ex210212c

ডা. মাজহারুল হক

অমর একুশেপঞ্চাশ দশকের সূচনাতেই আমি কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ ছেড়ে চিকিৎসায় উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য পুরাতন ঢাকার আলু বাজারের ১১৭ নং লুৎফর রহমান লেনের এক আত্মীয়ের বাসায় উঠি। নতুন শহরের টানে প্রতিদিন সকাল সকাল বাইরে বের হয়ে যাই আর বিভিন্ন স্থানে মানুষের আলাপ-আলোচনা মন দিয়া শুনি। মানুষের মধ্যে একটি চাপা ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ধ্বনি বেশ বুঝিতে পারি। অবাঙ্গালি পাকিস্তানি, উর্দুভাষী ও বিহারিরা এসে সকল কিছু দখল করে নিচ্ছে বলে মানুষের মধ্যে কানা-ঘুষা শুনতে পাই। বাসার পাশেই ফুলবাড়িয়াতে রেল স্টেশন। পরিচিত লোকের সন্ধানে সেখানে প্রায়শ গিয়ে দেখি স্রোতের মত অবাঙ্গালি শরণার্থী আসছে। মানুষের ক্ষোভের কারণ বুঝতে অসুবিধা হয় না। তৎকালীন ঢাকার প্রধান ব্যবসাকেন্দ্র নবাবপুর রোডে প্রতিদিন চালাচলের ফাঁকে নানা পরিবর্তন লক্ষ্য করি। বিভিন্ন দোকানের সাইন বোর্ড ও মালিকানা বদলে যেতে দেখা গেল। দোকান ও মালিকের নাম পড়ে তাদের অবাঙ্গালি পরিচিতি অনুধাবন করতে কষ্ট হয় না।তখন ঢাকা শহর এত বড় ও বিস্তৃত ছিল না। রেল স্টেশনের দক্ষিণ দিকে নওয়াবপুর থেকে সদরঘাট পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল শহরের ব্যাপ্তি। পত্র-পত্রিকা পাঠের জন্য স্টেশনে ও নানা দোকানে বসে বহুজনের বিচিত্র সব কথা শুনতে পাই। লক্ষ্য করি, মানুষের ক্ষোভ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরি-বাকড়ি বাঙ্গালিদের হাত-ছাড়া হওয়ায় তারা সংক্ষুব্ধ। সচিবালয় ও বিভিন্ন অফিস ঘুরে মনে হল সব কিছু অবাঙ্গালিদের দখলে চলে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র ঢাকা শহরেই বাংলা ভাষার দুর্দিন লক্ষ্য করি। চারিদিকে উর্দু ভাষার জয় জয়াকার। কতিপয় মোসাহেব ও ধামাধরা বাঙ্গালিকে দেখা গেল জাতে উঠার জন্য বাংলা ছেড়ে উর্দুতে কথা বলছে! খবর পাওয়া গেল ঢাকার ভাল ভাল জায়গা-জমি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য অবাঙ্গালিকে দেওয়া হচ্ছে। কোন কোন শরণার্থী ঘটি-বাটি নিয়ে এসে কীভাবে কোটিপতি হয়েছে, সে আলোচনাও লোক মুখে চলতে লাগল।শরণার্থীদের মধ্যে স্বজন-অঞ্চল-আত্মীয়প্রীতির মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য গড়ার ধুম দেখা গেল।পশ্চিমা প্রশাসকদের খয়ের খাঁ হয়ে কোন কোন বাঙ্গালিও কীরূপে ভাগ্য বদল করছে, সেটাও লোক চর্চ্চার বিষয়ে পরিণত হল। ব্যক্তিগতভাবে আমার অবস্থা সেই সময় বেশ নাজুক বলেই অনুভব করতে লাগলাম। বাংলাদেশের লোক হয়েও আমি ঢাকায় আত্মীয়-পরিজনহীন সংখ্যালঘুই ছিলাম। তদুপরি ভিন্নভাষীদের দাপটের সামনে আমার লঘুত্ব একেবারে কিনারায় এসে পৌঁছিল। এমন পরিস্থিতিতে দেশের একমাত্র মেডিকেলে ভর্তি বিষয়ে আশা-নিরাশার আক্রান্ত হলাম। হতাশ না-হয়ে খুব মন দিয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকি এবং অবশেষে তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যেও ভর্তি পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে আমি মেডিকেলে প্রবেশের সুযোগ পাই।ঢাকা মেডিকেলের ভবণ ও প্রাঙ্গণটি ছিল ১৯০৫ থেকে ১৯১১ পর্যন্ত সময়কালে পূর্ব বঙ্গ ও আসাম প্রদেশ সরকারের সচিবালয়। বঙ্গভঙ্গ রহিত হলে ভবণটি ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ভবণের পশ্চিম পার্শ্বে ছাত্রদের থাকার স্থান নির্ধারিত হয়। ১৯৪২ সালে পশ্চিমদিগস্থ আবাসিক স্থানটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আহত সৈন্যদের দখলে চলে যায়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর উক্ত স্থানটি স্থায়ীভাবে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জন্য ব্যবহৃত হতে থাকে। ভবণে পূর্ব অংশটি তখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন ছিল। অল্প কিছুদিন পরে নীলক্ষেত এলাকায় নতুন ভবণ স্থাপিত হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম সেখানে স্থানান্তরিত হয়। মেডিকেলের সামনের রাস্তাটিকে সেক্রেটারিয়েট রোড নামে ডাকা হত। সচিবালয়ের কারণেই এহেন পরিচিত হয়েছিল। মনুমেন্টের মত দুটি বিশাল তোরণ অতিকায় ভবণ ও প্রাঙ্গণটিকে বেষ্টনী করে রেখেছিল। তৎকালীন আমলে এই অতিকায় ভবণকে ঢাকার অন্যতম বৃহত্তম স্থাপনা বললে অত্যুক্তি হবে না।পূর্ব দিকের তোরণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পশ্চিম দিকের তোরণ মেডিকেল কলেজের পথ নিদের্শ করত। প্রধান ভবণটি ছিল দ্বিতল বিশিষ্ট এবং পূর্ব হতে পশ্চিম দিকে ছড়ানো। পূর্ব ও পশ্চিমের শেষ প্রান্তে পাখার মত সংযুক্ত দালাল মেডিকেল ভবণটিকে দুই দিকে বিশেষভাবে প্রসারিত করেছিল। পূর্ব ও পশ্চিম ব্ল্লকের বাইরে দক্ষিণ দিকে একটি তৃতীয় ব্ল্লক নির্মাণ করা হয়, যা কেন্দ্রিয়/প্রধান হলের পিছন দিকে অবত ছিল। ভবণের মাঝখানে তিনটি ব্ল্লকের প্রবেশ পথ এসে একটি বিন্দুতে মিলেছে। এই ভবণের অন্যতম বৈশিষ্ট হল সারি সারি কক্ষের সামনে একই ছাদের নিচে বিশাল করিডোর ও বারান্দার ব্যবস্থা, যা খুবই খোলামেলা ও লোক সমাগমের উপযুক্ত। পূর্ব ও পশ্চিমে অভিন্ন সংখ্যক কক্ষ, করিডোর ও বারান্দা ছিল। ভবণের কেন্দ্রিয়/প্রধান/মধ্যস্থ হলের উপরে গম্বুজ এর আকর্ষণ বৃদ্ধি করে। ঢাকা শহরের মোঘল ও ইসলামী রীতির স্থাপত্যের মধ্যে এই ভবণ একটি আধুনিক সংযোজন। একে রেনেসাঁর যুগের ক্লাসিক্যাল ভবণের সঙ্গে তুলনা করা হত।

