শুধু ব্লগই নয়, মোতাসিম ও তার বন্ধুরা মিলে তৈরি করেছেন অনলাইন ‘রেডিও মেট্রো’। এ ক্ষেত্রে তাদের কোনো কারিগরি জ্ঞান না থাকলেও শুধু গুগলে তথ্য সার্চ করেই অনলাইন রেডিও তৈরি করেছেন তারা।
সৃষ্টিতে বন্ধুত্ব, সহযোগিতায় বন্ধুত্ব। বন্ধুদের ভালোবাসা, প্রেরণা আর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আজকের বিশ্বসেরা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল, মাইক্রোসফট, ইয়াহু, ফেসবুক, ইউটিউবসহ অনেক প্রতিষ্ঠানই। আমাদের দেশেও অনেক প্রাযুক্তিক উদ্যোগে আছে বন্ধুতার জয়গান।

তবে শুধু বন্ধুত্বের পাথেয়কে পুঁজি করে বড় কিছু করা সম্ভব তা প্রমাণ করেছেন মতিঝিল গভর্নমেন্ট হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোতাসিম রহমান, রাইফেলস পাবলিক কলেজের মেহেদী জামান সনেট, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সিয়াম সালেহীন, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের নাভিন ইকবাল ও আহনাফ বিন শামস, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের রইস উজ জামান শিশির, রাইফেলস পাবলিক কলেজের জান্নাত হোসাইন, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ওয়াসিক হোসেন স্বপন, রাইফেলস পাবলিক কলেজের রাফিন হাসান সায়েম, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের আদিব রাইয়ান ও ইউসুফ টুটুল, নটর ডেম কলেজের সাকলাইন রহমান নিলয়, প্রিতম এবং ন্যাশনাল আইডিয়াল কলেজের কাওসার।

তারা ইতিমধ্যে একটি ব্লগসাইট, একটি অনলাইন রেডিওসহ বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছেন। দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন মোতাসিম। মোতাসিম আর তার বন্ধুদের গড়া নগরবালক বল্গগে প্রতিদিনই বল্গগ লিখছে স্কুল-কলেজ পড়ূয়া শিক্ষার্থীরা। তারা একে অন্যের সঙ্গে শেয়ার করছে নিজেদের সুখ-দুঃখের কথা। স্কুল-কলেজ পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য নিজস্ব কোনো কমিউনিটির সুযোগ না থাকায় নিজের তাগিদে এ ধরনের বল্গগ তৈরির সিদ্ধান্ত নেন তারা।

মোতাসিম বলেন, ‘আমি চাইছিলাম নিজেদের মনের কথা খুলে বলার মতো একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করতে। এ ধারণা থেকেই নগরবালক তৈরি। প্রথমে তো বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়েছিলাম। যেহেতু নিজে সব কাজ করতে পারতাম না তাই বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সাহায্য নিয়েছি বড়দের। আসলে বন্ধুদের ছাড়া এ ব্লগ কখনোই তৈরি হতো না।’ নগরবালক ডেভেলপের সময় অতিরিক্ত খরচ বাঁচাতে ওপেন সোর্স জুমলা ব্যবহার করা হয়েছে। তাই ডোমেইন কেনা আর হোস্টিংয়ের টাকা ছাড়া তেমন কোনো খরচই হয়নি তাদের। ইতিমধ্যে তাদের গড়া এ নগরবালক বল্গগ নটর ডেম কলেজের বিজ্ঞান মেলা এবং একই কলেজের প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত আইসিটি মেলায় বিশেষ পুরস্কার অর্জন করেছে। বাংলায় তরুণ প্রজন্মের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং হিসেবে নগরবালক মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলেও এর লক্ষ্য অনেক দূর।

ওয়াসিফ হোসেন স্বপন জানান, ‘আমরা শুধু ইন্টারনেটে সীমাবদ্ধ থাকতে চাই না। আমরা মাঠপর্যায়েও কাজ করতে চাই। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ও বল্গগের পাশাপাশি আমরা অনলাইন স্টাডি পেজ নিয়ে কাজ করছি। যেখানে কি-না ছাত্র এবং শিক্ষকের সম্মেলন ঘটবে। নগরবালকের সাফল্যের ওপর নির্ভর করছে কবে নাগাদ আমরা এ স্টাডি পেজের কাজ শেষ করতে পারব। তবে শিগগির আমরা এ স্টাডি পেজের বেটা-১ [পরীক্ষামূলক সংস্করণ] প্রকাশ করতে যাচ্ছি।’

সম্প্রতি মোতাসিম তার বল্গগ নগরবালক নিয়ে ঘুরে এসেছেন প্রথমবারের মতো মিলসেট এবং ইউনেস্কোর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সায়ন্সেস এশিয়া এক্সপোতে। পেয়েছেন স্বীকৃতিও।শুধু ব্লগই নয়, মোতাসিম ও তার বন্ধুরা মিলে তৈরি করেছেন অনলাইন ‘রেডিও মেট্রো’ । এ ক্ষেত্রে তাদের কোনো কারিগরি জ্ঞান না থাকলেও শুধু গুগলে তথ্য সার্চ করেই অনলাইন রেডিও তৈরি করেছেন তারা। নিয়েছেন নানা জনের সহযোগিতা। আর রেডিওর কার্যক্রম নিয়মিত চালাতে এখন তাদের প্রয়োজন বাণিজ্যিক সহযোগিতা।

বর্তমানে তাদের রেডিওতে প্রতিদিন অনুষ্ঠান শুনছেন কয়েক হাজার শ্রোতা। এখানে অন্যরাও শেয়ার করার সুযোগ পাচ্ছেন নিজেদের সুখ-দুঃখের কথা। রেডিওতে গানের পাশাপাশি লাইভ প্রোগ্রাম করেন তারা। রেডিও মেট্র্রোতে বেশিরভাগ সময় গান বাজানো হলেও রাতের বেলা সরাসরি প্রোগ্রাম সম্প্রচার করা হয়। ‘যখন অনলাইনে সরাসরি সম্প্রচার করি, তখন আমাদের শ্রোতা অনেক বেড়ে যায়। তবে বেশিরভাগ সময় আগে থেকে রেকর্ড করা অনুষ্ঠান প্রচার করে থাকি’_ জানান রেডিও মেট্রোর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মেহেদী জামান সনেট।

স্কুল-কলেজ পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য নিজস্ব কোনো কমিউনিটির সুযোগ না থাকায় নিজের তাগিদে এ ধরনের ইন্টারনেট রেডিও তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান প্রিতম। শিশির বলেন, ‘আমরা শুধু ইন্টারনেটে সীমাবদ্ধ থাকতে চাই না। আমরা মাঠপর্যায়েও কাজ করতে চাই।’ স্কুলপড়ূয়া মোতাসিম, প্রিতম, শিশিরদের কণ্ঠ থেকে যেন ঝরতে থাকে বিন্দু থেকে সিন্ধু হওয়ার প্রত্যয়।