দেশের দুর্দশাগ্রস্ত বিদ্যুৎ খাতে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বরাদ্দ বাড়িয়ে আগামী অর্থবছরের জন্য ১ কোটি ৩২ লাখ ১৭০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে চলতি অর্থবছরের তুলনায় বরাদ্দ বেড়েছে সাড়ে ৬১ শতাংশ। দুই অর্থবছরের ব্যবধানে প্রস্তাবিত বাজেটে সামরিক ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৫০ শতাংশ।

এছাড়া কৃষি, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো উন্নয়নখাতেও বরাদ্দ বেড়েছে।

তবে অগ্নিনির্বাপন ও বেসামরিক প্রতিরক্ষাসহ কয়েকটি খাতে বরাদ্দ কামানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৪ টা ১০ মিনিটে জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ শুরু করেন। এর আগে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা।

৭৮ বছর বয়সী অর্থমন্ত্রী প্রথম ২০ মিনিট পর স্পিকারের অনুমতি নিয়ে আসনে বসে পড়েন এবং বাজেট বক্তব্য দেন। এ সময় বড় স্ক্রিনে বাজেটের সারাংশ দেখানো হয়।

এই বাজেট মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় বাজেটে। এ নিয়ে মুহিত দুই সরকারের আমলে চারটি বাজেট দিলেন। সামরিক শাসক এরশাদের আমলেও তিনি অর্থমন্ত্রী ছিলেন।

এই প্রথমবারের মতো পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে বড় চারটি স্ক্রিনসহ কয়েকটি স্ক্রিনে বাজেট উপস্থাপন করা হয়।

বিরোধীদল বিএনপি বলেছে, এই বাজেট অতি উচ্চাভিলাষী।

আর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেছেন, বাজেটে নতুন কিছু নেই।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) বলেছেন, বাজেটে বিত্তবানদের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে।

মহাজোট সরকারের শরিক জাতীয় পার্টি (জাপা) বলেছে, বাজেট বাস্তবায়নে সতর্ক হতে হবে।

আর উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রশাসনকে কার্যকর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম।

প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ।

নুতন অর্থবছরের (২০১০-১১) এই বাজেটে রাজস্ব আয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৯২ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট থেকে ১৩ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা বেশি।

বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণে বৈদেশিক সূত্র থেকে ১৫ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে ২৩ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

রাজস্ব আদায়ে অর্থমন্ত্রী মূলত তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন। এগুলো হলো- নতুন আয়কর দাতার সংখ্যা বাড়ানো, বিভিন্ন খাতে উৎসে কর সংগ্রহ এবং মূল্য সংযোজন করসহ বিভিন্ন শুল্ক বৃদ্ধি এবং নতুন করে আরোপ।

দেশীয় শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি শুল্ক এবং অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য মূল্য সংযোজন করসহ (মূসক) অন্যান্য শুল্ক কমানো হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে।

বিদ্যুৎ-জ্বালানি

চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৬ হাজার ১১৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৬১.৫ শতাংশ বেশি।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে এই খাতে ৪ হাজার ৩১০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব ছিল।

দেশের কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হলেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের কারণে দেশের উন্নয়ন পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “এই খাতের সমাধানে পাঁচবছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।”

কৃষিঋণ বাড়লেও ভর্তুকি কমছে

২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেটে কৃষিঋণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে কৃষি খাতে ভর্তুকির পরিমান কমছে। একই সঙ্গে কৃষিবীমা চালুরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য ৬ হাজার ৭৪২ দশমিক ১২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে এই বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ৭০৩ দশমিক ৪৮ কোটি টাকা।

নতুন অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ৫১২ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরের বাজেটে কৃষিখাতে ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। চলতি অর্থবছরে (সংশোধিত) যা ছিল ৪ হাজার ৯৫০ কোটি।

প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষিবীমা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের উৎপাদিত শস্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিনষ্ট হওয়ার কারণে তাদেরকে শস্যমূল্য সহায়তার জন্য সরকার কৃষিবীমা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।

সামাজিক নিরাপত্তায় সজাগ সরকার

বিভিন্ন খাদ্য সহায়ক প্রকল্প, চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্পের আওতা বৃদ্ধি এবং বয়স্ক ভাতার সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে দারিদ্র নিরসন ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১৯ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন বাজেটে। যা মোট বাজেটের ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

চলতি ২০০৯-১০ অর্থবছরে ‘সামাজিক নিরাপত্তা ও সামাজিক ক্ষমতায়ন’ খাতে বরাদ্দ ছিলো ১৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। যা ছিলো প্রস্তাবিত বাজেটের ১৫ দশমিক ২ শতাংশ।

