দক্ষিণ কোরিয়ার পর জাপানও জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছে। গতকাল এশিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী জাপান ১-০ গোলে হারিয়েছে অদম্য সিংহ খ্যাত ক্যামেরুনকে। ফলে এশিয়াকে আরো একটি জয় এনে দিল জাপান। ফলে এশিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া আর জাপান এশিয়ার মুখ উজ্জ্বল করেছে প্রথম ম্যাচে জয়ী হয়ে। মাঠে নামার আগে জাপান থেকে শক্তি, অভিজ্ঞতা আর পরিসংখ্যানে এগিয়ে ছিল ক্যামেরুন। কিন্তু মাঠে ছিল ভিন্ন চিত্র। ক্যামেরুন পাত্তা পায়নি জাপানের কাছে। খেলার ৪০ মিনিটে জাপান একটি গোল করে এগিয়ে যায় ১-০ গোলে। বিরতীর আগে ১-০ গোলে এগিয়ে থাকা জাপান দ্বিতীয়ার্ধে গোল করতে না পারলেও নিজেদের গোল পোস্ট রক্ষা করে জিতেছে ১-০ গোলে। ক্যামেরুন বার বার চেষ্টা করেও গোল পরিশোধ করতে পারেনি। ফলে পরাজয়ের গ্লানি নিয়েই মাঠ ছেড়েছে ক্যামেরুন।
খেলার ৪০ মিনিটে একটি সফল আক্রমণ চালায় জাপান। এই আক্রমণ থেকেই জাপান সফল হয়। ডি-বক্সের ভিতর থেকে ঠান্ডা মাথায় কেইসুকে হোন্ডা দলকে গোল উপহার দেয়। প্রথমার্ধে জাপানে মাঠে আধিপত্য বজায় রেখে গোল পেলেও বিরতীর পর জাপান গোল করার পরিবর্তে গোল ধরে রাখায় বেশি ব্যস্ত ছিল। এই সুযোগে বেশ কয়েকটি অপরিকল্পিত আক্রমণ চালায় ক্যামেরুন। কিন্তু দলটি সফল হতে পারেনি। তবে খেলার ৮৫ মিনিটে সহজ সুযোগ হারায় ক্যামেরুন। স্টেফানে এমরিয়ার দূরপাল্লার শট সবাইকে ফাঁকি দিয়ে এগিয়ে গেলেও ক্রস করে লেগে ফিরে আসে। ফলে ক্যামেরুন আর সফল হতে পারেনি। খেলা শেষের ১৫ মিনিটে ক্যামেরুন যতটাই মরিয়া ছিল গোলের জন্য। জাপান ততটাই রক্ষণাত্মক ছিল জয় ধরে রাখার জন্য। সফল হয়েছে এশিয়ার জাপানই। আফ্রিকার অদম্য সিংহদের মাথা নিচু করেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে। বিরতীর আগে জাপান ৪টি আক্রমণ করলেও ক্যামেরুন মাত্র একবারই আক্রমণ চালিয়েছে জাপান শিবিরে। বিরতীর পর জাপানের চেয়ে ক্যামেরুন আক্রমণ চালালেও সফল হতে পারেনি। বরং সবদিকে ক্যামেরুন থেকে পিছনে থেকেও বিজয়ের হাসি হেসেছে জাপান। ফলে একারের বিশ্বকাপে এশিয়ার আধিপত্য দিয়েই যাত্রা শুরু হয়েছে। গতকাল জাপানের বিরুদ্ধে ক্যামেরুনের খেলায় কোন ছন্দ ছিল না। আগাছালো আক্রমণ দলকে সফল করতে পারেনি। ফলে এশিয়ার কাছে আরো একটি হার দিয়ে শুরু করলো আফ্রিকা।
ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধেই গোল পেয়েছে জাপান। খেলার ৪০ মিনিটে গোল করে জাপানকে এগিয়ে দেয় কেইসুকে হোন্ডা। বিরতির আগ পর্যন্ত ক্যামেরুন কোন গোল করতে না পারলে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকেই মাঠ ছাড়ে এশিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী জাপান। এর আগে দক্ষিণ কোরিয়া প্রথম ম্যাচে জয় পেয়ে এশিয়ার পক্ষে শুভ সূচনা করে। এশিয়ার আরেক প্রতিনিধিত্বকারী জাপানও চলছে একই পথে। বিরতির আগ পর্যন্ত জাপান এগিয়ে ছিল ১-০ গোলে। খেলা শুরুর পর থেকেই ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে একের পর এক আক্রমণ চালায় জাপান। বিরতির আগে জাপান একাধিক আক্রমণ চালালেও ক্যামেরুন মাত্র একবারই আক্রমণে যায় খেলার ৩৭ মিনিটে। ডি বক্সের ভিতর থেকে ক্যামেরুনের এইয়ং এনাহ যে শট নেন তা কিপার সহজেই প্রতিহত করে। বিরতির আগে ক্যামেরুন আর আক্রমণে যেতে পারেনি। খেলার ১৪ মিনিটে প্রথম আক্রমণে যায় জাপান। ডি বক্সের ভিতর কেইসুকে হোন্ডা বল পেলেও জটলায় পড়ে গোল শট নিতে পারেনি। ১৭ মিনিটে আবার জাপানের আক্রমণ। এবার কাইসুকে মাতসুইয়ের দুরপাল্লার শট থামিয়ে দেয় ক্যামেরুনের গোল কিপার হামিদ সুলাইমান। ২০ মিনিটে কেইসুকে হোন্ডা আক্রমণে গেলেও সফল হতে পারেননি। তার খেলার৪০ মিনিটে সফল হয় জাপান। এবার আর হোন্ডার শট ব্যর্থ হয়নি। ডান প্রান্ত থেকে বাড়িয়ে দেয়া বল বক্সের ভিতর সহজেই নিজের করে নেয় হোন্ডা। আর সহজেই তা জালে জড়িয়ে জাপানকে এগিয়ে নেয় ১-০ গোলে। শক্তিতে আর পরিসংখ্যানে জাপান থেকে এগিয়ে ছিল ক্যামেরুন। কিন্তু মাঠে সেটা প্রমাণ করতে পারেনি ক্যামেরুন। ফলে প্রথমার্ধেই জাপানের কাছে ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্যামেরুন।
নেদারল্যান্ডের শুভ সূচনা
স্পোর্টস রিপোর্টার : বিশ্বকাপ ফুটবলের দু’বারের রানার্স আপ (৭৪, ৭৮ সাল) নেদারল্যান্ড ‘ই’ গ্রুপে শুভ সূচনা করেছে। গতকাল সোমবার জোহানেসবার্গের সকার সিটি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে ডাচরা ২-০ গোলে ডেনমার্ককে হারিয়েছে। প্রতিদ্বনিদ্বতাপূর্ণ ম্যাচের প্রথমার্ধে গোলশূন্য ড্র ছিল। বিজয়ী দলের স্ট্রাইকার ডার্ক কেউট গোল করেন। অপর গোলটি ছিল আত্মঘাতী। বিশ্বকাপের ১৯তম আসরে প্রথম আত্মঘাতী গোলটি করেন ডেনমার্কের তারকা ডিফেন্ডার সাইমন পলসেন। ফিফা র্যাং কিংয়ে চতুর্থ স্থানে থাকা অষ্টমবারের মত বিশ্বকাপ খেলতে আসা ডাচদের সাথে প্রথমার্ধে সমান তালে লড়াই করেও শেষ রক্ষা হয়নি বিশ্বকাপে তৃতীয়বার আসা ডেনমার্কের। একচেটিয়া প্রাধান্য বিস্তার করে খেলতে না পারলেও ডাচদের দখলেই ম্যাচের অধিকাংশ সময় বল ছিল। প্রথমার্ধে ড্যানিশদের রক্ষণভাগে কয়েকদফা বল