অপেক্ষার পালা শেষ। মাঠে গড়াচ্ছে আজ বিশ্বকাপ ফুটবল। স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা আর মেক্সিকোর ম্যাচ দিয়েই শুরু হচ্ছে বিশ্ব ক্রীড়া যজ্ঞের এই আসর। অবশ্য উদ্বোধনী দিনে আরো একটি ম্যাচ হবে একই গ্রুপের। উরুগুয়ে আর ফ্রান্সের। উদ্বোধনী ম্যাচটি বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় আর দ্বিতীয় ম্যাচটি হবে রাত সাড়ে ১২টায়। মোট কথা উদ্বোধনী দিনে মাঠে নামছে এ গ্রুপের চারটি দলই। বিশ্বকাপে উদ্বোধনী ম্যাচের আগে আসছে যথারীতি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী হবে এই অনুষ্ঠান। যা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টায়। উদ্বোধনী ম্যাচের মতো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান স্বাগতিকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এই চ্যালেঞ্জের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বকাপে উদ্বোধনী ম্যাচ নিয়ে সবার আগ্রহ থাকে বেশি। এই ম্যাচেই থাকে চমকের পর চমক। থাকে একের পর এক অঘটন। দক্ষিণ আফ্রিকার এটা একটা বাড়তি চাপও বটে। বিশ্বকাপে স্বাগতিকরা সবসময় বাড়তি সুবিধা পায়। সুযোগ পায় নিজেদের প্রমাণ করার। ভাগ্যে নাকি তাদের দিকে হেলে পড়ে বেশি অন্তত গত ১৮টি বিশ্বকাপ আসরই এর জ্বলন্ত প্রমাণ। এখন পর্যন্ত কোন স্বাগতিক দেশই প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেয়নি। একাধিক দলের স্বাগতিক হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড আছে। এই পরিসংখ্যাণ ধরে রাখাই এখন দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে অনেকে মনে করছেন এবার এই রেকর্ড হয়তো ভেঙ্গে যাবে। কারণ দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য প্রথম রাউন্ডের গন্ডি পার হওয়া অনেক কঠিন। যদিও কোচ কার্লোস আলবার্তোর টার্গেট দ্বিতীয় রাউন্ড। এটা না হলে বিশ্বকাপের নতুন ইতিহাস লেখা হবে দক্ষিণ আফ্রিকায়। তবে আজ প্রথম ম্যাচে শক্ত প্রতিপক্ষ হলেও স্বাগতিকরা জয়ের বিকল্প ভাবছে না। যদিও পরিসংখ্যানে অভিজ্ঞতা আর শক্তিতে অনেক এগিয়ে মেক্সিকো। মেক্সিকো যেখানে র্যাং কিংয়ে ১৭ নম্বরে সেখানে স্বাগতিকদের অবস্থা ৮৩তে। আর বিশ্বকাপে অংশ নেয়ার মাঝেও দু-দলের পার্থক্য অনেক। বিশ্বকাপের প্রথম আসর থেকে অংশ নেয়া মেক্সিকো বিশ্বকাপ খেলেছে ১২ বার। যার মধ্যে দুবার খেলেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। আর দক্ষিণ আফ্রিকা এর আগে দু’বার অংশ নিয়েছে বিশ্বকাপে। ১৯৯৮ আর ২০০২ সালের পর এবার খেলছে স্বাগতিক হিসেবে। ফলে উদ্বোধনী ম্যাচে কঠিন প্রতিপক্ষ ছাড়া স্বাগতিকদের ভাবতে হচ্ছে গ্রুপ নিয়ে। কারণ গ্রুপে সবার সাথে খেলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে উঠতে হবে দ্বিতীয় রাউন্ডে। সেই সাথে স্বাগতিক হিসেবে চাপও কম নেই তাদের। এই গ্রুপে শক্তিশালী মেক্সিকো ছাড়া বাকী দুটো দলের আছে চ্যাম্পিয়ন স্ট্রাইকার। এর