আমি তোমাদের এক আপনজন। তোমাদের বাড়ীর চারপাশেই আমার দেখা মেলে। শীতের শেষে বসন্তের আগমনে আমার ছোট ছোট সাদা ফুলের উচ্ছলতা সবার দৃষ্টি আকর্ষন করে থাকে।ঢাকা শহরেরও যদি চারদিকে একবার ভালো করে তাকাও,দেখতে পাবে আমার পুষ্প গুচ্ছের বিপুল শুভ্র উজ্জ্বলতা।আমার সাধারণ নাম ‘সাজনা’আর শুদ্ধ ভাষায় সজিনা। এর বৈজ্ঞানিক নাম Moringa oleifera . এর বহু রকম গুনের জন্য আমার অনেক সম্বলকৃত নাম আছে।যেমনঃ শোভাঞ্জন, সুপত্রক, উপদংশ, তীক্ষ্মগন্ধ, সুখামোদ, দংশমূল, শিগ্রু, রুচিরঞ্জক,মধুশিঘ্রক।

আর দেখো ইংরেজরা এতো বেরসিক যে তারা আমার নাম দিয়েছে-Horse radish ও Drumstick. কিন্তু ভেষজ পন্ডিতরা সেই পুরাকাল থেকে যেমন-চরক, শ্রুত, বাগভাঁটা, বঙ্গসেন, চক্রদত্ত সবাই আমার নানা রকমের গুনের উল্লেখ করেছেন।আমার মূল, ছাল, ফল, ফুল, বীজ সবার মধ্যেই আছে ঔষৌধি গুন।মূলের রস পক্ষাঘাত, অবিরাম জ্বর, শ্বাস কষ্ট রোগে বেশ উপকারী।ছাল গর্ভপাত কারক, ফল যকৃত ও প্লীহা সংক্রান্ত রোগ উপশক হয়। আমার বীজের তেল কষ্ঠ রোগে ব্যবহ্রত হয়ে থাকে। আমার প্রধান ঔষধি রাসায়নিক পদার্থ হচ্ছে–বিটা সিটোস্টেরোল,এক্যালয়েডস-মোরিনাজিন।আর ফুলে আছে জীবানুনাশক টিরিগোজপারমিন।

আমি তো আগেই বলেছি আমি তোমাদের খুব অন্তরঙ্গ ও অতি পরিচিত গাছ। এর অন্যতম কারণো হয়তো আমার আদি বাসভূমি তোমাদের দেশ ও তার চার পাশের অঞ্চল। সেজন্য আমি বাড়ীর ভিটে থেকে বনজঙ্গলে সবখানেই সহজেই জন্মে থাকি। আমার ডাঁটা তোমাদের এক উপাদেয় খাবার।বিশেষ করে ডালের সাথে।রুপসি বাংলার কবি বারবার আমার নির্জন গাছতলে ঘোরাঘুরি করে থাকেনঃ

“এখানে আকাশ নীল-নীলাভ আকাশ জুড়ে সজিনার ফুল
ফুটে থাকে হিম সাদা-রং তার আশ্বিনের আলোর মতন;
আকন্দ ফুলের কালো ভীমরুল এইখানে করে গুঞ্জরন
রোদ্রের দুপুর ভ’রে…।”

নওয়াজেশ আহমদ