মানিকগঞ্জের বালিয়াটি জমিদারবাড়ি যেন সেদিন মহাসমারোহে জেগে উঠেছিল। ফিরে পেয়েছিল তার ফেলে আসা সমস্ত শান-শওকত আর জেল্লা। বর্ণিল আলোকচ্ছটায় ভেসে যাচ্ছে সামনের চত্বর। উজ্জ্বল আলোয় উদ্ভাসিত বাড়ির প্রতিটি অলিন্দ, টানা বারান্দা আর বেবাক কিছু। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছে দলে দলে।
চত্বরের চারপাশ তো বটেই, এমনকি আশপাশের উঁচু গাছগাছালি আর ঘরবাড়ির ছাদ—সব জায়গায়ই লোকে লোকারণ্য।
একে প্রিয়তম অনুষ্ঠান ইত্যাদির শুটিং দেখার অপূর্ব সুযোগ, অন্যদিকে পুরোনো রূপে জেগে ওঠা তাঁদের ঐতিহ্য আর গৌরবের ইমারত। এমন এলাহি কাণ্ড দেখতে মানুষজন সব হুমড়ি খেয়ে পড়বে, এটাই তো স্বাভাবিক। হ্যাঁ, এমন কাণ্ডকারখানায়ই সেদিন মেতে উঠেছিল গোটা মানিকগঞ্জ। উপলক্ষ জমিদারবাড়িতে ইত্যাদির শুটিং।
তড়িঘড়ি করে বানানো সেটেই যখন দিব্যি কাজ চলে, হাটে-মাঠে-ঘাটে যেখানে-সেখানে যখন শুটিং করা চলে, সেখানে কেন এই সুবিশাল আয়োজন? কেন এই বিপুল পরিশ্রম? প্রশ্ন ছিল ইত্যাদির স্রষ্টা হানিফ সংকেতের কাছে। ইত্যাদি বরাবরই থাকতে চায় আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে। একই সঙ্গে আমরা দর্শককে চার দেয়ালের ঘেরাটোপে বন্দী না রেখে নতুন কিছু উপহার দিতে চাই সব সময়। প্রতিবারের মতো এবারও আন্তরিকতা দিয়ে সে চেষ্টাই আমরা করেছি।’ বলছিলেন হানিফ সংকেত।
ঢাকার লালবাগের কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, বাংলা একাডেমী, কুমিল্লার শালবন বৌদ্ধবিহার, বগুড়ার মহাস্থানগড় ও চট্টগ্রাম বন্দরের মতো জায়গায় অনুষ্ঠান ধারণের পর এবার ইত্যাদি হাজির হয়েছে মানিকগঞ্জের বালিয়াটির জমিদারবাড়িতে।
তবে শুধু স্থান আর ধারণবৈচিত্র্য নয়, প্রতিবারের মতো এবারও ইত্যাদি থাকছে নানা আনন্দ আয়োজন আর চমকে ভরপুর। থাকছে বরাবরের মতোই একাধিক মানবিক, শিক্ষামূলক ও উৎসাহজাগানিয়া প্রতিবেদন। এবারের ইত্যাদি দর্শকদের ধারণা দেবে বালিয়াটির জমিদারবাড়ির ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কেও। আর ধনীদের বিলাসিতা নিয়ে কটাক্ষ, মুঠোফোনে মিথ্যাচার নিয়ে বিদ্রূপ, কথার অনুষ্ঠানে বেহিসাবি কথাবার্তা নিয়ে ব্যঙ্গ—এসব তো থাকবেই। তার পরও ইত্যাদির চমকের তালিকাটা শেষ হচ্ছে না এখানেই। পুরো আয়োজনের কথা বলে মজাটা নষ্ট করতে চাই না এখনই। সেটা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৩০ জুলাই রাত নয়টা অবধি। তবে একটা বিষয় বলে রাখা যেতে পারে আগেভাগেই—প্রতিবারের মতো এবারের ইত্যাদিও ফুরোবে না শুধু নির্মল আনন্দ বিলিয়েই। মানিকগঞ্জের সাইদুর রহমান বয়াতির জীবন ও সাধনা নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনটি মুগ্ধ করার সঙ্গে আমাদের ভাবাবেও খুব। হূদয়ে উথালপাতাল হবে তাঁর জীবন আর সাধনার গল্প শুনে। এর বাইরে অন্তত হাফ ডজনবার আপনি ভাববেন—তাজ্জব! জানতাম না তো এ বিষয়টা! কখনো ভাবিনি তো এভাবে! আর সবশেষে একজন দিনহীন নিঃস্বার্থ মানুষের অসাধারণ মানবপ্রেম নিশ্চিতভাবেই আপনার মনুষ্যত্ব বোধকে দাঁড় করাবে বিবেকের কাঠগড়ায়। যেমনটি ইত্যাদি প্রায়ই করে থাকে।