রুচি ও শৈলীর বিবেচনায় ভবণটি সম্পূর্ণভাবে ইউরোপিয় রীতির অনুসরণে নির্মিত তৎকালীন ঢাকার একটি আধুনিক স্থাপনা।ঢাকা মেডিকেলের প্রথম দিকের ক্লাসগুলোতে আমি আলু বাজার হতেই যোগ দিতে থাকি। প্রায় দুই মাইল হেঁটে আমি ক্লাসে উপস্থিত হতাম। আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হত সকাল ৮টায় এবং শেষ হত দুপুর দুইটায়। ক্লাসে সহপাঠী হিসাবে অনেক অবাঙ্গালি ও কলিকাতা প্রত্যাগতের দেখা পেলাম। সহপাঠীদের মধ্যে আরও পাই ফজলে রাব্বী ও আলিম চৌধুরী (শহীদ বুদ্ধিজীবী), ওয়ালীউল্লাহ (রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ভাই), আ. মান্নান (কটিয়াদী থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য), আ. গফুর (বাসদ নেতা আবদুল্লাহ সরকারের ভাই), হারুন (চক্ষু বিশেষজ্ঞ)। আমাদের কাছে জহির রায়হান নিয়মিত আসা-যাওয়া করত। আলিম তার বিশিষ্ট বন্ধু ছিল এবং তারা শিল্প-সাহিত্য কর্মকাণ্ডে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিল।মেডিকেল কলেজের প্রথম বছরে আমরা এনাটমি, ফিজিওলজি, কেমিন্ট্রি ও ফার্মাকোলজি পড়ি। প্রথম বর্ষ হতেই প্র্যাকটিকেল ক্লাস বেশি ছিল। এনাটমিতে শব বিচ্ছেদ করিতে হত। প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগত। মানুষ হিসাবে মানুষের শরীরে ছুরি চালনাকে সহজে মেনে নিতে পারি নি। তদুপরি মৃতের দেহের উপর একতরফাভাবে কাটাকাটিকেও অনৈতিক ও ঘৃণ্য মনে হত। ক্রমে ক্রমে পরিবেশের কারণে তা সহ্য হয়ে গেল। আমাদের এনাটমির শিক্ষক ছিলেন টাঙ্গাইলের প্রফেসর ডা. আবদুর রহমান। তিনি অত্যন্ত কড়া মেজাজের মানুষ ছিলেন। তার ব্যক্তিত্বের কারণে কোন ছাত্র ক্লাসে ফাঁকি দিতে পারত না। ফিজিওলজি ও কেমিস্ট্রির ক্লাসের শিক্ষকরা অত্যন্তযোগ্য ছিলেন। তাত্ত্বিক পাঠের সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টিকে তারা প্র্যাকটিকেল বা ব্যবহারিকভাবে বুঝিয়ে দিতেন। ফার্মাকোলজির প্রফেসর শামসুদ্দীন সাহেব আত্মভোলা ধরনের লোক ছিলেন। আপন মনে তিনি তার পড়াশোনা ও ক্লাস চালিয়ে যেতেন। কে এলো আর কে গেল, তা তিনি লক্ষ্য রাখতে পারতেন না। এইভাবে আমাদের পড়াশোনা চলতে লাগল।

