ব্রহ্মপুত্র নদী বা ব্রহ্মপুত্র নদ এশিয়া মহাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। সংস্কৃত ভাষায় ব্রহ্মপুত্রের অর্থ হচ্ছে “ব্রহ্মার পুত্র।

ব্রহ্মপুত্রের উৎপত্তি হিমালয় পর্বতমালার কৈলাস শৃঙ্গের নিকট জিমা ইয়ংজং হিমবাহে, যা তিব্বতের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। সাং পো নামে তিব্বতে পুর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে এটি অরুণাচল প্রদেশে ভারতে প্রবেশ করে যখন এর নাম হয়ে যায় সিয়ং। তারপর আসামের উপর দিয়ে দিহং নামে বয়ে যাবার সময় এতে দিবং এবং লোহিত নামে আরো দুটি বড় নদী যোগ দেয় এবং তখন সমতলে এসে চওড়া হয়ে এর নাম হয় ব্রহ্মপুত্র। তারপর এটি বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মেশে। উৎপত্তিস্থল থেকে এর দৈর্ঘ্য ২৯০০ কিলোমিটার। ব্রহ্মপুত্রের প্রধান শাখা হচ্ছে যমুনা।  

 

শ্রদ্ধেয় কেদারনাথ মজুমদার তাঁর “ময়মনসিংহের বিবরণ” (১৯০৪) গ্রন্হে ব্রহ্মপুত্রের জন্ম ইতিহাস আলোচনায় হিন্দু পুরাণের ব্রহ্মকুন্ডের কথা বলেছেন ।পরশুরাম মাতৃহত্যা পাপে কলুষিত হয়ে পরশু মোচনের জন্য ঐ ব্রহ্মকুন্ডে অবগাহন করলে হস্তস্হিত পরশু (কুঠার) স্হালিত হয় ।পরশুরাম লোহিত্য বারির কলুষনাশন গুনে আকৃষ্ট হয়ে নরলোকের হিতার্থে তাঁকে গিরিকুন্ড হতে ভূতলে আনয়ন করেন । ভূতলে অবর্তীণ হয়ে ব্রহ্মপুত্র তীর্থরাজ লৌহিত্য নদ রুপে পরিচিত হয় ।

ডঃ নীহাররঞ্জন রায় তাঁর অমর সৃষ্টি “বাঙলীর ইতিহাস” (আদিপর্ব) এ লিখেছেন-  গারো পাহাড়ের পশ্চিম দক্ষিণ মোড় ঘুরিয়াই লৌহিত্য ঐ পাহাড়ের পূর্ব-দক্ষিণ তলভূমি ঘেসিয়া দেওয়ানগঞ্জের পাশ দিয়া, শেরপুর-জামালপুরের ভিতর দিয়া মধুপুর গড়ের পাশ দিয়ে ময়মনসিংহ জেলাকে দ্বিধা বিভক্ত করিয়া বর্তমান ঢাকা জেলার পূর্বঞ্চলের ভেদ করিয়া সুর্বণ গ্রাম বা সোনারগাঁ’র দক্ষিণ-পশ্চিমে লাংগলবন্ধের পাশ দিয়ে ধলেশ্বরীতে প্রবাহিত হইত ।

এই খাত এখনও বর্তমান কিন্তু বর্ষাকাল ছাড়া অন্য সময়ে প্রায় মৃত বললেই চলে। এই খাতই প্রাচীন এবং ব্রহ্মপুত্রের যাহা কিছু তীর্থ মহিমা তাহা এই খাতেরই,এখনও জামালপুর-ময়মনসিংহ-লাংগলবন্ধের অষ্টমী স্নান পূর্ববাংলার (বাংলাদেশ) অন্যতম প্রধান ধর্মোৎসব । ফান ডেন ব্রোক, ইজাক টিরিয়ান, রেনেল ইত্যাদি সকলের নকসা আলোচনা করিয়া নিঃসন্দেহে এই সিদ্ধান্তে পৌছানো যায় যে, সপ্তদশ শতকে ফানডেন ব্রোকের আগেই ব্রহ্মপুত্র এই খাত পরিত্যাগ করিয়াছিল । কারণ এই নকসাগুলিতে দেখা যায়  ব্রহ্মপুত্র আর ধলেশ্বরীতে প্রবাহিত হইতেছে না, বর্তমান ঢাকা জেলার সীমায় পৌছাবার অব্যবহিত পূর্বে ময়মনসিংহের ভিতর দিয়ে আসিয়া পূর্ব-দক্ষিণতম কোণে ভৈরব বাজার বন্দরের নিকট উওরাগত ।

গাংগার অন্যতম মুখের নাম করিয়াছেন Mega = great বলিয়া। এই Mega – Megna (Megna-Great) নদী হইতে মেঘনাদ = মেঘনন্দ = মেঘনা নামের উৎপওি একেবারে ইতিহাস বিরুদ্ধে নাও হইতে পারে। তবে ইহা একান্তই অনুমান ।