কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে দর্শন বিভাগে শিক্ষক নেই। একই অবস্থা ইসলামের ইতিহাস বিভাগেও। এ দুটি বিভাগে পাঠদান প্রায় বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। কোনো কোনো বিভাগে অতিথি শিক্ষক দিয়ে নামমাত্র ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলসহ আশপাশের মোট ১৯টি উপজেলার নারী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার অন্যতম বিদ্যাপীঠ এই কলেজটি। ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজটিতে নানা সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কলেজের অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ চৌধুরী বলেন, ‘কোনো ডিগ্রি কলেজে প্রতি বিভাগে চারজন করে এবং অনার্স কলেজে প্রতি বিভাগে সাতজন করে শিক্ষকের পদ থাকার কথা। আমাদের এই কলেজে পদের ক্ষেত্রে দুই শর্তের কোনোটিই পূরণ হয়নি।’

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, উচ্চমাধ্যমিক, পাস কোর্স (ডিগ্রি) ও পাঁচটি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীর সুষ্ঠুভাবে পাঠদানের জন্য মোট ৬৮টি শিক্ষক পদের বিপরীতে ২৩টি পদে শিক্ষক আছেন। এই ২৩টি পদের মধ্যে সাতটিতে শিক্ষক নেই। ফলে মাত্র ১৬ জন শিক্ষককে গোটা কলেজ সামলাতে হচ্ছে।

গত বছরের জুলাইয়ে কলেজের ৪০ বছর পূর্তিতে স্পিকার আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিলে কলেজের শিক্ষার্থীরা আবাসন ও শিক্ষকসংকটের কথা তুলে ধরেন। তিনি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। এর পর ১০ দিন আগে দর্শন ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের তিনজন শিক্ষক পদোন্নতি পেয়ে বদলি হয়ে গেলে দুটি বিভাগ শিক্ষকশূন্য হয়ে পড়ে।

জানা গেছে, বাংলা বিভাগে সাতজন শিক্ষকের বিপরীতে আছেন মাত্র দুজন। তাঁদের উচ্চমাধ্যমিক ও সম্মান শ্রেণীর সব ক্লাস করাতে হচ্ছে। ইংরেজি বিভাগে আছেন একজন। ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজকর্মে দুজন করে এবং পদার্থ, রসায়ন, গণিত, প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যায় একজন করে শিক্ষক রয়েছেন। ব্যবস্থাপনা বিভাগে একজন প্রভাষক রয়েছেন।

আবাসনসংকট: কলেজের ছাত্রীনিবাস ‘চন্দ্রাবতী’ হোস্টেলে ১৫০ জন ছাত্রী অবস্থান করছেন। অথচ এখানে থাকার জায়গা আছে ৮০ জনের। সদ্য চালু হওয়া বেগম শামছুন্নাহার গণি হলে গাদাগাদি করে ১৪৪ জন অবস্থান করছেন। অথচ এখানে থাকার কথা ১০০ জনের। কলেজের স্নাতক শ্রেণীর ছাত্রী মাজেদা আক্তার ও লাভলী আক্তার জানান, এক কক্ষে আটজনকে থাকতে হচ্ছে। এক বিছানায় দুজনকে ঘুমাতে হচ্ছে। এক টেবিলে তিনজনকে পড়তে হচ্ছে।

কলেজে লাইব্রেরিয়ান, সহকারী লাইব্রেরিয়ান, স্টোরকিপার, ইলেকট্রিশিয়ান, ক্যাশ পিয়ন পদে কোনো লোক নেই। কলেজে মাত্র তিনটি একাডেমিক ও একটি অফিস ভবন রয়েছে।

কলেজে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের কোনো বাসস্থান নেই। এ ছাড়া কলেজে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের কোনো রাস্তা নেই। বর্ষাকালে কলেজ হোস্টেলে ও একাডেমিক ভবনে যেতে ছাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কলেজে একটি মিলনায়তন, একটি উন্নত লাইব্রেরি জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।

ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. রুহুল আমীন জানান, প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছাত্রীরা কলেজের আবাসিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করেই এখানে ভর্তি হয়। প্রয়োজনীয় হোস্টেল না থাকায় অনেকেই মেসে অবস্থান করছে। কলেজের অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ চৌধুরী জানান, শিক্ষক ও আবাসনসংকটই কলেজের প্রধান সমস্যা। বর্তমানে দুই হাজার ২০০ ছাত্রী আছে। কলেজে প্রয়োজনীয় হোস্টেল ও শিক্ষকসংকট দূর করা হলে এ কলেজে আগামী বছরই আরও অনেক ছাত্রী ভর্তি হবে।

লিখেছেনঃ সাইফুল হক মোল্লা