পাহাড়ী ঢল আর অতিবর্ষণে কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলে প্রায় সাত হাজার একর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা আবাদ করা জমির প্রায় অর্ধেকের ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে মিটামইন উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ফসলী জমি রাতারাতি পানিতে নিচে তলিয়ে যায়।

মিটামইন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান জানান, চলতি বোরো মৌসুমে কাটখাল, বৈরাটি ও ঢাকী চারিগ্রাম ইউনিয়নে ১৩ হাজার একর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। একরপ্রতি আড়াই মেট্রিক টন হিসেবে ৩২ হাজার মেট্রিক টন বোরো ধান ওঠার লক্ষ্যমাত্রা ছিল এ বছর। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতো কৃষকরাও আশা করছিলেন এবার ফসল ভাল হওয়ায় বাম্পার ফলন হবে। ধান পাকতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে হাওরের বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটা শুরুও হয়েছে। তবে হঠাৎ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে কালনী ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর টানা বৃষ্টিতে আজমেরীগঞ্জের মাহতাবপুর বাঁধ, কাটখালের তিনতারা ও কুলকুলিয়া বাঁধ এবং ঢাকী চারিগ্রামের পাতারকান্দি বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এতে রাতারাতি তলিয়ে যায় বিস্তৃর্ণ বোরো ক্ষেত।

এতে ১৭ হাজার টন ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন এই কৃষি কর্মকর্তা। বছরের একমাত্র ফসল হারানোর আশঙ্কায় এখনই বিপর্যস্ত হাওরের কয়েক হাজার কৃষক। তারা এখন তলিয়ে যাওয়া ধান যতটা পারছেন কেটে তোলায় ব্যস্ত। আর এ কাজে বেশি মুজুরি দিয়েও পর্যাপ্ত মজুর পাচ্ছেন না কৃষকরা। স্থানীয় কৃষক খোরশেদ মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ধার কর্জ করে আমি ১০ একর জমিতে ধান চাষ করেছি। কিন্তু ধান কাটতে পারি নাই।”

মহাজনের ধার কিভাবে শোধ করবেন সে আতঙ্ক খোরশেদ দিশেহারা। কৃষক মাহতাব বলেন, “আমরা এখন ডুবে ডুবে ধান কাটছি। এ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো কোন কাজে লাগবে না।” তাদের ধারণা কালনী ও কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর নাব্যতা হ্র্রাস পাওয়ায় এ বিপর্যয় হয়েছে। মিটামইন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম শাহজাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, হাওর এলাকার নদ-নদী খনন করে নাব্যতা বৃদ্ধি ও বেড়ি বাঁধ নির্মাণের লক্ষ্যে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পানি বৃদ্ধির হার আর বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে হাওড় এলাকার বাকি এলাকার পাকা ধানও তলিয়ে যাওয়ার আশংকায় উদ্বিগ্ন এলাকার কৃষকরা। সুত্রঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম