরের কমান্ডার পদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন।

১৯৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সাংসদ নির্বাচিত হন। জনাব হামিদ সপ্তম জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ১৩ জুলাই, ১৯৯৬ থেকে ১০ জুলাই, ২০০১ পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ১১ জুলাই, ২০০১ থেকে ২৮ অক্টোবর, ২০০১ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। অষ্টম জাতীয় সংসদে তিনি ২০০১ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২৭ অক্টোবর ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি সর্বসম্মতিক্রমে দ্বিতীয় বারের মতো স্পিকার নির্বাচিত হন। তিনি ২০১৩ সালের ‌১৪ মার্চ বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। মোঃ আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

জনাব হামিদ পৃথিবীর অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। সাংসদ ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কানাডা, ভারত, জিব্রাল্টার, বার্বাডোজ, মিসর, সিঙ্গাপুর, দুবাই, আবুধাবিসহ বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন। আন্তপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট কমিটি এবং কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) এক্সিকিউটিভ কমিটিতে একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।

আবদুল হামিদ তাঁর নির্বাচনী এলাকায় অনেক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমী, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, কিশোরগঞ্জ রাইফেলস ক্লাব এবং কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্যসহ বহু সংগঠনের সঙ্গে জড়িত।রাজনৈতিক অঙ্গনে আন্তরিক ও নিবেদিত প্রান এডভোকেট আব্দুল হামিদ তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ থেকে তার রাজনৈতিক আদর্শের সংগ্রাম অব্যাহত।

পৃষ্ঠপোষকঃ মিঠামইন কলেজ, ইটনা কলেজ,  মিঠামইন হাই স্কুল, ইটনা গার্লস হাই স্কুল,  তমিজা খাতুন গালস হাই স্কুল, মিঠামইন, আলংজুরি জুনিয়র হাই স্কুল, আবদুল্লাহপুর জুনিয়র হাই স্কুল, অষ্ঠগ্রাম,  আবদুল ওয়াহেদ জুনিয়র হাই স্কুল, পূর্ব অষ্ঠগ্রাম, কিশোরগঞ্জ গালস হাই স্কুল।দাম্পত্য জীবনে স্ত্রী, মোছাঃ রাশেদা খানম যিনি কিশোরগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী এবং তিন ছেলে এবং এক মেয়ে সন্তানের জনক।