স্বাস্থ্য খাত

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে ৮ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য এ বরাদ্দের রাখা হচ্ছে। যা চলতি অর্থবছরের বরাদ্দের চেয়ে ১৮ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, সবার জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের প্রতিশ্র”তি পূরণে সরকার ইতোমধ্যেই ৯ হাজার ৫২৫টি ক্লিনিক চালু করেছে। ৩৫টি উপজেলায় গর্ভবতী মহিলাদের জন্য মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার সেবা চালু, প্রজনন নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী কেনার জন্য এ খাতে ২১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মধ্যে জাতীয় পুষ্টি কার্যক্রমকে ১২৩ টি উপজেলায় স�প্রসারণের প্রকল্পটি চলছে।

একই লক্ষ্যে সব উপজেলা হাসপাতালকে ৫০ শয্যায়, ৯টি জেলা হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় বলে তিনি জানান।

শিক্ষা

নতুন অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে ১৭ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে শিক্ষায় বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৯৮৮৫ দশমিক ৩২ কোটি টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে রাখা হয়েছে ৮০৭৩ দশমিক ৯৫ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের তুলনায় দুটি খাতে যথাক্রমে ১০ ও ১৮ শতাংশ বরাদ্দ বেড়েছে।

এ বরাদ্দ ২০০৯-১০ অর্থবছরের সংশোধিত বরাদ্দ অপেক্ষা প্রায় ১৩.৫ শতাংশ বেশি। এই অর্থবছরের সংশোধিত বরাদ্দ ছিল ১৫৮২০ কোটি টাকা।

প্রতিরক্ষা

চলতি বাজেটে নেওয়া জাতীয় প্রতিরক্ষানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার লক্ষ্যে নতুন বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে এই খাতে।

অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী অর্থবছরে প্রতিরক্ষা নীতি চূড়ান্ত করা হবে।

এই অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৮ শতাংশেরও বেশি।

চলতি অর্থবছরের (২০০৯-১০) তুলনায় এবার বরাদ্দ বেড়েছে ১৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এই বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিলো ৮ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা।

এর আগের অর্থবছরে প্রতিরক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ ছিলো ৬ হাজার ২৪১ কোটি টাকা।

অগ্নিনির্বাপনে বরাদ্দ কমছে

অগ্নিকাণ্ড ও ভবন ধসে স�প্রতি রাজধানীতে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটলেও প্রস্তাবিত বাজেটে অগ্নিনির্বাপন ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ কমছে।

অগ্নিনির্বাপন ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা খাতে ১৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিলো ১৮৮ কোটি টাকা।

গত ১ জুন রাজধানীর বেগুনবাড়িতে একটি পাঁচতলা ভবন ধসে ২৫ জন মারা যায়। তার একদিন পর ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মারা যায় অন্তত ১১৯ জন।

টেলিযোগাযোগেও বরাদ্দ কমছে

বাজেটে ডাক ও টেলিযোগাযোগ অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন খাতে মোট ৫৪৫ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এই খাতে চলতি অর্থবছরে তুলনায় প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ কমছে প্রায় ৮২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে মোট বরাদ্দ আছে ৬২৭ কোটি ৬২ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।

ব্যর্থতা সত্ত্বেও পিপিপি খাতে বরাদ্দ বাড়ছে

সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) উদ্যোগে ব্যর্থতার পরও এবারের বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ ২০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার পিপিপি খাতে আড়াই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল।

অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, “আমি আগামী অর্থবছরের জন্য এই খাতে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।”

অবশ্য তিনি স্বীকার করেন যে, তারা এই উদ্যোগে ‘আশানুরূপ ফল’ অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন।

নারী ও শিশু স�পৃক্ত করার লক্ষ্য

নারীর ক্ষমতায়ন ও শিশুকল্যাণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সম্ভাব্য বিভিন্ন কর্মসূচির বিপরীতে ১২৫ কোটি টাকা থোক বরাদ্দসহ উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে ১ হাজার ২৪১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমাদের লক্ষ্য রাষ্ট্র ও সমাজের মূল স্রোতধারায় নারীকে স�পৃক্ত করা। ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রস্তাাবিত মোট ব্যয়ের প্রায় ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ (জিডিপির ৪ দশমিক ৪ শতাংশ) ব্যয় হবে জেন্ডার-সমতা নিশ্চিতকল্পে।”