ঢাকা মেডিকেলে অধ্যয়নের সময় ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মত জাতীয় রাজনীতির ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সরাসরি সম্মুখীন হলাম এবং ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে ও আমার সহপাঠীগণ তাতে অংশ গ্রহণ করলাম। আমিও ততদিনে আলু বাজারের ঠিকানা হতে ব্যারাক নামে পরিচিত মেডিকেল হোস্টেলে এসে স্থায়ী হয়েছি। ইত্যবসরে রাজনীতিতে নানারূপ পরিবর্তন সাধিত হল। ভাষার জন্য লড়াইয়ের ক্ষেত্রও তৈরি হয়ে গেল। সময়টি ছিল পাকিস্তান সৃষ্টির পরবর্তী-বছর, ১৯৪৮ সাল। এই সালের ১৯ মার্চ ঢাকায় আসেন তৎকালীন পাকিস্তানের ‘জাতির পিতা’ (!) মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। ঢাকায় অবস্থানের সময় জিন্নাহ সাহেব পৃথক দুইটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। একটি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ২১ মার্চ তারিখে, যে স্থানটিকে আমরা এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বলি, সেখানে। দুই দিন পর ২৪ মার্চ তারিখে তিনি বক্তৃতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। উভয় স্থানের বক্তৃতাতেই তিনি যুক্তিহীন রূঢ়তায় উচ্চারণ করেন যে, ‘‘উর্দু, এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।” উভয় স্থানেই সমবেত ছাত্র-জনতা জিন্নাহ সাহেবের উক্তির তাৎক্ষণিক ও তীব্র প্রতিবাদ জানায়।

