ধামরাইয়ের কায়েত পাড়ায় এখন সাজ সাজ রব। সেখানে মঙ্গলবার শুরু দেশের ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা উৎসব। এবার কোটি টাকায় তৈরি নতুন রথে চড়ে মাসীর বাড়ি যাবেন  শ্রী শ্রী যশোমাধব। হিন্দু ধর্মের এ দেবতার মাসীর বাড়ি যাওয়া আর ফেরার আয়োজন নিয়ে ব্যস্ততার শেষ নেই আয়োজকদের। দেবতা যশোমাধবের জন্য এবার তৈরি করা হয়েছে নতুন একটি রথ। লাখো পূর্ণাথীর তৃষ্ণা মেটাতে সব আয়োজনই সম্পন্ন।

সকাল ১০টায় শুরু হয় ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা। বিকেল সাড়ে তিনটায় কায়েতপাড়ার অস্থায়ী মঞ্চে হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। প্রধান অতিথি হিসেবে এ রথযাত্রার উৎসবের উদ্বোধন করবেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। যশোমাধব মন্দির ও রথ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মেজর জেনারেল (অবঃ) জীবন কানাই দাস সে আয়োজনেই ব্যস্ত।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও যাদের নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন, পাবর্ত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, ধামরাইয়ের সাংসদ বেনজীর আহমেদ, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার রাজিত মিত্র, ঢাকা জেলা প্রশাসক মহিবুল হক, ধামরাই উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব তমিজ উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা নাজনীন, এনটিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনায়েতুর রহমান বাপ্পী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হোসেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পারভীন আক্তার প্রীতি, ধামরাই পৌর মেয়র দেওয়ান নাজিমউদ্দিন মঞ্জু, যশোমাধব মন্দির ও রথ পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাজীব প্রসাদ সাহা প্রমুখ।

বিকেল পৌনে ৫টায় শুরু হবে রথযাত্রা। ধামরাই পৌর এলাকার কায়েতপাড়া থেকে মুর্তিসহ রথটি পাটের রশি ধরে টেনে দেবতা শ্রী শ্রী যশোমাধবকে মাসির বাড়ি নিয়ে যাবেন এবং সেখান নয়দিন থেকে আগামী ২১ জুলাই তিনি ফিরবেন নিজ গৃহে। যার নাম উল্টোরথ। তবে রথ উৎসব ও মেলায় ধামরাই খুশির আমেজে ভাসবে পুরো একমাস জুড়ে।

রথযাত্রা উৎসব উপলে পৌরএলাকার কায়েতপাড়ার রথখোলা থেকে যাত্রাবাড়ি পর্যন্ত থাকবে উৎসবের মেলাঙ্গন। দীর্ঘ এ পথ জুড়ে বসানো হরেক রকমের দোকান মঙ্গলবার সকাল থেকেই খুলতে শুরু করে। বেদেনীদের চুড়ি, শিশুদের খেলনা, কুটির শিল্পের স্টলসহ বিভিন্ন রকমের কয়েক‘শ স্টল বসেছে সেখানে।

মেলার আয়োজনে আরও থাকছে দেশখ্যাত সার্কাস দলের সার্কাস, নাগরদোলা, পুতুল নাচ, মৃত্যুকুপ মোটরসাইকেল। জীবন কানাই দাস বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, ১৯৭১ সালে যশোমাধবের ৬০ ফুট উচ্চতার রথটি পাকহানাদার বাহিনী পুড়িয়ে দেয়। এরপর ২৭ ফুট উচু একটি ছোট কাঠের রথ তৈরি করে দীর্ঘ ৩৯ বছর রথটান চলতো। ২০০৬ সালে তৎকালীন ভারতীয় হাইকমিশনার বীনা সিক্রি ভারত সরকারের প থেকে আগের রথের আদলে নতুন রথ নির্মাণের ঘোষনা দেন। এ বছর ফেব্র“য়ারিতে কাজ শুরু করে চলতি সপ্তাহেই নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।

তিনি জানান, নতুন রথটি নির্মিত হয়েছে আদি রথটির আদলেই। লোহার পাত দিয়ে তৈরি রথেও ওপর সেগুন কাঠের পাতলা স্তর বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার কাঠের ওপর করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন কারু কাজ ও দেব-দেবীর বিভিন্ন মূর্তিচিহ্ন। জগন্নাথ, সুভদ্রা বলরামের সুদর্শনচক্র মূর্ত্তিসহ দেবদেবীর ছবি দিয়ে সাজানো ৪০ ফুট উচ্চতা আর ২০ ফুট প্রশস্ত এই রথ।

বয়সের ভারে জীর্ণ আগের রথটি সংরণের জন্যে রাখার হয়েছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী ট্রাস্টে। মঙ্গলবার রথযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নিয়মিত বৈঠক করে প্রশাসনের প থেকেও নেওয়া হয়েছে নানা পদপে। রথযাত্রা ঘিরে তৈরি হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা বলয়।

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার ইকবাল বাহার বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, রথযাত্রা উৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব,সাদা পোষাকে গোয়েন্দা নজরদারীর মাধ্যমে সকাল থেকেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিং করছে।’ জীবন কানাই দাস বলেন, ‘এ উৎসব বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব। ধর্মীয় সীমার উর্দ্ধে উঠে এ উৎসব এখন সার্বজনীন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে ধামরাই রথযাত্রা উৎসব।’