গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই সাধারণত পুকুর থাকে। পুকুরে থাকে মিঠা পানির বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। থাকে জলনির্ভর উদ্ভিদ ও প্রাণী। কিন্তু কয়েক দশক ধরে বিদেশি প্রজাতি ও অধিক লাভজনক মাছ চাষের ফলে গ্রামের পুকুরগুলো থেকে মিঠা পানির মাছের প্রজাতি অনেকটাই কমে গেছে। আরও আছে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ, নদীতে পানি কমায় মিঠা পানির মাছের স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া। মিঠা পানির মাছের পাশাপাশি গ্রামের পুকুরগুলো থেকে কাছিম বা কাইট্টা নামের চিরশান্ত প্রাণীটি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে।

কড়ি কাছিম আমাদের ছোটবেলায় গ্রামের প্রতি বাড়ির পুকুরেই দেখা যেত। শীতে তারা পুকুরপাড়ের রোদেলা জায়গা কিংবা ভাসমান কলাগাছে, ভাসমান ডালের ওপর বসে রোদ পোহাত। মানুষ কাছে গেলেই জলতলে হারিয়ে যেত। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও সূর্যালোক থেকে ভিটামিন-ডি সংগ্রহের জন্য সরীসৃপ প্রাণীরা রোদে শরীর পাতে।
এখন গ্রামের পুকুর ও ডোবাগুলোতে এ দৃশ্য কমই চোখে পড়ে। ১০ গ্রামের পুকুর ঘুরেও এখন দু-একটি কড়ি কাছিম দেখা যায় না। তিন বছর ধরে পরিবেশ গবেষণার কাজে দেশের নানা প্রান্তে গিয়ে এ রকমই দৃশ্য চোখে পড়েছে। তবে দক্ষিণবঙ্গ এবং উপকূলীয় এলাকা পটুয়াখালী, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, সাতক্ষীরা, খুলনা, বরগুনা, ভোলা ও ঝালকাঠিতে প্রাকৃতিক আবাসস্থলে এ কাছিমের সংখ্যাটা কিছুটা ভালো।

কড়ি কাছিম কোথাও কড়ি কাইট্টা ও হাইল কাছিম নামে পরিচিত। কড়ি কাছিম সাধারণত স্থির জলগতির জলাশয় ও জলজ আগাছাসমৃদ্ধ জলাশয়ে বাস করতে পছন্দ করে। দেহের রং জলপাই বাদামি ও হলদে। দৈর্ঘ্য ২০ সেন্টিমিটার। পুরুষ কাছিম মেয়েটির চেয়ে ছোট হয়। এরা দিবাচর। জোড়ায় বা একাকী থাকে। প্রজননের সময় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। এটির বৈজ্ঞানিক নাম Pangshura tecta। ইংরেজি নাম Indian Roofed Turtle। সাধারণত নিরামিষভোজী। এরা জলজ শৈবাল, জলজ উদ্ভিদের কচি কাণ্ড ও পাতা খায়। গ্রামের পুকুরঘাটে হাঁড়ি-পাতিল ধোয়ার সময় ভাত, তরকারি ও অন্যান্য উচ্ছিষ্ট খায়। কড়ি কাছিম গ্রামবাংলার পুকুর ও ডোবার ইকো-ভারসাম্য বজায় রাখে।

সুত্রঃ সৌরভ মাহমুদ, প্রথম আলো