ঢাকা মেডিকেলের সামনে ১৯৫২

প্রতিবাদের ধ্বনি শুনে জিন্নাহ সাহেব সফর শেষে ঢাকা হতে পাকিস্তানে ফিরিয়া গেলেন। কিন্তু ভাষার প্রশ্নে কোনরূপ সমাধান হল না; মানুষের প্রতিবাদকে আমলে নেওয়া হল না। উপরন্তু, পাকিস্তানের তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী বাংলাকে উপেক্ষা করে উর্দুর পক্ষে একতরফাভাবে আগ্রাসনমূলক তৎপরতা চালাতে লাগল। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাঙ্গালিদের মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধি পায়। এহেন অবস্থান ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫০ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র সভায় আবদুল মতিনের প্রস্তাবের ভিত্তিতে গঠিত হল ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’। আবদুল মতিন হলেন আহ্বায়ক। এই পরিষদ গঠনের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলন নবশক্তি লাভ করল এবং আপামর ছাত্র-জনতার মধ্যে প্রতিবাদের ধারা বৃদ্ধি পেল। সংগ্রাম পরিষদ ভাষার দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম ও জনমত গঠন শুরু করল।

জিন্নাহর বক্তব্য ও পাকিস্তানপন্থী নেতৃবৃন্দের জাতি-বিরোধী অপতৎপরতায় বাঙ্গালিদের মধ্যে সঞ্চারিত ক্ষোভ আরও ঘনীভূত হল এবং সংগ্রাম পরিষদের ভাষার দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম ও জনমত গঠন অব্যাহতভাবে চলতে লাগল। সামগ্রিক পরিস্থিতি এরূপ ছিল যে, পশ্চিমা ও তাদের মোসাহেবদের শোষণ-নিপীড়ণমূলক রাজনীতিতে মানুষ অতিষ্ঠ হইয়া গেল। সর্বত্র বাঙ্গালিরা কোণঠাসা হয়েছিল। এহেন অবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা বাংলার স্থলে উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা রূপে চাপিয়ে দেওয়ায় মানুষ মরিয়া হয়ে গেল। বাঙ্গালি ও বাংলা ভাষা বিরোধী কার্যকলাপের প্রতিবাদে ক্রমে ক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সঙ্গে দেশের সমগ্র ছাত্রসমাজও ক্ষোভে-বিক্ষোভে ফেটে পড়ল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ঢাকা মেডিকেলের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এই কারণে উত্তেজনা ছড়িায়ে পড়ে। সেই উত্তাপ-উত্তেজনায় আমরা মেডিকেলের ছাত্ররাও প্রবলভাবে ভাগীদার হলাম।

১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি খবর পাই, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে যোগ দিতে এসে ঘোষণা দিয়ে উর্দুকে বাংলার উপরে রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে বসিয়েছেন। তাৎক্ষণিক প্রতিবাদে ঢাকা শহর বিদ্যুতের স্পর্শে চমকিয়ে উঠল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে নানা কর্মসূচির খবর আমাদেরকে জানান হল। শহরের সর্বত্র উত্তেজনা দেখা দিল। পুলিশ রাস্তায় নেমে এল ও ১৪৪ ধারা জারি করে পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করল। কিন্তু আন্দোলনরত ছাত্রদের দমান গেল না। ছাত্রদের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও সামিল হলেন। তাৎক্ষণিকভাবে ২৯ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ তো অনুষ্ঠিত হলই; আরও হরতাল-সভা-সমাবেশের সূচনা ঘটিল। ৩১ জানুয়ারি ঢাকা বার লাইব্রেরি হলে মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্র ভাষা সংগ্রাম কমিটি গঠিত হল। আমরা আন্দোলনরত অলি আহাদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, গাজিউল হক, আবদুল মতিন প্রমুখে কথা জানিতে পারি।

এভাবে জানুয়ারি মাস শেষ হয়ে ফেব্রুয়ারি মাস এল। পুরো ফেব্রুয়ারি মাসটিই যেন অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল। এমন কোন দিন ছিল না আন্দোলনহীন। প্রত্যহ ভাষার দাবিতে মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে থাকে। ৪ ফেব্রুয়ারি ঘটল এক অভূতপূর্ব ঘটনা। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহুত একটি বিশাল প্রতিবাদ মিছিল বাহির হল। আমরা মেডিকেলে ছাত্ররাও উক্ত মিছিলে যোগদান করে বাংলা ভাষার পক্ষে প্রকাশ্য রাজপথে দাবি জানিয়ে এলাম। বিশাল মিছিল নিয়ে আমরা শহর প্রদক্ষিণ করে উপস্থিত হলাম মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিনের বাসভবনের সামনে। বর্তমানে যা বাংলা একাডেমী, তার ভেতরে পুরাতন যে বাড়িটি এখনও রয়েছে, সে বাড়িটির নাম বর্ধমান হাউস। এই বর্ধমান হাউসই ছিল মুখ্যমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন। স্মরণ করতে পারি, আমরা শ্লোগানে মুখরিত মিছিল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে এসে উপসি’ত হলাম। সে স্মরণীয় মিছিলই নয়, আমাদের বন্ধু-বান্ধবরা নিয়মিতভাবে একই ভবনের প্রতিবেশী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মিছিল-সমাবেশে গিয়ে মিলিত হতাম।

তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলতে বর্তমানের মতো এতো বিরাট ক্ষেত্র ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দৃশ্যত বর্তমান ঢাকা মেডিকেলের সঙ্গে লাগানো ছিল। বর্তমান শহীদ মিনার ও মেডিকেলে ইমার্জেন্সির আশে-পাশেই সকল আন্দোলন কর্মকাণ্ড চলছিল। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমরা এসবের কেন্দ্রস্থলে ছিলাম এবং মেডিকেল ছাত্ররা নৈতিক ও মানসিকভাবে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে ওৎপ্রোতভাবে যুক্ত থাকি। ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখের দিকে ছাত্র আন্দোলন সুতীব্র হল। অনেকে গ্রেফতার বরণ করলেন। সরকার এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা বহাল করল। সভা-সমাবেশ-হরতাল নিষিদ্ধ করা হল। কিন’ আমরা তখন সংগ্রামমুখর। বাংলার ছাত্র সমাজ তখন অকুতোভয়। কে আমাদেরকে রুখবে! এমন সাধ্য কার!! রাত্রি বেলাতেই সিদ্ধান্ত জানা গেল যে, ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হবে। সমাবেশ হবে। মিছিল হবে। প্রতিবাদ-প্রতিরোধ চলবেই।

রাত্রি শেষে এলো ২১ ফেব্রুয়ারি । সেদিন সকাল হতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পরিস্থিতি আপাত দৃষ্টিতে শান্তই ছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা ৫জন ৫জন করে ১৪৪ ধারার ভেতরেও মেডিকেলে আমাদের হোস্টেল, যা ব্যারাক নামে পরিচিত ছিল, তার সম্মুখে সমবেত হতে লাগল। আজিমপুর ও সলিমুল্ল্লাহ হলের দিক হতেও লোকজন আসতে লাগল। মধুর ক্যান্টিনের দিকেও ছাত্ররা সংগঠিত হল। অবিরাম ছাত্রস্রোত রুদ্ধ করতে প্রথমে পুলিশের পক্ষ হতে শুরু হয় লাঠিচার্জ। এর পর শুরু হল টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ। কিন্তু কোনওভাবেই বিক্ষোভ দমন করা সম্ভব হল না। বেলা যতই বাড়তে লাগল, ততই বিক্ষোভ তীব্রতর হতে লাগল; প্রতিবাদ-বিক্ষোভে জনসমাগমও হু হু করে বৃদ্ধি পেল। বিশ্ববিদ্যালয় মাঠ, মেডিকেল কলেজ গেইট প্রভৃতি এলাকায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ সমাবেশ পুঞ্জিভুত হতে লাগল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সাথে সংহতি জানাতে হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় হতে শুরু করে হল বয় পর্যন্ত এসে মিছিলে একাত্ম হল। এরই মধ্যে পুলিশের সঙ্গে আমাদের সংঘর্ষ আরম্ভ হল। এমন অবস্থায় বেলা তিন ঘটিকার দিকে পুলিশের বন্দুক হতে হঠাৎ গুলি বর্ষণের আওয়াজ শোনা গেল। প্রচণ্ড উত্তেজনা ও হৈ চৈ-এর মধ্যে আন্দোলনরত ছাত্রদেরকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সন্নিকটে আমাদের হোস্টেলে এসে আশ্রয় নিই।

বহুজন আহত হল। আহত ও নিহতদের ইমার্জেন্সিতে নেওয়া হল। আমরা মেডিকেলের ছাত্ররা ইমার্জেন্সিতে ছুটে গিয়ে বহু আহতকে কাতরাতে দেখলাম। স্বাধীন দেশে পুলিশের নির্মম অত্যাচারের চিত্র যে এত ভয়াবহ হতে পারে, তা না দেখলে জানতাম না। হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ আবুল বরকতকে দেখলাম। তাঁর তলপেটে গুলি লেগেছিল। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ হিসাবে তিনি আমাদের চোখের সামনে সকলকে চিরদিনের মত ছেড়ে পরপারের পথে চলে গেলেন। শহীদ আবুল বরকতের পর গুলিবিদ্ধ হন রফিকুদ্দিন। তিনি ছিলেন মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজের ছাত্র। তাঁর পিতা ছিলেন বাদামতলীর কমার্শিয়াল আর্ট প্রেসের মালিক। ২১ ফেব্রুয়ারির আরেক শহীদ আবদুল জব্বার। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহে।