মধ্যে উরুগুয়ে প্রথম আসরসহ দু’বার আর ফ্রান্স একবার বিশ্বকাপ জয় করেছে। ফলে কঠিন একটি গ্রুপ থেকেই লড়তে হচ্ছে স্বাগতিকদের। সবকিছু বিবেচনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মতো উদ্বোধনী ম্যাচেও চমক দেখাতে চায় স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা। জজেদের পরিচিত মাঠে কতটুকু জ্বলে উঠতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা তার দিকেই নজর থাকছে কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমিদের। দলের ভালো করার দায়িত্ব থাকছে অ্যারন মোকোয়েনা আর সারপ্রাইজ মরিয়ির ওপর। অ্যারন একমাত্র ফুটবলার যে খেলেন ইংলিশ ফুটবল লীগে। এছাড়া দলে আছে ইউরোপিয়ান ফুটবলের দ্বিতীয় আর তৃতীয় বিভাগে খেলা বেশ কয়েকজন ফুটবলার। দলকে উৎসাহ দিতে ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে প্রাইজমানির। দক্ষিণ আফ্রিকা চ্যাম্পিয়ন হলে প্রতিটি ফুটবলার পাবে ৫ লাখ ডলার আর একটি করে মার্সিডিজ গাড়ী। অবশ্য কোচ কার্লোস আলবার্তো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখেন না। তবে তিনি চান চমক দিতে। তবে সেটা দ্বিতীয় রাউন্ডে। আমি বিশ্বকাপ জয়ের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি না। তবে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠার পর নক আউট পর্বে অঘটন ঘটানোর প্রত্যাশা করি। জানালেন দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ কার্লোস আলবার্তো। দক্ষিণ আফ্রিকা এর আগে মাত্র ২টি বিশ্বকাপে অংশ নিলেও টানা ১২ ম্যাচে অপরাজিত থেকে সবার মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। সেই সাথে বাড়তি সুবিধা তো থাকছেই। আর পরিসংখ্যান সাপোর্ট করলে দক্ষিণ আফ্রিকার পোয়া বারো। দলটির জন্য আরো একটি বাড়তি প্রেরণা হবে নেলসন ম্যান্ডেলার উপস্থিতি। সব মিলিয়ে ভয় দিয়ে শুরু করার জন্য প্রস্তুত স্বাগতিকরা। কোচ কার্লোস আলবার্তো পেরেইরা খেলার কৌশল সম্পর্কেও জানিয়েছেন। আমরা মাটিতে বল রেখেই ছোট ছোট পাসে খেলবো। স্বাগতিক বিরুদ্ধে মাঠে খেলেই জয় চায় অভিজ্ঞ মেক্সিকো। যে কোন হিসেবেই মাচে ফেভারিট মেক্সিকো। কোচ হ্যাভিয়ের আগুইয়ের মতে এটা সর্বকালের সেরা দল। বাছাই পর্বে তারা চ্যাম্পিয়ন ইতালীকে হারিয়ে তার প্রমাণ দিয়েছে। গ্রুপেও দলটি ফেভারিট। অবশ্য বিশ্বকাপে লড়াকু হিসেবে সুনাম আছে মেক্সিকোর। সব মিলিয়ে মেক্সিকো জয় দিয়েই ম্যাচ শুরু করতে চায়। দলে আছেন বার্সেলোনার তারকা রাফায়েল মার্কেজ। সেই সাথে হ্যাভিয়ের হার্ডান্দেজ এবং গুইলেরমো নিয়ে গড়া মেক্সিকো জয়ের বিকল্প ভাবতে চায় না। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে জোহানেসবার্গের সকার সিটি স্টেডিয়ামে। কারণ এই স্টেডিয়ামে কার ভাগ্যে জয় দিয়ে শুরু করা আছে তা জানার জন্য আর কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।

// <![CDATA[//
// <![CDATA[//
// <![CDATA[//
// <![CDATA[//