বন্দর নগরী ভৈরবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে চলেছে। বাড়ছে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, খুন, হত্যা, ধর্ষণ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধ প্রবণতা। র্যাব-পুলিশকে টেক্কা দিয়েই চলছে এসব কার্যক্রম। ফলে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়েছে বন্দর নগরী শিল্পমালিক ও সাধারণ মানুষ। জানা যায়, ভৈরব উপজেলার আকবর নগর গ্রামে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২৯ নভেম্বর সোমবার সকালে নজরুল মিয়ার বাড়ির লোকজন নিধু মিয়ার বাড়িতে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালিয়ে ৫ জনকে গুরুতর আহত হওয়াসহ বাড়ি ঘর ভাঙচুর ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

গত ২৯ নভেম্বর রাতে একদল ডাকাত ভৈরব থেকে চাঁনপুর রাস্তার কালিপুর গ্রামের সোনা মিয়ার বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় সিএনজি চালিত অটোরিকসা আটক করে ৫ যাত্রীকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে আহত করে ও সাথে থাকা টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। গত ২৪ নভেম্বর বুধবার ভৈরব পৌর শহরের পঞ্চবটি গ্রামের ফারুক মিয়ার ভাড়া বাড়ির এক মেয়ে রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে পাশের টয়লেটে গেলে বখাটে রায়হান তার দুই সঙ্গী নিয়ে ওই মেয়েকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।

গত ২২ নভেম্বর সন্ধ্যায় উপজেলার কালিকাপ্রসাদ পলতাকান্দা এলাকা থেকে লিটন (৩০) নামে এক ব্যক্তির সিএনজি চালিত অটোরিকসা একদল ডাকাত ছিনিয়ে নেয়। লিটনের গ্রামের বাড়ি ভৈরব উপজেলারচর মিরারচর। গত ২২ নভেম্বর রোববার দুপুরে ভৈরব উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের আগানগর উত্তর পাড়ার এক শালিসী বিচারের মধ্যে দু’দলের সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়। গত ২১ নভেম্বর শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টা করে মহরম আলী (৩৫)।

গত ২০ নভেম্বর রাত ১১টার দিকে গোছামারা গ্রামের হাবিবুর রহমান (৩৫) কে পৌর এলাকার কমলপুর মাদরাসা মার্কেটের সামনে একদল সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করলে ভৈরব থানায় মামলা করতে গেলে প্রভাবশালী মহলের কারণে মামলা নেয়নি। ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর গ্রামের গত ১৮, ১৯ ও ২০ নভেম্বর রক্তয়ী সংঘর্ষে আহত হয় ৪০ জন ও ১৭ টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে শেখদের পক্ষ নিয়ে অংশ নেয় চৌধুরী বাড়ি, খাঁ বাড়ি, আমির চাঁন বাড়ি ও শিকদার বাড়ির লোকজন। অপর দিকে ভূইয়াদের পক্ষ নেয় বেপারী বাড়ি ও কেরানি বাড়ির লোকজন। ভূইয়া বাড়ির পক্ষে ভৈরব থানা পুলিশ দেড় শতাধিক লোকজনকে আসামী করে ২টি মামলা গ্রহণ করলেও বেপারী বাড়ির আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল লতিফ মাষ্টারের প্রভাবের কারণে শেখ বাড়ির অপর মামলাটি গ্রহণ করেনি।

গত ১৯ নভেম্বর রাতে মৌটুপী গ্রামের লুৎফর রহমানের সাথে তার বন্ধুদের কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। এ ঘটনার জের ধরে ২০ নভেম্বর শনিবার সকালে হাজী সামসু মিয়া ও আ: আলী মেম্বারের লোকজন দা, বল্লম, লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল নিয়ে এক পক্ষ আরেক পক্ষের উপর ঝাপিয়ে পড়ে।রক্তয়ী এ সংঘর্ষে আহত হয় ১০ জন।

গত ১৬ নভেম্বর শ্রীনগরের শরীফ মিয়া, শিমুলকান্দির আঙ্গুর মিয়াসহ বেশ কয়েকজন সিএনজি চালিত অটোরিকসা দিয়ে শ্রীনগর যাওয়ার পথে মধ্যেরচর ডাকাতের কবলে পড়ে। তাদের কাছে থাকা মোবাইল সেট ও নগদ টাকা পয়সা ডাকাতরা লুট করে নিয়ে যায়। ১৫ নভেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে গজারিয়া বাজার সংলগ্ন রাস্তায় গজারিয়া গ্রামের মৃত খলিল মিয়ার ছেলে খুর্শিদ মিয়া (৪৫) , একই গ্রামের হেলাল উদ্দিনের ছেলে শামীম (২০), বাচ্চুমিয়ার ছেলে নূর মোহাম্মদ, সিদ্দু ভূইয়ার ছেলে আশিক (২৫) কাছে থাকা ৪টি মোবাইলসহ প্রায় ৭০ হাজার টাকা ডাকাতদল লুটে নেয়।

ভৈরবপুর গ্রামের মিসেস শাওন বেগম বলেন তার বাসায় পর পর দু’দিন দরজার তালা কেটে চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় আমার স্বামী পুলিশের সাথে কথা বললে পুলিশের পক্ষ বলা হয় জানমালের ছদকা বাবদ ওই জিনিস পত্র চুরেরা নিয়ে নিছে। আমরা ধরে নিয়েছি পুলিশের কাছে এর কোন সহায়তা পাবনা। নিজেদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিজেরাই করতে হবে। ভৈরব বাসস্ট্যান্ড থেকে মানিকদী যাতায়াতকারী টেম্পুর ড্রাইভার মো. হেলিম মিয়া, জনি, ড্যানি, মিজান মিয়া জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যায় কালিকাপ্রসাদ পলতাকান্দা দিয়ে টেম্পু নিয়ে মানিকদী যাওয়া যায় না। আকবর নগর মিরারচর ঘুরে গজারিয়া দিয়ে মানিকদী যেতে হয়। পথচারী লুন্দিয়া গ্রামের বড় মিয়া, চাঁনপুর গ্রামের রুহুল আমিন ও কালিপুর

এলাকাবাসী জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা প্রতিদিন ভৈরব বাজারে যে টাকা উপার্জন করি সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে ডাকাত দল অথবা ছিনতাইকারীরা সে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরদিন ছেলে মেয়ে নিয়ে উপোষ থাকতে হয়। ব্যাটারি চালিত অটো রিকসা ড্রাইভার জাকির হোসেন কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ভৈরবের বেশ কয়েকটি নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ স্পটগুলির মধ্যে পুলিশের টহল থাকা স্বত্ত্বেও এক দু’দিন পর পরই ওইসব স্থানে ডাকাতি/ ছিনতাই সংঘটিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে পৌর কাউন্সিলর মতি মিয়া জানান, কালিপুর-চাঁনপুর ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তাটিতে প্রায় সময় ডাকাতির ঘটনা ঘটে থাকে। এ জন্য পথচারীদের নিরাপত্তার জন্য কমিউনিটি পুলিশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে এরপরও কি জন্য ডাকাতির ঘটনা ঘটে তা আমার বোধগম্য নয়।

– মোঃ ছাবির উদ্দিন রাজু, কটিয়াদী প্রতিনিধি