কিশোরগঞ্জের হাওরবেষ্টিত উপজেলা মিঠামইনের গাইরা নদীতে আজ বুধবার সকাল সাতটার দিকে যাত্রীবাহী একটি ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিন শিশু ও দুই মহিলার লাশ উদ্ধার হয়েছে। তবে এ ঘটনায় আর কোনো যাত্রী নিখোঁজ নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদেকুর রহমান। নিহত ব্যক্তিরা হলেন, ঘাগড়া গ্রামের শারমিন বেগম (৩০), তাঁর ছেলে মারুফ মিয়া (৫) ও চার মাসের ছেলে বাবু। অন্য দুজন হলেন একই উপজেলার কান্দিপাড়া গ্রামের সোমা বেগম (২৫) ও তাঁর এক বছরের শিশু জিসান। নদী থেকে তীরে উঠে আসা যাত্রীরা জানান, সকাল সাতটার দিকে মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ঘাট থেকে ২০ জন যাত্রী নিয়ে ‘এম ভি লিজা-১’ নামের ট্রলারটি করিমগঞ্জের চামড়াঘাট বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়। তবে ট্রলারে ধানের বস্তা ছিল শতাধিক। কিছু দূর যাওয়ার পর কিছু বুঝে ওঠার আগেই ট্রলারটি উল্টে যায়। এতে বেশির ভাগ যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও পাঁচজন মারা গেছেন।

উপজেলা ও থানা প্রশাসন পাঁচযাত্রীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেকের দাফন কাজের জন্য পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে জেলা পরিষদ থেকেও সহযোগিতা করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।ট্রলার মাঝি স্বপন মিয়া বলেন, মূলত ট্রলারটি যাত্রীবাহী। হাওরে এখন ধান কাটার মৌসুম চলছে। এখন যাত্রীর পাশাপাশি ধানও পরিবহন করতে হয়। ট্রলারে ধানের শতাধিক বস্তা থাকলেও অতিরিক্ত বোঝাই হয়নি। ছাড়ার পর ট্রলারটি গাইরা নদীর পাথারকান্দি এলাকায় যাওয়ামাত্র প্রবল স্রোতের মুখে পড়ে। ট্রলারটি চেষ্টা করেও তীরে ভিড়াতে পারছিলাম না। ১০ মিনিট পর ট্রলারটি উল্টে যায়।

ট্রলার যাত্রী হাবিবুর মিয়া (৪৫) বলেন, আকাশে মেঘ ছিল না। ঝড় কিংবা ঝোড়ো বাতাস এ রকম কোনো কিছুই ছিল না। নদী ছিল শান্ত। তার পরও ট্রলারটি ডুবে গেল। আমরা মনে করি বেশি ধান বোঝাইয়ের কারণে শান্ত নদীতে দুর্ঘটনা ঘটল। যাত্রী তৌহিদুল ইসলাম (৪০) বলেন, ‘ধান বোঝাই করার সময় আমরা মাঝিকে এত বস্তা না তোলার জন্য বারবার অনুরোধ করেছি। তিনি আরও বস্তা তুলতে চেয়েছিলেন। পরে আমাদের বাধার মুখে তুলতে পারেননি।’
মিঠামইন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ট্রলারডুবির কারণ এখনো নিশ্চিত না। অতিরিক্ত লোডের কারণে ট্রলার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যেতে পারে। এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদেকুর রহমানের উপস্থিতিতে স্থানীয় উদ্যোগে উদ্ধারকাজ চলছে। এরই মধ্যে ডুবে যাওয়া ট্রলারটি তীরে আনা হয়েছে।  সাদেকুর রহমান বলেন, ট্রলারটিতে ১৮ জন যাত্রী আর ২০০ মণ ধান ছিল। যা ট্রলারের ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত। ট্রলারের ভেতর থেকে আর কোনো মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। নিখোঁজও কেউ নেই।সুত্রঃ প্রথম আলো