কুলিয়ারচরে আমার গ্রামের বাড়ির সম্মুখ দিয়া প্রবাহিত পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম পার্শ্বে গফরগাঁও থানার পাঁচুয়া গ্রামের এই ভাষা-শহীদ ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে এক আত্মীয়-রোগী ভর্তি করতে এসেছিলেন। তিনি আমাদের মেডিকেল কলেজ হোস্টেলেই এলাকার একজন ছাত্রের কক্ষে এসে উঠেছিলেন। গত কয়েকদিন যাবত তাঁকে কলেজ ক্যান্টিন ও হাসপাতালে দেখেছিলাম। অদৃষ্টের ইঙ্গিতে তিনিও শহীদের তালিকায় নাম লিখালেন। আমাদের চোখের সামনে রক্ত, মৃত্যু আর আহতদের আহাজারি দেখে ক্ষণকালের জন্য আমরা স-ব্ধ হয়ে গেলাম বটে। কিন্তু সেই সুতীব্র আঘাত ও আক্রমণ আমাদের মধ্যকার একটি ঘুমন্ত ক্ষত-বিক্ষত বাঘকে জাগিয়ে দিল। বন্ধু-সহপাঠীদের মধ্যেও লক্ষ্য করি অভিন্ন ক্ষোভের লেলিহান অগ্নিশিখা প্রজ্বলিত হয়েছে।

এরপর দিন অর্থাৎ ২২ ফেব্রুয়ারির সকাল হতেই দলে দলে বিক্ষুব্ধ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। ঢাকা মেডিকেল চত্বরের যেখানে শহীদদের জানাজা হওয়ার কথা ছিল, মৃতদেহ না পাওয়ার সেখানেই গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হল। গভীর রাত্রে সরকারের লোকজন গোপনে মৃতদেহ সরিয়ে নিয়ে আন্দোলনকে চাপা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তা ব্যর্থ হল। কমপক্ষে এক লক্ষ মানুষ জানাজায় অংশ গ্রহণ করতে সমবেত হয়। তৎকালের ঢাকায় উক্ত জনসমাবেশ সুবিশাল জনসমুদ্ররূপে আমাদের কাছে মনে হল। আমরা তো বটেই আমাদের শিক্ষকবৃন্দ কিংবা নগরীর প্রবীন নাগরিকগণও এরূপ জনসমুদ্র ইতিপূর্বে ঢাকা শহরে দেখতে পায় নি। গায়েবানা জানাজার বিষয়টিও ঢাকা তথা বাংলাদেশে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে শুনতে পেলাম। ২১ ফেব্রুয়ারির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ২২ ফেব্রুয়ারি ছিল মূলত মিছিল ও প্রতিবাদের দিন। সমগ্র ঢাকা শহরকে সেদিন মিছিলের নগরীরূপে দেখতে পাওয়া গেল। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা রাজপথ প্রকম্পিত করে তীব্র ঘৃণা ও প্রতিবাদ প্রকাশ করতে লাগল। বিক্ষুব্ধ জনতার প্রতিবাদ মিছিলে ২২ ফেব্রুয়ারিও গুলি চলল।

সে দিন প্রাণ হারালেন সফিকুর রহমান। তিনি ছিলেন হাইকোর্টের কর্মচারী। জানা গেল যে, তিনি তাঁর বাসা হতে সাইকেল চালিয়ে অফিসে আসছিলেন। কিন্তু নবাবপুরের মোড়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হলেন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে মেডিকেলে আনা হলে আমরা ছুটিয়া গিয়ে জানতে পারলাম যে, তিনিও শহীদের তালিকায় নাম লিখিয়ে পরলোকের পথে পাড়ি জমিয়েছেন। আহত-নিহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেলে জনস্রোত নেমে এল। অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও আসলেন। আমরা যত সংখ্যক রক্তাক্ত লোক দেখেছি, তাত উক্ত চার জনই শহীদ হয়েছে বলে মনে হয় না। হাসপাতালের নিম্ন শ্রেণীর কর্মচারীদের মধ্যে কানাঘুসা শুনিতে পেলাম যে, পুলিশ ও ইপিআর অনেক মৃতদেহ সরিয়ে ফেলেছ। ফলে সেসব অনামা শহীদদের নাম-পরিচয় জানা সম্ভব হয় নি।

