‘কিছু দিন আগে সম্পত্তির ভাগ চাওয়ায় ভাইয়েরা আমরার লগে খারাপ ব্যবহার করছে। আমারে মারছেও। কোর্ট-কাচারি করলে মেলা টেহার প্রয়োজন। হেই ডরে মামলাতেও যাই নাই। হুনছি, আপনের আদালতে টেহা লাগে না। উকিলের পয়সা লাগে না। এই কারণে আমরা হেই ঘটনার বিচার চাই। বাপের সম্পত্তির অধিকার চাই।’

মামলার বাদী হাজেরা বেগম এভাবেই গ্রাম আদালতের হাকিমের কাছে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন। বিবাদী আলাল উদ্দিন (হাজেরা খাতুনের ভাই) পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করেন। নিজের গ্রামে বসে গতকাল রোববার বাদী-বিবাদীর যুক্তিতর্ক প্রত্যক্ষ করেন কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের কয়েক শ বাসিন্দা।

ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানানো হয়, ১৯৭৬ সালে দেশে গ্রাম আদালত সক্রিয় ছিল। গ্রামের প্রান্তিক মানুষকে বিচারসেবা প্রদান, দ্রুত বিরোধ নিষ্পত্তি এবং আদালতে মামলার চাপ কমাতে পুনরায় গ্রাম আদালত সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের ৫০০টি ইউনিয়নকে গ্রাম আদালতের আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে ভৈরবের চারটি ইউনিয়ন রয়েছে।

শ্রীনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়ে আদালতের হাকিম ইউপি চেয়ারম্যান উসমান গণি বিকেলে শুনানি শুরু করেন। বিধান অনুযায়ী পাঁচ সদস্যের জুরি বোর্ড গঠন করা হয়। বাদীপক্ষ ইউপি সদস্য নুরু মিয়া এবং বিবাদীপক্ষ ইউপি সদস্য আয়েত উল্লাহকে উকিল হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী শুনানি শেষে হাকিম ২০ সেপ্টেম্বর শুনানির পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।
আদালতের কার্যক্রম দেখে গ্রামের বৃদ্ধ জাহের মিয়া বলেন, ‘তাইজ্জব ব্যাপার। শহরের কোর্টদি আমরার গ্রামে আইয়া পড়ছে। ভালা হইছে, গ্রামের মানুষ থানায় কম যাইব।’

হাকিমের দায়িত্বপালনকারী শ্রীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উসমান গণি বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে প্রথম গ্রাম আদালতের কার্যক্রম শুরু করতে পারায় এবং হাকিমের দায়িত্ব পালন করতে পারায় খুশি লাগছে। আমার বিশ্বাস, গ্রাম আদালত গ্রামের সাধারণ ঘটনাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তিতে সহায়তা করবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে জানান, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের তত্ত্বাবধানে গ্রাম আদালত আবার সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অর্থায়ন করছে ইউরোপিয়ান কমিশন আর কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে ইউএনডিপি।

–  প্রথম আলো