প্রতিবারের মতো এবারো দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত হবে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। আর এর প্রস্তুতি চূড়ান্ত বলে জানিয়েছে ঈদগাহ কমিটি। শোলাকিয়া মাঠে এবার হচ্ছে ১৮৫তম ঈদের জামাত। সকাল ১০টায় এ জামাতে ইমামতি করবেন মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। কয়েকদিন আগে থেকেই মাঠ পরিষ্কার, ধোয়া-মোছা ও রংয়ের প্রলেপ দেওয়াসহ আনুষঙ্গিক কাজ চলছিলো। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পৌরসভাসহ সরকারি বিভিন্ন বিভাগের তদারকিতে এ কাজ এখন প্রায় শেষ।

ঈদ জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মীর রেজাউল আলম। ঈদ জামাতে মুসল্লিদের অংশগ্রহণ নির্বিঘ্ন করতে ‘শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। শোলাকিয়ায় লাখো মানুষের সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়তে দূরদূরান্ত থেকেও আসেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

কিশোরগঞ্জের রেল স্টেশন মাস্টার অমৃত লাল সরকার জানান, একটি ট্রেন সকাল পৌনে ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে এবং অপর ট্রেনটি সকাল ৬টায় ভৈরব থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে। নামাজ শেষে ট্রেন দুটি দুপুর ১২টায় কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাবে। পুলিশ সুপার রেজাউল জানান, মাঠের নিরাপত্তায় ঢাকা ও সিলেট থেকে আসা বোমা সনাক্ত ও নিষ্ক্রিয়করণ দল শোলাকিয়া মাঠে বিশেষ অনুসন্ধান চালিয়েছে। এছাড়া তিন প্লাটুন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন থাকবে।

মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হযরত খান বাহাদুর কিশোরগঞ্জের জমিদারি প্রতিষ্ঠার পর ইংরেজি ১৮২৮ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় ৭ একর জমির ওপর এ ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। স্থানীয় গবেষকদের ভাষ্যমতে, ১৮২৮ সনে প্রথম অনুষ্ঠিত জামাতে সোয়া লাখ মুসুল্লি¬ অংশগ্রহণ করেন বলে মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখি মাঠ’। সেখান থেকে উচ্চারণের বিবর্তনে পরিণত হয়ে নাম ধারণ করেছে আজকের শোলাকিয়া।

বিশাল এই মাঠের মধ্যে মোট কাতার রয়েছে ২৬৫টি। প্রতি কাতারে ৫ শতাধিক মুসল্লি নামাজে অংশ নিয়ে থাকেন। সেই সঙ্গে মাঠের বাইরে আশে পাশের এলাকা জুড়ে জামাতে অংশ নেওয়া মুসুল্লি¬র সংখ্যা আড়াই থেকে তিন লাখ ছাড়িয়ে যায়। শোলাকিয়ায় দিনে দিনে মুসল্লি সংখ্যা বাড়লেও সে অনুপাতে বাড়েনি আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা।

বিশেষ করে অল্প বৃষ্টিতেই মাঠ কাদা-পানিতে একাকার হয়ে নামাজের অনুপযোগী হয়ে পড়ে, এর ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় মুসুল্লিদের। এছাড়া পর্যাপ্ত ওজুখানা ও টয়লেটের অভাবেও মুসল্লি¬রা ভোগান্তিতে পড়েন। সারা বছর জুড়ে মাঠে গরু ছাগল চরানো ও গোবর শুকানোর কারণেও নষ্ট হয় মাঠের পরিবেশ।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শেখ সেলিম কবির বলেন, মাঠের ঐতিহ্য ও সুনামের কারণে প্রতি বছরই মুসুল্লীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি সুযোগ সুবিধা। সুষ্ঠুভাবে নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে মাঠের আয়তন বৃদ্ধি, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করা, ওজু ও টয়লেট সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী এহতেশামুল হুদা মুনাব্বি বলেন, “এ মাঠে অনেক সমস্যা। প্রত্যেক বছর শোনা যায় মাঠের উন্নয়ন হবে। কিন্তু আদৌ কোনো কাজ হয় না। ফলে মুসল্লীরা ভাগান্তির মধ্যে পড়েন। এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান প্রয়োজন।” কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ কমিটির সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান মাঠের বিভিন্ন সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, “মাঠের সার্বিক উন্নয়নে পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে সার্ভে হয়ে গেছে। রিপোর্ট পেলেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

বিডিনিউজ