২৩ ফেব্রুয়ারিও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে অমর একটি দিন। এ দিনেই আমাদের হোস্টেলের পার্শ্বে ঢাকা মেডিকেলের প্রাঙ্গণে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণের প্রাথমিক কাজটি সম্পন্ন হয়। সে দিন নির্মিত ‘‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’’টিই পরবর্তীকালের শহীদ মিনার। আজকে যে শহীদ মিনার আমরা দেখছি, সেটা শুরুতে নির্মিত হয়েছিল মাত্র এক রাত্রের মধ্যে। সেই স্মৃতিস-ম্ভ তৈরি হতে শুরু করে নির্মাণ পর্যন- সবটুকু কৃতিত্ব আমরা যারা সে সময়ের ঢাকা মেডিকেলের ছাত্র ছিলাম তাঁদের। ভাষা আন্দোলনে আমার ব্যক্তিগত সংযোগ স্মৃতির ঘটনাটি ২০০৭ সালে জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রকাশিত ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সংকলনে আলী হাবিব বিস্তারিত লিখেছেন: ‘‘ঢাকা মেডিকেলের ছাত্ররা এক রাতের মধ্যে এ প্রশংসনীয় কাজটি করেছিলেন।” আমাদের প্রত্যক্ষ অংশ গ্রহণের সেসব কথা শহীদ মিনার নির্মাণের কাজে জড়িত অপর এক ছাত্র সাঈদ হায়দার তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন: “মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা শহীদ মিনার তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। এটাকে স্বতঃস্ফূর্ত একটা পরিকল্পনা বলা চলে। ২৩ তারিখ বিকেল থেকে কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ২৪ তারিখ ভোরে।” আমরা এক প্রকার গেরিলার মত গোপনে নির্মাণ কাজ চালিয়ে ছিলাম। ঘোষণা দিয়ে ঘটা করে তা নির্মান করা হয় নি কৌশলগত কারণে। পূর্বাহ্নে জানতে পারলে পাকিস্তানপন্থীরা সেটা গড়তেই দিত না।

আমরা নির্মাণ-সংক্রান্ত যোগার-যন্ত্র ও অন্যান্য আয়োজন নির্ধারণ করে পালাক্রমে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ চালিয়ে গভীর রোমাঞ্চ ও উত্তেজনায় দেখিতে পেলাম যে আমাদের কাঁচা হাতে শহীদদের রক্তদানের পবিত্র স্থানে মাথা উঁচু করা স্মৃতিস্তম্ভ দাঁড়িছে আছে। সেই দিনের উত্তেজনা আজও মনে আছে। শহীদ শফিউরের পিতাকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের নির্মিত প্রথম শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন সাহেব। পরপরই আমরা ফুল ও শ্রদ্ধার মালায় শহীদ মিনার ভরে তুললাম। সারা দিনই বিপুল ছাত্র-জনতা এভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করল। সেদিনই শেষ বিকালের দিকে সরকারের পক্ষ হতে শহীদ মিনারের উপর আক্রমণ চালানো হল। তছনছ করে দেওয়া হল স্মৃতি ও শ্রদ্ধার মিনার। পুলিশ অকস্মাৎ হামলা চালিয়ে আদি শহীদ মিনারটি সম্পূর্ণরূপে গুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিল এবং আমাদের মেডিকেল হোস্টেলে আক্রমণ করল। জীবনে প্রথমবারের মত পুলিশী নির্যাতনের শিকার হলাম। আহত অবস্থায় আমাদেরকে থানায় নিয়ে গিয়ে শাসিয়ে দেওয়া হল। বিপুল সংখ্যক ছাত্রকে আটক করে রাখার মত স্থান হয়ত থানা-পুলিশের ছিল না।