শিশুশ্রম নিরসনকল্পে জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি, ২০১০ প্রণয়ন করা হয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে শিশুদের বিরত রাখার জন্য শিশুশ্রম নিরসন কার্যক্রম আমরা অব্যাহত রেখেছি।

“আগামী ৩ বছরে ৪০ হাজার শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে সরিয়ে এনে তাদেরকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান করা হবে। এতে করে তারা পিতামাতাকে তাদের কাজে সহায়তা করতে সক্ষম হবে।”

করজাল স�প্রসারণ
প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ে সফলতার জন্য অর্থমন্ত্রী মূলত তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন। এগুলো হলো- নতুন আয়কর দাতার সংখ্যা বাড়ানো, বিভিন্ন খাতে উৎসে কর সংগ্রহ এবং মূল্য সংযোজন করসহ বিভিন্ন শুল্ক বৃদ্ধি এবং নতুন করে আরোপ।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, “দেশে আয়কর অথবা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা যে কোনো ধরনের করদাতার সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত। আমরা আয়কর ও মূসক এ দুটি ক্ষেত্রেই করজাল স�প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছি।”

বাজেট প্রস্তাবে নতুন করে আরো পাঁচ লাখ করদাতা সৃষ্টির লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন তিনি।

তবে প্রস্তাবিত ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি ও কর্পোরেট কর হারে কোন পরিবর্তন আনা হয়নি।

চলতি ২০০৯-১০ অর্থবছরে ব্যক্তিশ্রেণীর করমুক্ত আয়সীমা ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।

নতুন করদাতার সৃষ্টির লক্ষ্যে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ গ্রহণ এবং ভাড়ায় ব্যবহার করা বাস, ট্রাক ইত্যাদি যানবাহেনর নিবন্ধন ও ফিটনেস নবায়নের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নেওয়া বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন বাজেটে।

বাজেটে নতুন করে উৎসে করারোপ করা হয়েছে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের ওপর।

এছাড়া শেয়ারবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানির শেয়ার লেনদেন থেকে অর্জিত আয়ের ওপর হ্রাসকৃত ১০ শতাংশ হারে করারোপ। শেয়ার বাজারে নিবন্ধিত কোম্পানির উদ্যোক্তা অংশীদারদের শেয়ার লেনদেনে অর্জিত আয়ের ওপর হ্রাসকৃত ৫ শতাংশ হারে করারোপ। প্রিমিয়াম শেয়ার বিক্রি ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রিমিয়াম মূল্যের ওপর করারোপ ৩ শতাংশ।

এছাড়া রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় মূল্য সংযোজনসহ অন্যান্য কর ও শুল্ক বৃদ্ধি এবং নতুন করে শুল্ক ও কর আরোপ করা হয়েছে।

৪০ বা ততোধিক আসনের ডিজেল, পেট্রোল ও সিএনজিচালিত বাস আমাদানির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) দিতে হবে।

কর অবকাশ

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের প্রস্তাবিত নতুন বাজেটে জ্বালানি সাশ্রয় করা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে উৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে।

বাজেটে সোলার প্যানেল ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্ব নির্মাতা প্রতিষ্ঠানসমুহের জন্য কর অবকাশের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। জন্মনিরোধক ওষুধ প্রস্তুতকারকদের জন্যও একই সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংযোজনকারীদের পরিবর্তে নির্মাতাদের সুযোগ সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ভারী শিল্প কারখানায় বিনিয়োগ আকর্ষনে স্থানীয় শিল্পকে রক্ষার লক্ষ্যে রিফ্রিজারেটর, ফ্রিজ, মটরসাইকেল নির্মাতাদের ক্ষেত্রে চার বছরের জন্য ভ্যাট মওকুফের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে আগামী অর্থবছরে সড়ক, সেতু ও রেলের জন্য ৭ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।

পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য সহজ শর্তে ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে। চলতি বছরই এই সেতুর কাজ শুরু হয়ে ২০১৩ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে অর্থমন্ত্রী আশাা প্রকাশ করেন।

বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রতিবছর দেশের শ্রমবাজারে প্রায় ২০ লাখ নতুন শ্রম শক্তি প্রবেশ করে। এই নতুন শ্রমশক্তি ও বিদ্যমান বেকারদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেটে মোট ১৫৮ কোটি কর্মদিবস কাজ সৃষ্টির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ২৮ কোটি কর্মদিবস বেশী।

এতে আরও বলা হয়, এই অতিরিক্ত কর্মদিবস দেশের বেকার জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।