হাজার হাজার অতিথি পাখির কিচিরমিচিরে মুখর এখন মৌলভীবাজারের হাইল হাওরের বাইক্কা বিল। স্থানীয় বাসিন্দা পাখি বলে পরিচিত বেগুনি কালেমের সংখ্যা এই বিলে চোখে পড়ার মতো। তবে এবার শুধু বাইক্কা বিলই নয়, বাইক্কা বিলের আশপাশে হাইল হাওরের অন্যান্য বিল এলাকাতেও পাখি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।

আইপ্যাক (ইন্টিগ্রেটেড প্রোটেক্টেড এরিয়া কো-ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট) সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল ও সদর উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত হাইল হাওরে অতীতে ১৭৫ প্রজাতির পাখি দেখা গেছে। এর মধ্যে ৯৫ প্রজাতিই হচ্ছে জলচর। কিন্তু বিল সেঁচে মাছ ধরা, অবাধে পাখি নিধন, নির্বিচারে জলজ উদ্ভিদ আহরণসহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে হাইল হাওরে পাখি ও মাছের সংখ্যা কমে যায়। হাওরে পাখি ও মাছের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ২০০৩ সালের জুলাই মাসে ভূমি মন্ত্রণালয় প্রায় আড়াই শ একর আয়তনের বাইক্কা বিলকে জলাভূমির অভয়াশ্রম ঘোষণা করে। বেসরকারি সংগঠন ম্যাচ (ম্যানেজমেন্ট অব অ্যাকুয়াটিক সিস্টেম থ্রো কমিউনিটি হ্যাজবেনট্রি) প্রকল্প বাইক্কা বিলে গড়ে তোলে স্থায়ী অভয়াশ্রম। এখানে মাছ ধরা, জলজ উদ্ভিদ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়।

এতে সুফলও পাওয়া গেছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ পেয়ে বিলুপ্তপ্রায় ও বিপন্ন নানা জাতের মাছ বিলে বংশ বিস্তার করে। সেই মাছ বর্ষায় হাওরের বিস্তীর্ণ জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এতে হাওরে মাছ বেড়েছে। বেড়েছে শাপলা, পদ্ম, মাখনা, সিংরাইসহ নানা জাতের জলজ উদ্ভিদ। আর বাইক্কা বিল নিরাপদ স্থান ও পরিবেশ ফিরে পাওয়ায় অতিথি পাখি এখানে ফিরে আসতে থাকে। এ বছরও অসংখ্য পাখি এসেছে। পাখির মধ্যে হাঁসজাতীয় পাখিই বেশি। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, লাল ঠোঁট ও বেগুনি রঙের স্থানীয় বাসিন্দা বলে পরিচিত পাখি বেগুনি কালেমের সংখ্যা অনেক। এরা বিলের পাড় ঘেঁষে কচুরিপানা ও ঘাসের ওপর ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ ছাড়া কিছু পাখি এসেছে, যা এই বিলে আগে দেখা যায়নি।

বাইক্কা বিল ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মিরাশ মিয়া গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে জানান, সব ধরনের প্রচুর পাখি এসেছে। তবে এবার গত বছরের চেয়ে পাখি কিছুটা কম এসেছে। এখন শীত কমতে থাকায় পাখির সংখ্যাও কমা শুরু করেছে।

এলাকাবাসী ও আইপ্যাক সূত্রে জানা গেছে, এবার শুধু বাইক্কা বিল নয়, হাইল হাওরের আশপাশের বিল এলাকাতেও পরিবেশ ফিরে আসায় পাখিরা ছড়িয়ে পড়ছে। এটা ভালো লক্ষণ। বিল এলাকায় বেড়েছে মেছো বাঘসহ বিভিন্ন রকম বন্য প্রাণী। গত বছর (২০১০) ফেব্রুয়ারি মাসে পাখিশুমারিতে বাইক্কা বিলে সাড়ে ১২ হাজার পাখি গণনা করা হয়েছিল। ৪০ প্রজাতির পাখি এসেছিল। এ বছর এখনো পাখি গণনা হয়নি। চলতি মাসে পাখি গণনা হতে পারে বলে জানা গেছে।

আইপ্যাকের ক্লাস্টার পরিচালক মাযহারুল ইসলাম জাহাঙ্গীর গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় হাইল হাওরে পাখি কমে গিয়েছিল। অভয়াশ্রম করার পর বিলে মাছ বেড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে পাখিও বেড়েছে। বাইক্কা বিল দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, হাওর থেকে মাছ ও পাখি হারিয়ে যায়নি। হাওরে পরিবেশ ফিরে এলে মাছ, পাখি ও জলজ উদ্ভিদ ফিরে আসবে।’ ক্লাস্টার পরিচালক বলেন, অনেকেই মনে করে, পাখি মাছ খেয়ে ফেলে। এ ধারণা ঠিক নয়। খুব কম পাখিই শুধু মাছ খেয়ে থাকে। বেশির ভাগ পাখিই জলজ উদ্ভিদের বীজ, কচিপাতা ও শস্যদানা খেয়ে থাকে। বাইক্কা বিলে কালেম পাখির সংখ্যা অনেক। এরা স্থানীয় বাসিন্দা। কিন্তু বর্ষায় বিল এলাকায় থাকে না, অন্য কোথাও চলে যায়। 

-Prothom Alo