গণগ্রেফতার করে আন্দোলনকে আরও বেগবান করার পথে তারা অগ্রসর হল না। কয়েক ঘণ্টার আটকাবস্থা, জেরা ও খবরদারীর পর আমাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হল। হলে ফিরে এসে দেখলাম উদ্বিগ্ন বন্ধু-বান্ধব অপেক্ষমাণ। আমাদেরকে অতি দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হল। দীর্ঘ ষাট বছর পূর্বের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি আজও আমাকে রোমাঞ্চিত করে। আমাকে যখন প্রশাসনের পক্ষ হতে ভাষবসৈনিক স্মাননা দেওয়া হয়, তখন আমি বাস্তবিকই সেসব দিনে ফিরে যাই। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে,

মহান একুশে ফেব্রয়ারি (আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস) ২০১০ উদযাপন উপলক্ষ্যে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গঠিত ‘ভাষা সৈনিকদের তালিকা প্রণয়ন’ উপ-কমিটি কর্তৃক ১৭.০২.২০১০ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান- মোতাবেক কিশোরগঞ্জ প্রয়াত ও জীবিত ভাষা সৈনিকদের নামের তালিকা প্রণয়ন করে, যাতে: প্রয়াত (মৃত) ভাষা সৈনিকদের নামের তালিকা: ১. সৈয়দ নজরুল ইসলাম, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, আশরাফউদ্দিন আহমেদ, সাবেক এমপি, আবু তাহের খান পাঠান, সাবেক ছাত্রনেতা, কাজী আব্দুল বারী, ন্যাপ নেতা, আনিসুর রহমান, রাজনীতিবিদ, মো. মহিউদ্দিন, আমিনুল হক, সাবেক রাজনীতিক, কাজী ইসহাক, রাজনীতিবিদ, একেএম শামছুল হক, সাবেক এমপি, এ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন, ইনছাব উদ্দিন, সাংবাদিক, ডা. ফজলুল করিম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী, সৈয়দ বদরুদ্দিন হুসাইন, রেজিস্ট্রার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সৈয়দ কমরুদ্দিন হুসাইন প্রমুখ রয়েছেন। জীবিত ভাষা সৈনিকদের নামের তালিকা: মো. জিল্লুর রহমান, রাষ্ট্রপতি, ডা. মাজহারুল হক, মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক, সমাজসেবক ও সাবেক রাজনীতিবিদ, আ.ফ.ম. শামছুল হুদা, সাবেক অধ্যক্ষ, মিছির উদ্দিন আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত চাকুরিজীবী, মুহ. আবু সিদ্দীক, ন্যাপ নেতা। এ ধরনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।

বাংলাদেশের সকল অঞ্চল থেকে ভাষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের অবদান ও কার্যক্রম লিপিবদ্ধ ও রক্ষিত হলে ইতিহাসের পূর্ণাঙ্গতা বৃদ্ধি পাবে-এ কথা বলাই বাহুল্য। আমি এখনও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একুশের চেতনাকে প্রযুক্ত করতে হবে জাতির কল্যাণময় প্রতিটি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে। মুক্তি আর স্বাধীনতার পথ ধরে একুশের চেতনা উন্নয়ন ও আত্মশক্তির বিকাশের হাতিয়ারে পরিণত হয়ে আমাদেরকে একবিংশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত করবে এবং আবারও আমরা বিশ্বদরবারে বিজয়ী হব। এ মহতী লক্ষ্য সাধনের পথে চলমান নৈরাশ্য ও অবক্ষয়ের সংকূল পরিস্থিতিতে আমরা যদি আমাদের স্ব স্ব সৃজনী শক্তিকে বিকশিত ও প্রাণিত করতে পারি, তাহলে অশুভর বিরুদ্ধে শুভর–মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের–বিজয় কেতন উড্ডীণ করা সম্ভব হবে। সকল অশুভ-মিথ্যা-কুপমণ্ডুকতার বিরুদ্ধে সৃজনের আলোকিত আবাহনই রক্ত ও হিংসার পতন ঘটিয়ে আনতে পারবে শান্তি ও সুস্থতার পুনরুত্থান । আমরা সে সুদিনের অপেক্ষায় কান পেতে আছি। উন্মুখ হয়ে আছি সুবাসিত সুবাতাসের জন্যে।

১৯৫২ সালের একুশের প্রত্যাশাও ছিল তেমনই। ২০১১ সালের একুশে আমাদের প্রত্যশাও তাই।

লিখেছেনঃ ডা. মাজহারুল হক