নিয়ে হানা দিলেও এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার স্লাইভার, রাফায়েলরা ডেনমার্কের জালে বল পাঠাতে পারেনি। তাদের খেলাতেও ছিল জড়তার ছাপ। অপরদিকে ডেনমার্ক ও রক্ষণভাগ সামাল দিয়ে মাঝে মাঝে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিল। স্ট্রাইকার বেন্টনার ও কালেনবার্গের চেষ্টাগুলো ডাচ গোলরক্ষক মার্টেন দক্ষতার সাথেই প্রতিহত করেন। গোলের চেষ্টায় ডাচরা দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই অল আউট খেলতে থাকে।
দ্য অরেঞ্জ খ্যাত দলটি সুফল পেতে খুব বেশি অপেক্ষায় থাকতে হয়নি। ৪৬ মিনিটে মাঝ মাঠ দিয়ে আক্রমণ শানিয়ে বল নিয়ে ডেনমার্কের বক্সে ঢুকে পড়েন রবিন ফন পার্সি। ছোট বক্সের জটলায় থাকা রাফায়েলের উদ্দেশ্যে বল ক্রস করেন পার্সি। ডিফেন্ডার ড্যানিয়েল ও পলসেন লাফিয়ে বল ক্লিয়ার করতে চেষ্টা করেন। এখানেই ঘটে বিপত্তি। ড্যানিয়েলের মাথা ছুয়ে আসা বল পলসেনের টাক মাথার ছোঁয়া পেতেই গোলরক্ষক টমাসকে বোকা বানিয়ে জালে জড়িয়ে যায়। জাবুলানি বলের এমন গতি পরিবর্তনে হতবাক হয়ে যান পলসেন। কি করবেন ক্ষণিকের জন্য বুঝে উঠতে পারছিলেন না। অবশেষে হেসেই দুঃখ ভুলতে চেষ্টা করলেন পলসেন। গোল স্বাদ পাওয়া ডাচরা ম্যাচে জ্বলে উঠলে ড্যানিশদের রক্ষণভাগ লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ফলে গোলপার্থক্য বাড়াতে বেগ পেতে হয়নি ডাচদের। ম্যাচের পাঁচ মিনিট বাকি থাকতে দর্শনীয় গোলটি করেন কেউট। এবারও মাঝ মাঠ দিয়ে আক্রমণ শানিয়ে বদলী ফুটবলার স্ট্রাইকার এলজেরো জোরালো শট করেন। গোলরক্ষক টমাস ড্রাইভ দিয়েও বল গ্রীপে আনতে ব্যর্থ হন। তবে পোস্টে লেগে ফিরে আসলে কেউট বল জালে প্লেস করে দেন ২-০। মাত্র দু’মিনিট পাথর্ক্যে আবারও এগিয়ে যাবার সুযোগ সৃষ্টি করেছিল ডাচরা। ইব্রাহীমের শট গোললাইন অতিক্রমের আগে ছুটে এসে পলসেন ক্লিয়ার করেন। ফলে ২-০ গোলের জয় নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে নেদারল্যান্ডকে। গ্রুপের প্রথম ম্যাচ শেষে তারা তিন পয়েন্ট পেলেও ডেনমার্ক কোন পয়েন্ট পায়নি।
নেদারল্যান্ডস : মার্টেন স্টেকেলেনবার্গ, গ্রেগরি ফনডার উইয়েল, জন হেইটিংগা, জরিস ম্যাথিসেন, জিওভান্নি ফন ব্রংকহর্ট, মার্ক ফন বমেল, ডার্ক কেউট, নাইজেল, রবিন ফন পার্সি, ওয়েসলি স্লাইভার, রাফায়েল।
ডেনমার্ক : টমাস সোরেনসেন, ক্রিটিয়ান পলসেন, সিমোন কেজায়ের, ড্যানিয়েল অ্যাগার, লরেস জ্যাকবসেন, মার্টিন জরগেনসেন, নিকলাস বেন্টনার, টমাস কালেনবার্গ, সাইমন পলসেন, ডেনিস রোমেদাল, টমাস এনেভলছসেন।