tituঅাড়াই যুগ আগে টিটো ভাই (সৈয়দ আমিনুল হুদা টিটো) তাঁর একটি কবিতায় এ কথাগুলো লিখেছিলেন। আপাদমস্তক বিপ্লবী এ মানুষটি স্বেরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর ‘ঢাকা অবরোধ’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন। ২৮ বছর হয়ে গেলেও তাঁর আত্মদানের স্বীকৃতি মেলেনি। তাঁর পরিবার পায়নি সামান্য রাষ্ট্রীয় মূল্যায়ন। টিটোর লাশের হদিসও পায়নি পরিবার। ছেলের অকালপ্রায়াণের পর টানা ২৬টি বছর শহীদপিতা সৈয়দ শামসুল হুদা ছেলের লাশের খবরটা জানতে এর কাছে-তার কাছে ছুটে গেছেন।  স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের দুই নেত্রীর আমলে তাঁদের সরকারের কাছেও বহুবার আবেদন-নিবেদন করেছেন। অবশেষে সেই আড়াল করে রাখা শোক বুকে নিয়েই ২০১৩ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি মারা যান।

টিটো ভাইকে খুব কাছে থেকে দেখেছি। তাঁর সঙ্গে মিছিলে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল সে-সময়। এতটা নিরাভরণ, কোমলপ্রাণ মানুষ আমি জীবনে কম দেখেছি। শ্রমিক-কৃষকের রাজনীতি করবেন বলে ব্রত নিয়েছিলেন। তাই পাটকলে বস্তা সেলাইয়ের কাজ করেছেন। চা-সিঙ্গারা-পুরির দোকান করেছেন বাজিতপুরে। অস্থির চিত্তের মানুষটি কোথাও স্বস্তি খুঁজে পাননি। যতদূর জানা যায়, শহীদ টিটো কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্র ইউনিয়নে সহসভাপতি, জেলা সিপিবির সদস্য ও বাজিতপুর থানা ক্ষেতমজুর সমিতির সভাপতি ছিলেন।

তাঁর মৃত্যুর পর আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ, প্রথম আলো ও কালের কণ্ঠে বহুবার প্রতিবেদন করেছি। সেসমব প্রতিবেদনে বলতে চেয়েছি, স্বৈরাচারবিরোধী অান্দোলনে শহীদদের কাতারে টিটোর নাম তোলা হোক। কেন না, নূর হোসেনের চেয়ে টিটোর অবদান তো কোনো অংশেই কম ছিল না! বলেছি, তাঁর নিজের প্রিয় প্রতিষ্ঠান বাজিতপুর কলেজের ছাত্রাবাসটিকে টিটোর নামে নামকরণ করা হোক। আরো কত কী! অনেকে টিটোর পিতাকে নানা আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি।

প্রতিবছরই ১০ নভেম্বর কিশোরগঞ্জ ও বাজিতপুরে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শহীদ টিটোকে স্মরণ করে তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা। টিটোর নিজ সংগঠন ঢাকায় পালন করে ‘টিটো দিবস’। এ উপলক্ষে শহীদ টিটোর বাড়ি বাজিতপুরের মোল্লাপাড়ায় মিলাদ, দোয়া ও ভোজের আয়োজন হয়।  এবার উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীও টিটো দিবস পালন করছে।  বাজিতপুর কলেজ চত্বরে ১০ নভেম্বর বিকাল ৩টায় স্মরণসভা হবে।