‘মহাজোট প্রার্থী নির্বাচন করবে, আর এ দলের সমর্থক চিকিৎসকেরা ঘরে বসে থাকবে, তা তো হয় না।’ এমন বিশ্বাস থেকে পৌর নির্বাচনে ভিন্ন রকম প্রচারণায় নেমেছেন কিশোরগঞ্জের ভৈরবের স্বাধীনতা চিকিৎসা সমিতির সদস্যরা। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, নির্বাচনের দিন পর্যন্ত রোগী দেখার বিনিময়ে কোনো ফি (ভিজিট) নেবেন না তাঁরা। টাকা নেওয়ার বদলে ভোট চাইবেন। গত মঙ্গলবার সংগঠনের চিকিৎসকেরা জোটবদ্ধ হয়ে মহাজোটের মেয়র প্রার্থী ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সায়দুল্লাহ মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তাঁদের এ আগ্রহের কথা জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংগঠনটিতে বেসরকারি চিকিৎসকের পাশাপাশি কয়েকজন সরকারি চিকিৎসকও রয়েছেন। নির্বাচনী আচরণবিধির ৬ নম্বর ধারার ১৫-এর (খ) উপধারায় উল্লেখ আছে, ‘কোনো সরকারি কর্মকর্তা, কোনো নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ বা নির্বাচনী কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করিতে পারিবেন না।’
মো. সায়দুল্লাহ মিয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, স্বাধীনতা চিকিৎসা সমিতির সদস্যরা স্বেচ্ছায় দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তখনই সেবার মাধ্যমে ভোটারদের দোরগোড়ায় যেতে ভিজিট না নিয়ে ভোট চাওয়ার প্রসঙ্গটি আসে।

তবে অঙ্গীকার অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা পাওয়া নিয়ে রোগীদের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ভৈরব পৌর শহর চণ্ডীবের মধ্যপাড়ার মধ্যবয়সী মিনারা বেগম বলেন, ‘হাঁপানির রোগ লইয়া আইজ (শুক্রবার) সকালে আওয়ামী লীগের এক ডাক্তারের কাছে গেছিলাম। ভোট চাইল, ভিজিটও মাফপাইছিলাম।

কপাল খারাপ। ধরা খাইয়া গেলাম। কেমনে যে জাইন্না গেল পৌরসভায় আমার ভোট নাই। পুরা টেহাই রাখছে।’সংগঠনটির সহসাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সায়দুল্লাহ ভাই আমাদের দলের প্রার্থী। এই কারণে নীতিগতভাবেই দলীয় প্রার্থীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর পক্ষে কাজ করার অঙ্গীকার করে এসেছি।’ তবে ভিজিট না নিয়ে ভোট চাওয়ার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।

মহাজোটের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে চিকিৎসকদের এমন প্রচারণা মোটেও ভালোভাবে নেননি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র ফখরুল আলম। তিনি বলেন, ‘পুরো বিষয়টি দুঃখজনক, আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। এমনটা করায় তাঁদের প্রতি মানুষের আস্থা কমবে।’মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় শিক্ষকেরাও (বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের) প্রচারণায় নেমেছেন। পৌর শহরে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট চেয়ে ঘুরে ফিরছেন তাঁরা। গত বৃহস্পতিবার ভৈরব কেবি পাইলটউচ্চবিদ্যালয়ের একটি কক্ষে সর্বশেষ সভায় মিলিত হয়েছিলেন ২০০ শিক্ষক। সভায় মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার পুনঃ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তাঁরা। এ ব্যাপারে হাজী আসমত কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রশিদ মিঞা বলেন, ‘শিক্ষকেরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারলে কোনো প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে পারবেন না কেন?’

ভৈরবের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি লাভজনক পদে আছেন অর্থাৎ সরকারি অফিস করেন, এমন কোনো ব্যক্তি সরাসরি প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। তবে বেসরকারি কোনো চিকিৎসক যদি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন, তাহলে আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে না।’

-Prothom Alo