কিশোরগঞ্জে উৎকোচের বিনিময়ে পোষ্য ও আনসার-ভিডিপির কোটায় ভুয়া সনদে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের প্রমাণ মিলেছে। এ ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি ইতিমধ্যে আনসার ও ভিডিপির কোটায় ১৯ জনের সনদ যাচাই শেষে তাঁদের মধ্যে ১৭ জনের ভুয়া সনদে নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা শেষে জেলায় ২৬ জন প্রধান শিক্ষক ও ৭৫৬ জন সহকারী শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর পরপরই অভিযোগ ওঠে, নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন প্রধান শিক্ষক ও ৬২ জন সহকারী শিক্ষককে ভুয়া সনদ দেখিয়ে পোষ্য ও আনসার-ভিডিপি কোটায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে তিন-পাঁচ লাখ টাকা উৎকোচ নেওয়া হয়েছে।

অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার পর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) বাবলু কুমার সাহাকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি কিশোরগঞ্জ এসে তদন্ত করে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায়। এ অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্য প্রমাণিত হওয়ায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোদাচ্ছের হোসেনকে শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রত্যাহার করা হয়।

তদন্ত কমিটির প্রধান ৭ অক্টোবর কিশোরগঞ্জের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গোলাম মওলা এবং জেলা আনসার ও ভিডিপির কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হাসানকে যথাক্রমে পোষ্য এবং আনসার-ভিডিপি কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তদের সনদ যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠান। চিঠি পেয়ে জিয়াউল হাসান আনসার ও ভিডিপির কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত ১৯ জনের সনদ যাচাই করে ওই ১৭ জনের ভুয়া সনদে নিয়োগের প্রমাণ পান।

জিয়াউল হাসান গত সোমবার আনসার ও ভিডিপির কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত ভুয়া সনদধারীদের তালিকাসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন তদন্ত কমিটির প্রধানসহ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করেন। একই দিন জিয়াউল হাসান প্রথম আলোকে জানান, ১৭ জন ভুয়া সনদধারীকে নিয়োগের প্রমাণ পাওয়ার মধ্য দিয়ে এ নিয়োগে দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র ধরা পড়েছে। তিনি এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এ ছাড়া প্রকৃত সনদধারীদের নিয়োগের আশা প্রকাশ করেন।

দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গোলাম মওলা জানান, পোষ্য কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত শতাধিক শিক্ষকের সনদ যাচাই-বাছাই চলছে। আশা করা যাচ্ছে, কয়েক দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ হবে। এ কোটায় ভুয়া সনদে নিয়োগের প্রমাণ মিলেছে কি না, এ ব্যাপারে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা শিক্ষা কার্যালয়ের একটি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পোষ্য কোটায় ভুয়া সনদে ১৫ জনকে নিয়োগ দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
জেলা প্রশাসক মো. সিদ্দিকুর রহমান সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার চাকরিজীবনে এমন অভিনব কায়দায় দুর্নীতি করে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা এই প্রথম দেখলাম।’ মৌখিক পরীক্ষায় তিনিসহ বোর্ডের অন্য সদস্যরা এত বড় দুর্নীতি আঁচ করতে পারেননি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তদন্ত কমিটির প্রধান বাবলু কুমার সাহা সোমবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, তদন্তকাজ শেষ পর্যায়ে। ভুয়া সনদধারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। বিস্তারিত কাগজপত্র, তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য কিশোরগঞ্জ পৌর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ শরীফ সাদী জানান, ‘এবারের নিয়োগ পরীক্ষায় জেলা প্রশাসকসহ বোর্ডে আমরা যাঁরা ছিলাম, সবাইকে এই চক্রটি বোকা বানিয়েছে।’জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বর্তমানে (ওএসডি) মো. মোদাচ্ছের হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

সাইফুল হক মোল্লা, কিশোরগঞ্জ