কিশোরগঞ্জের বুক চিরে প্রবাহিত নরসুন্দা নদী নতুন করে ভরাট ও দখল হচ্ছে। গত ছয় মাসে নদীর জায়গা দখল করে কিশোরগঞ্জ পৌর এলাকার অংশে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক বহুতল ভবন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নরসুন্দার কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আবারও দখল করে নিয়েছে উচ্ছেদ হওয়া অংশ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কিশোরগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র গৌরাঙ্গ বাজারে জ্ঞানদা সুন্দরী ব্রিজ, স্টেশন সড়ক, ঈশা খাঁ সড়ক, বড় বাজার, বত্রিশ, মণিপুরী ঘাট, একরামপুর, বয়লা, পাগলা মসজিদ, গুরুদয়াল কলেজ, আখড়া বাজার এসব এলাকার দুই তীরের বাসিন্দারা মাটি ভরাট করে নদীটি ক্রমশ দখল করে নিচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দখল চলছে কিশোরগঞ্জ পৌর এলাকায়। মৃতপ্রায় নরসুন্দায় গড়ে তোলা হয়েছে দোকান ও ঘরবাড়ি।
পৌর এলাকার পূর্বদিকে নরসুন্দাকে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে দুটি পুকুর। গত ছয় মাসে বত্রিশ, তারাপাশা, বড় বাজার, স্টেশন সড়ক, গৌরাঙ্গ বাজারসহ ৫০টি স্থানে নতুন করে স্থাপনা ও নদীর অংশ ভরাট করে ফেলেছে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এসব এলাকায় নদী দখলের ফলে শহরের বড়বাজার কাটাখলের কাছে, মণিপুরী ঘাট, হারুয়ার পাগলা মসজিদসংলগ্ন, পুরান থানা, একরামপুর, বয়লাসহ বিভিন্ন স্থানে নদীর চিহ্ন প্রায় মুছে গেছে।
জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা জানায়, ব্রহ্মপুত্রের শাখা নরসুন্দা হোসেনপুর উপজেলা থেকে উৎপন্ন হয়ে কিশোরগঞ্জের মধ্য দিয়ে জেলার পূর্বদিকে ইটনার চৌগঙ্গায় ধনু নদী গিয়ে মিশেছে। ৫৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীর ৩০ একর জমি ইতিমধ্যে দখল হয়ে গেছে। নদীর বিপুল পরিমাণ জমি অবৈধ দখলদারদের কবলে চলে যাওয়ায় দুই পারের সীমানা চিহ্নিত, শিকস্তি/পয়স্তি লাইন টানা এবং অবৈধ স্থাপনা ও দখলদারদের তালিকা প্রণয়নের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ১৯৯৬ সালে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। কমিটি প্রাথমিকভাবে কিছু কাজ করে নদীর সীমানা চিহ্নিত করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কাজটি আর এগোয়নি।
কিশোরগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা মঞ্চের আহ্বায়ক ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ সাদী প্রথম আলোকে জানান, ভূমিদস্যু, দুর্বৃত্তচক্র রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবারও নদী দখল শুরু করেছে। প্রশাসন এ ব্যাপারে উদ্যোগ না নিলে কিশোরগঞ্জের মানচিত্র থেকে নরসুন্দা হারিয়ে যাবে।
কিশোরগঞ্জের সহকারী কমিশনার ভূমি (সদর) মো. আমিনুল ইসলাম জানান, নরসুন্দার দখল ঠেকাতে সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. দেলোয়ার হোসাইন জানান, রাজস্ব বিভাগ থেকে ইতিমধ্যে দখল হওয়া অংশ চিহ্নিত করা হয়েছে। নরসুন্দার নাব্যতা ফিরিয়ে আনা ও শহর অংশে লেক করার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দের সঙ্গে সঙ্গে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।